দু’টি মিলের মাঝে খুচরো খিদে মেটাতে যেমন স্ন্যাক্স খেতে বেশ লাগে, তেমনই ‘এক্সারসাইজ় স্ন্যাকিং’ ব্যাপারটিও বেশ উপাদেয়। মুচমুচে, সুস্বাদু স্ন্যাক্সের মতোই হালকা, ফুরফুরে একটি ব্যাপার। স্ন্যাক্স মানেই মুখরোচক খাবারের কথাই মনে পড়ে, তাই বলে ব্যায়ামেরও ‘স্ন্যাকিং’ হয় নাকি! ব্যায়াম মানেই বেশ ভারী, গুরুগম্ভীর একটা ব্যাপার। জোরে হাঁটতে হবে, দৌড়তে হবে, না হলে জিমে গিয়ে ভারী যন্ত্রপাতি তুলতে হবে, হাজারো ঝক্কি। সবচেয়ে বড় কথা, অনেকটা সময় দিতে হবে। যাঁরা এই সময়টা ব্যয় করতে চান না, অথবা বেশি পরিশ্রমে অরাজি, তাঁদের জন্য ‘এক্সারসাইজ় স্ন্যাকিং’ আদর্শ বলা যেতে পারেন।
‘এক্সারসাইজ় স্ন্যাকিং’ কী?
একটানা ভারী ব্যায়াম নয়। ফ্রি হ্যান্ডের মতোই ছোট ছোট কিছু ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং, যা সারা দিনে যে কোনও সময় করতে পারেন। ভোরে উঠেই জিমে গিয়ে কার্ডিয়ো করা বা ট্রেডমিলে গলদঘর্ম হয়ে ছুটতে হবে না। আবার সন্ধ্যায় ফিরে বিশ্রামের সময়টা জলাঞ্জলি দিয়ে বিশাল উদ্যোগ আয়োজন করে ম্যাট পেতে বসে টানা যোগাসনও করতে হবে না। স্ন্যাকিং মানে দিনের যে কোনও সময় সুবিধামতো ব্যায়াম করে নিলেই হল। বেশি কাঠখড় পোড়ানোর প্রয়োজন নেই। সে সকালে, দুপুরে, বিকেলে, অফিসে কাজের ফাঁকে, সন্তানকে পড়ানোর মাঝে অথবা টিভি দেখা বা মোবাইল স্ক্রল করার মাঝেও করতে পারেন। সবটাই সুবিধামতো।
এখন মনে হতেই পারে, সুবিধামতো ব্যায়াম মানে কী? কী ধরনের ব্যায়াম? এই বিষয়ে যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য বুঝিয়ে বললেন, ধরুন সকালে উঠে একটু লাফিয়ে নিলেন, স্পট জগিং করে অফিস চলে গেলেন। অফিসে কাজ করতে করতে এক বার চেয়ার ছেড়ে উঠলেন, আবার বসলেন। এমন বার কয়েক করলেন। চেয়ারে বসেই ঘাড় বাঁ দিক থেকে ডান দিকে আবার ডান দিক থেকে বাঁ দিকে ঘোরালেন। এই ভাবেই দুই হাত উপরে-নীচে বা চক্রাকারে ঘুরিয়ে নিলেন, ব্যায়াম তাতেও হবে। বাড়ি ফেরার সময় লিফ্টের মায়া ত্যাগ করে সিঁড়ি ভেঙেই উঠলেন। খানিকটা স্কিপিং করে নিলেন বা কিছু ক্ষণ সাইক্লিং করে নিলেন, এ সবই কিন্তু ‘এক্সারসাইজ় স্ন্যাকিং’। আসলে নানা রকম ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ় ও স্ট্রেচিং, যেগুলি ফিটনেস প্রশিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই করা যায়, সেগুলিরই গালভরা নাম ‘স্ন্যাকিং’।
এক্সারসাইজ স্ন্যাকিং সারা দিনে যদি বার কয়েকও করেন, তা হলে কার্ডিয়ো করার মতোই উপকার হয় বলেই জানালেন প্রশিক্ষক।
আরও পড়ুন:
কী কী ‘স্ন্যাকিং’ করতে পারেন?
বাটারফ্লাই ফিট
মেঝেতে বসে দুটো পায়ের পাতা সামনাসামনি জুড়ে রাখুন। এ বার হাঁটু অল্প ওঠানামা করতে হবে। এই ভাবে ২০টি করে ৩ সেট করতে পারেন।
কাফ মাস্লের ব্যায়াম
দেওয়াল ধরে দাঁড়িয়ে পায়ের পাতার সামনের অংশের উপর ভর দিয়ে উঁচু হতে হবে। এই অবস্থায় ১০ গুনে আবার পা নামিয়ে নিতে হবে। এটা ১০ বার করলেই চলবে, কাফ মাসলের জন্য খুব ভাল ব্যায়াম।
সাইড বেন্ড
দু’হাতে দু’টি জলভর্তি বোতল নিন। পা দু’টি সামান্য ফাঁক করে হাত দু’টিকে মাথার উপরে তুলে, শরীরটাকে এক বার বাঁ দিকে আর এক বার ডান দিকে বাঁকান।
শোল্ডার প্রেস
বাড়িতে ডাম্বেল থাকলে ভাল, অথবা জলভর্তি বোতলকে দু’হাতে ধরে কাঁধের পাশ থেকে মাথার উপর তুলুন। উপরে ওঠার সময় দুটো হাত ইংরেজি ‘এ’ অক্ষরের মতো একসঙ্গে গিয়ে মিলবে। এক পায়ে ৬ বার করে অন্য পায়ে ৬ বার করুন। এতে কাঁধের ডেলটয়েড পেশি শক্তিশালী হবে।
স্কোয়াট
চেয়ারে বসার মতো করে হাঁটু ভাঁজ করে কোমর ও পিঠ সোজা রেখে দাঁড়ানোকেই স্কোয়াট বলে। এই সময় হাত দুটো সামনের দিকে টানটান করে ছড়িয়ে দিতে হয়। প্রতি ৪৫ মিনিট কাজের পরে ১০টি করে স্কোয়াট করলে উপকার হবে। এতে পা ও কোমরের পেশির জোর বাড়বে, শরীরে রক্ত চলাচল ভাল হবে।
এক পায়ে ব্রিজ
মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে দু’হাঁটু ৯০ ডিগ্রি মুড়ে রাখুন। এ বার কোমর মাটি থেকে তুলে একটা পা শূন্যে তুলে ধরুন। অন্য পায়ের জোরে কোমর ধরে থাকুন। এই পদ্ধতিতে দু’পায়ে ১০ সেকেন্ড করে বার ছ’য়েক করুন এই ব্যায়াম। এতে হাঁটুর জোর বাড়বে।
ওয়াল পুশআপ
এই ধরনের পুশআপ দিয়ে ওয়াল ওয়ার্কআউট শুরু করতে পারেন। দেওয়াল থেকে দেড় হাত মতো দূরত্বে পা রাখুন। এ বার দেওয়ালের উপরে ঝুঁকে পড়ে ভর দিন দু’হাতের উপরে। এর পর শুয়ে যেমন পুশআপস করেন, সে ভাবেই দাঁড়িয়ে হাতে চাপ দিয়ে পুরো শরীর এক বার দেওয়ালের কাছে নিয়ে যাবেন, আবার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনবেন।