কোন কোন লক্ষণ বলে দেবে, হার্ট ভাল নেই? ছবি: ফ্রিপিক।
তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ইদানীং বাড়ছে হৃদ্রোগ। খুব কম বয়সেও করাতে হচ্ছে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি। হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছে আচমকা, কিছু বুঝে ওঠার আগেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে এমন ঘটনা বিস্তর ঘটেছে। নাচতে গিয়ে, জিমে শরীরচর্চার সময়ে, এমনকি বসে থাকার সময়েও আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এর একটা মূল কারণ বংশগত, তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ অবশ্যই জীবনযাপনের পদ্ধতি। স্থূলত্ব, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, বাইরের তেল-মশলা দেওয়া খাবার খাওয়ার অভ্যাস, দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ করা— এই সব কিছুই হার্টকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
হার্টের চিকিৎসক দিলীপ কুমার জানাচ্ছেন, হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ প্রকাশ পায় অনেক আগে থেকেই। এমনও দেখা গিয়েছে, মাসখানেক আগে থেকেই কিছু কিছু উপসর্গ ফুটে উঠেছে। কিন্তু, সচেতন না থাকার কারণে তা-ই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায় এক সময়ে।
কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে?
১) হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি হতে শুরু করবে। এই বিষয়ে মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, অনেকেই বুঝতে পারেন না, স্থূলত্ব বা ওবেসিটি কিন্তু বিপদ বাড়িয়ে তোলে। ওজন অস্বাভাবিক বাড়তে শুরু করা, সেই সঙ্গে হজমের গোলমাল, ঘন ঘন অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা জানান দেয়, হার্টের অবস্থাও খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
২) শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা যদি ঘন ঘন হতে থাকে, তা হলে সাবধান হতে হবে। অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত হার্টে কম পৌঁছলে তখন শ্বাসের সমস্যা বেশি হয়। আবার ধমনীতে কোনও ব্লকেজ হলেও এমন হতে পারে। হাঁপানি বা সিওপিডি না থাকা সত্ত্বেও যদি শ্বাসকষ্ট মাঝেমধ্যেই হয়, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে।
৩) মাইগ্রেন বা মাথাব্যথার সমস্যা যদি আচমকা হানা দেয়, তা হলেও এক বার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভাল। চিকিৎসক অরুণাংশু জানাচ্ছেন, অনেক হার্টের রোগীই বলেছেন তাঁদের লাগাতার এক মাস ধরে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তার পরে বুকে, কাঁধে ও হাতে ব্যথা শুরু হয়। মনে হত, বুকে যেন পাথর চেপে বসে আছে। রাতে শোয়ার সময়েও চিনচিনে ব্যথা করত। এগুলিও হৃদ্রোগের পূর্বলক্ষণ হতে পারে।
৪) ঠান্ডা ঘরে বসেও যদি দরদর করে ঘাম হয়, তা হলে তা রক্তচাপের সমস্যার লক্ষণ তো বটেই, হার্টের রোগও বাসা বাঁধছে কি না তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। চিকিৎসকের কথায়, রাতে শুয়ে যদি দেখেন, সারা শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে, মাঝেমধ্যে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, তা হলে দেরি করবেন না। হার্টের রোগ হলে ঘুমের সমস্যাও দেখা দেয়। রাতে শুলেই অস্বস্তি হবে, এমনকি অনিদ্রাও দেখা দিতে পারে।
৫) হঠাৎ করেই হাত-পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর্থ্রাইটিস বা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা নেই, কিন্তু তা-ও দেখছেন হাত-পা ফুলে যাচ্ছে। আসলে কোষে কোষে অতিরিক্ত ফ্লুইড বা তরল জমা হওয়ার কারণে এমন হতে পারে, যা হৃদ্রোগের অন্যতম বড় লক্ষণ।
৬) মাথা ঘোরা, বমি ভাব, আচমকা অজ্ঞান হয়ে গেলে তা স্বাভাবিক বলে এড়িয়ে যাবেন না। অনেকেই ভাবেন, অম্বলের সমস্যার জন্য এমন হচ্ছে। কিন্তু, তা না-ও হতে পারে। হার্টে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছলে তখন তার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কেও। ঘন ঘন ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হতে পারে রোগীর।
৭) ঠান্ডা না লাগলেও শুকনো কাশি সারবে না। কাশির সঙ্গে মিউকাস উঠে আসবে। সামান্য পরিশ্রম করলেই হাঁপিয়ে পড়বেন এবং কাশি শুরু হবে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে সাবধান হতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy