কোন ভুলে মৃত্যু বাড়ছে ডেঙ্গিতে? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শহর কলকাতাতেও কেবল বয়স্ক কিংবা শিশুরাই নন, মাঝবয়সিরাও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। আঁচ পড়েছে টলিপাড়াতেও। মঙ্গলবার গভীর রাতে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায়ের বোন বছর চল্লিশের পিয়াসি চট্টোপাধ্যায়। এই ঘটনায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে টলিপাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কপালেও।
তবে দিন দিন ডেঙ্গিতে মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে জ্বরই কিন্তু একমাত্র লক্ষণ নয়, যা দেখে সতর্ক হতে হবে। জ্বর সেরে গিয়েছে মানেই যে ডেঙ্গি রোগী সুস্থ হয়ে গিয়েছেন, এমনটা ধরে নিয়েই বিপদের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছেন সাধারণ মানুষ। জ্বর সেরে গেলেও ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা ডেঙ্গি রোগীকে বিশেষ নজরে রাখা ভীষণ জরুরি। এ সময়ে কিছু লক্ষণ অবহেলা করলেই বাড়তে পারে বিপদের আশঙ্কা।’’
কেবল মাত্র প্লেটলেট কমে যাওয়ার কারণেই কি ডেঙ্গি রোগীর মৃত্যু হয়?
১) ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে শরীরে জলের ঘাটতি শুরু হয়। শরীরের কোষগুলিতে জল কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন অঙ্গে কাজ ব্যহত হয়। রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি বাড়াবাড়ি পর্যায় পৌঁছলে ফুসফুস, হৃদ্যন্ত্র, লিভারের মতো একাধিক অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর’-এর কারণেই ডেঙ্গি রোগে মৃত্যু হয় রোগীর।
২) ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম ক’দিন যেমন ডেঙ্গি ভাইরাস রক্তনালি ও কোষগুলি থেকে জল টেনে বার করে আনে, তেমনই কয়েক দিন পর আবার সেই জল কোষে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। তাই ডেঙ্গি রোগীকে স্যালাইন বা ফ্লুইড কখন বেশি দিতে হবে, কখন আবার স্যালাইনের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে, সে দিকে খেয়াল রাখা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় এমন হয়, যখন রোগীর কোষে জল ফেরত চলে যাওয়ার পরেও বাইরে থেকে শরীরে আরও ফ্লুইড দেওয়া হয়। শরীরে জল বেশি হয়ে গেলে আবার রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হৃদ্যন্ত্রের উপর চাপ তৈরি হয়ে হার্ট ফেল হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়।
৩) যাঁদের এক বার ডেঙ্গি হয়ে গিয়েছে, তাঁদের দ্বিতীয় বার বা তৃতীয় বার ডেঙ্গি হলে তা মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে। হেমারেজিক ডেঙ্গি এ ক্ষেত্রে বেশি চিন্তার। ‘হেমারেজিক’-এর অর্থ রক্তপাত। রোগীর শরীরের বিভিন্ন ধমনী এবং শিরা ফেটে গিয়ে হুহু করে রক্ত এবং প্লাজমা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। বাইরে থেকে রক্ত দিলেও অনবরত রক্তক্ষরণে রোগীর অবস্থা ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে। শেষমেশ রোগীর মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকদের মতে, অনেকের ক্ষেত্রে জ্বর কমলেও সঙ্কটজনক অবস্থার লক্ষণগুলি প্রথমেই বুঝতে পারেন না কেউ কেউ। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেরি হওয়ায় অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে বিপদ ঘটছে। তাই ডেঙ্গির উপসর্গ দেখা মাত্রই সময় অপচয় না করে চিকিৎসকের পরমর্শ নিন। জ্বর হলেই সাবধান হোন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy