ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসা হচ্ছে রোবোটিক ব্রোঙ্কোস্কোপিতে। —ফাইল চিত্র।
শ্বাসনালিতে দীর্ঘ সময় ধরেই টিউমার বাসা বাঁধছিল। বুঝতে পারেননি রোগী। শ্বাস নিতে কষ্ট, গলায় কফ জমে যাওয়া, শ্লেষ্মার সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসত মাঝেমাঝেই। প্রচণ্ড কাশিতে বুকে ব্যথা হয়ে যেত।
প্রথমে চিকিৎসক ভেবেছিলেন যক্ষ্মা, পরে ধরা পড়ে টিউমার। শ্বাসনালি থেকে টিউমার বার করতে গেলে বুকে অস্ত্রোপচার করতে হবে। তার জন্য বুকে কাটাছেঁড়া, সেলাই সবই দরকার। এতে রোগীর যন্ত্রণাও বাড়বে এবং সেই ক্ষত শুকোতেও সময় লাগবে। কিন্তু এখন এতটা জটিল পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয় না। রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপিতে ফুসফুসের ক্যানসার নিরাময়ের আশা দেখাচ্ছেন গবেষক-চিকিৎসকেরা।
প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার আগেই ফুসফুসের ক্যানসার কোষ চিহ্নিত করবে রোবোটিক প্রযুক্তি। ক্যানসার কোষ নির্মূলও করতে পারবে বলে দাবি। এই পদ্ধতিকে এখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি’।
কী এই রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি?
ব্রঙ্কোস্কোপি হল এমন একটা পদ্ধতি যেখানে একটি সরু ও ধাতব নল সোজা শ্বাস নেওয়ার পথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই নলকে বলে ব্রঙ্কোস্কোপ।
এই ব্রঙ্কোস্কোপ ঢুকিয়ে চিকিৎসক গলা, স্বরনালি, শ্বাসনালি পরীক্ষা করে থাকেন। শ্বাসনালিতে কোনও কিছু আটকে গেলে বা সংক্রমণ হলে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করেন চিকিৎসকেরা। আবার বায়োপসির জন্য কোষ বা মিউকাসের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়।
ব্রঙ্কোস্কোপির এই পদ্ধতিরই আধুনিক সংস্করণ হল রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি। এ ক্ষেত্রে বুকে এক্স রে, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসাউন্ড, এমআরআই ইত্যাদি পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়।
সহজ করে বললে, সমস্যা ঠিক কোথায় সেই জায়গাটা চিহ্নিত করা জন্যই এই পদ্ধতিগুলির প্রয়োগ করা হয়। রোবোটিক সার্জারির ক্ষেত্রে ঠিক কোথায় টিউমার কোষ তৈরি হচ্ছে তার ত্রিমাত্রিক চিত্র বার করার চেষ্টা করেন চিকৎসক। কতটা জায়গা জুড়ে ছড়াচ্ছে টিউমার, কত দ্রুত ক্যানসার কোষের বিভাজন হচ্ছে, এই সবই খুঁটিয়ে দেখতে পারবেন চিকিৎসক। তার পর শুরু হয় অস্ত্রোপচার।
কী ভাবে হয় অস্ত্রোপচার?
অস্ত্রোপচারের নাম শুনলেই ভয় পান রোগীরা। কিন্তু এখানে বলে রাখা ভাল, রোবোটিক পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার হলে বুকের চামড়া বা হাড় কাটার দরকার পড়ে না। ছোট ছোট গোটা পাঁচেক ছিদ্র করে রোবটের হাত (যা মাত্র ১ সেন্টিমিটার চওড়া) এবং ছোট ক্যামেরা ভিতরে ঢুকিয়ে দিলেই অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।
রোবট তার হাতের কব্জি ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরাতে পারে, যা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই শরীরের যে কোনও জায়গায় পৌঁছে গিয়ে জটিল অস্ত্রোপচার করা রোবটের পক্ষে অনেক সহজ। শরীরের অন্যান্য অংশের ক্ষতি না করে শুধুমাত্র আক্রান্ত স্থানেই নিখুঁত অস্ত্রোপচার সম্ভব একমাত্র রোবোটিক প্রযুক্তিতেই। আর এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার হলে রোগীর যন্ত্রণাও কম হবে এবং তাড়াতাড়ি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনেও ফিরতে পারবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy