যখন ঘুম নেই আঁখিপাতে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাতে একদৃষ্টে ঘুরন্ত পাখার দিকে তাকিয়ে যতই ঘুম আনার চেষ্টা করুন না কেন, ঘুমের কোনও পাত্তাই পাওয়া যায় না। আর ঘুম না এলেই হাতের কাছে রাখা মুঠোফোনের দিকে না চাইতেও চোখ চলে যায়। শেষমেশ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের দুনিয়ায় হারিয়ে গিয়ে ঘড়ির কাঁটা ভোরের দিকে এগিয়ে চলে।
অনেককেই বলেন, বিছানায় শুয়েও ঘুম আসতে চায় না। শরীর বেজায় ক্লান্ত থাকলেও ঘুম আসে না। মাথায় সর্ব ক্ষণ অফিসের কাজ, সংসারের চাপ, আর্থিক টানাপড়েনের চিন্তা ঘুরপাক খায়। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা রাজকুমার রাওয়ের স্ত্রী পত্রলেখা পাল বলেন, কাজের নেশায় নাকি রাজকুমার টানা ৪৮ ঘণ্টাও জেগে থাকেন। এই অভ্যাস তাঁর শরীরের ক্ষতি করছে জেনেও কাজপাগল অভিনেতা কোনও রকম আপস করতে নারাজ।
চিকিৎসকেরা বলেন, শরীরেরও একটা ঘড়ি আছে। সে-ও কাঁটায় কাঁটায় চলতে চায়। খিদে পাওয়ার যেমন সময় আছে, ঘুমেরও তেমন সময় রয়েছে। আর সেই সময়ে যদি ঘুম না আসে, তা হলে সেটিও কিন্তু একটি রোগ। এই রোগের নাম অনিদ্রা। ইদানীং অল্পবয়সিদের মধ্যে জাঁকিয়ে বসছে এই রোগ। কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে? উত্তরে যোগ প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য বললেন, ‘‘যাঁদের অনিদ্রার সমস্যা শুরু হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে যোগনিদ্রা খুব কার্যকর। নিয়মিত সঠিক পদ্ধতিতে এটি অভ্যাস করলে প্রাথমিক পর্যায়ে অনিদ্রার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যোগনিদ্রা সচেতন অবস্থা ও গভীর নিদ্রার মধ্যবর্তী একটি পর্যায়। কেবল অনিদ্রার সমস্যা দূর করতেই নয়, অবসাদ কাটাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে, স্মৃতিশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও যোগনিদ্রা অত্যন্ত উপযোগী।’’
কী ভাবে করবেন যোগনিদ্রা?
১) যোগনিদ্রা করতে হবে শবাসনে। এমন একটি ঘর বেছে নিতে হবে, যেখানে অন্য কেউ চট করে ঢুকে আপনাকে বিরক্ত করবে না। ঘরে কোনও রকম আওয়াজ হলে চলবে না।
২) যে কোনও আসনের পর, জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করার পরেও যোগনিদ্রা করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। তবে যাঁদের অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে, তাঁরা রাতে খাওয়াদাওয়ার ঘণ্টা দুয়েক পরে যোগনিদ্রা অভ্যাস করতে পারেন। ভরা পেটে এই ব্যায়াম করা যাবে না।
৩) শবাসনে থাকা অবস্থায় দুটো পায়ের মাঝখানে, হাত ও শরীরের মাঝখানে ছ’ইঞ্চির ব্যবধান থাকবে। মনকে একেবারে শান্ত করতে হবে। হাতের পাতা ছাদের দিকে উন্মুক্ত থাকবে। এই অবস্থায় মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গকে শিথিল করতে হবে। শরীরের সব পেশিকে বিশ্রাম দিতে হবে।
৪) মাথা, ঘাড়, চোখ, হাত, পা, এক এক করে প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে মনঃসংযোগ করতে তাদের শান্ত করতে হবে। তার পর প্রক্রিয়াটি আবার পা থেকে শুরু করতে হবে। গোটা প্রক্রিয়ায় চোখ বন্ধ রাখতে হবে। প্রথম দিকে যোগ প্রশিক্ষকের নির্দেশ মেনে অভ্যাস করা যেতে পারে। রপ্ত হয়ে গেলে নিজে থেকেই যোগনিদ্রা করা যাবে।
৫) গোটা প্রক্রিয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস চলবে স্বাভাবিক নিয়মে। সামগ্রিক ভাবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট।
প্রতি দিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই অভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারেন। অনুপ বলেন, ‘‘আপাত ভাবে তুচ্ছ মনে হলেও এই ধরনের অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী ভাবে অনিদ্রা দূর করতে উপকারী। রাতে খাওয়াদাওয়া সারার দু’ঘণ্টা পর প্রথমে বজ্রাসন করুন মিনিট পাঁচেক। তার পর বাড়িতে সকলে ঘুমিয়ে পড়লে বিছানায় শুয়ে যোগনিদ্রার অভ্যাস করতে পারেন। মিনিট ২০ করতে পারলেই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন আপনি।’’
যোগনিদ্রা ছাড়াও অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে হলে মেনে চলুন ৫ কৌশল।
১) অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে হলে ক্যাফিনের পরিমাণ কমাতে হবে। সন্ধ্যার পর চা-কফি পান না করাই ভাল।
২) পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে বদল আনতে হবে খাদ্যাভ্যাসে। রাতে খুব বেশি তেল-মশলাদার খাবার খাওয়া চলবে না। রোজকার ডায়েটে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হজমের সমস্যার কারণেও ঘুম আসতে সময় লাগে। প্রোবায়োটিক হজমে সাহায্য করে, ফলে অনিদ্রার সমস্যাও দূর হয়।
৩) মানসিক চাপ ও অনিদ্রার সম্পর্ক বেশ নিবিড়। যদি মানসিক চাপের সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
৪) প্রতি দিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটি নির্দিষ্ট অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। বই পড়তে পারেন, লিখতে পারেন রোজনামচা। আপাত ভাবে তুচ্ছ মনে হলেও এই ধরনের অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী ভাবে অনিদ্রা দূর করতেও উপকারী।
৫) ঘুমোতে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই বন্ধ করতে হবে বৈদ্যুতিন সামগ্রীর ব্যবহার। শুতে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ল্যাপটপ, টেলিভিশন বা ফোনের পর্দায় চোখ রাখা চলবে না একেবারেই।
অনিদ্রার সমস্যা বাড়াবাড়ির পর্যায় পৌঁছলে কিন্তু চিকিৎসকের সাহায্য নিতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy