কোভিডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকের মধ্যে ‘প্রোসোপ্যাগনোসিয়া’ বা ‘ফেস ব্লাইন্ডনেস’ দেখা দিচ্ছে। ছবি- সংগৃহীত
করোনা অতিমারির প্রথম তিনটি ঢেউতেই আক্রান্ত হয়েছিলেন স্বর্ণালী সিংহ। পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। অতিমারির সময়ে অনলাইনে পঠনপাঠন চললেও এখন তো রীতিমতো স্কুলে গিয়ে কাজ করতে হয়। এমনই এক দিন স্কুলে যাওয়ার বাসে উঠে টিকিট কাটার সময় কিছুতেই মনে করতে পারছিলেন না, জায়গাটির নাম। অথচ নয় নয় করে এই স্কুলে চাকরি করছেন প্রায় ১০-১২বছর। রোজ একই ভাবে বাসে উঠে জায়গার নাম বলে টিকিট কাটেন, কিন্তু এমন ঘটনা আগে কখনও হয়নি। আবার তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত দীপা দাশগুপ্তর বিষয়টা আবার একটু অন্য রকম। এক ঘণ্টা আগের তাঁর মায়ের সঙ্গে কোন বিষয়ে কথা বলেছেন, তা কিছুতেই মনে করতে পারছেন না। এমনকি এক আত্মীয়ের নাম বলার পরও মনে পড়ছে না তাঁর মুখটা কেমন।
কোভিড সেরে গেলেও কারও কারও ক্ষেত্রে এমন অদ্ভুত সব স্নায়ু সংক্রান্ত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসা পরিষেবায় যাকে বলা হয় ‘লং কোভিড’। লং কোভিডে আক্রান্ত হলে যে শুধু শ্বাসকষ্ট, চট করে ঠান্ডা লাগা, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যার মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা কিন্তু নয়। এর দোসর হিসেবে দেখা দিচ্ছে ‘প্রোসোপ্যাগনেশিয়া’র মতো সমস্যাও।
চিকিৎসা সংক্রান্ত জার্নাল ‘কোর্টেক্স’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অন্তত এমনই দাবি করছে। সেখানে বলা হয়েছে, লং কোভিডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকের মধ্যে ‘প্রোসোপ্যাগনোসিয়া’ বা ‘ফেস ব্লাইন্ডনেস’ দেখা দিচ্ছে। অর্থাৎ এই রোগীরা পূর্বপরিচিত মানুষজনকেও মুখ দেখে চিনতে পারছেন না। কোভিড পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি উপসর্গ থেকে যাওয়াতেই এমন সমস্যা বলে দাবি করছেন গবেষকরা। শুধু মুখ দেখে মানুষ চেনাই নয়, চেনা রাস্তা ভুলে যাওয়া বা ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজতে গিয়েও অনেকে সমস্যায় পড়ছেন বলে জানা যাচ্ছে।
এই গবেষণায় অ্যানি নামের এক মহিলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২৮ বছর বয়সি অ্যানি ২০২০-র মার্চে করোনায় আক্রান্ত হন। তার আগে কখনও মুখ দেখে মানুষ চেনার সমস্যা ছিল না তাঁর। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হওয়ার দু’মাস পর থেকে পরিচিত লোকজন তো বটেই, নিজের পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধবদেরও চিনতে পারছিলেন না অ্যানি। গবেষণায় বলা হয়েছে, নিজের বাবাকেই চিনতে পারেননি অ্যানি। পাশ কাটিয়ে চলেও যান এক বার। বর্তমানে গলা শুনে মানুষকে নতুন করে চেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন অ্যানি। শুধু তাই নয়, পাড়ার দোকানে যাওয়ার রাস্তা, এমনকি নিজের গাড়ি কোথায় থাকে, তা-ও নাকি মনে করতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর।
এ নিয়ে আমেরিকার ডার্টমাউথ কলেজের গবেষকরা আরও একটি সমীক্ষা চালান। সেখানে লং কোভিডে আক্রান্ত এমন ৫৪ জন মানুষকে সেই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বলা হয়। দেখা যায়, তাঁদের মধ্যে সিংহভাগই একই সমস্যায় আক্রান্ত। শুধু তাই নয়, মস্তিষ্কের স্নায়ুর পাশাপাশি চোখের স্নায়ুর সমস্যাও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy