Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Chronic Liver Disease

লিভারের বিরল রোগ চুপিসারে ক্ষতি করে কিডনিরও, অস্ত্রোপচার ছাড়াই সারিয়ে তোলার কোন কোন পদ্ধতি আছে?

লিভারের রোগগুলির মধ্যে এটি বড়ই বিরল। এই রোগ আবার জানান দিয়ে আসে না। তলে তলে বাসা বাঁধে এবং বছরের পর বছর উপসর্গহীন ভাবেও থেকে যেতে পারে।

This asymptomatic disease can damage liver for years

লিভারের জটিলতম রোগ যা ক্ষতি করে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও। প্রতীকী ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১০:০২
Share: Save:

শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মধ্যে একটি হল লিভার, যা একবার খারাপ হতে শুরু করলে তাকে মেরামত করা খুব কঠিন। আর লিভারের বেশির ভাগ রোগ সহজে সারতেই চায় না। বরং দীর্ঘ দিন ধরে কুরে কুরে লিভারকে নিঃশেষ করতে থাকে। শেষে গিয়ে প্রতিস্থাপন ছাড়া আর কোনও গতি থাকে না। লিভারের রোগগুলির মধ্যে এটি বড়ই বিরল। এই রোগ আবার জানান দিয়ে আসে না। তলে তলে বাসা বাঁধে এবং বছরের পর বছর উপসর্গহীন ভাবেও থেকে যেতে পারে। এই রোগ কেবল লিভারের নয়, শরীরের অন্য অঙ্গগুলিরও ক্ষতি করে। বিশেষ করে কিডনির ক্রনিক অসুখের কারণও হয়ে উঠতে পারে।

ফ্যাটি লিভারের কয়েক কাঠি ঊর্ধ্বে

লিভারের পরতে পরতে চর্বি জমলে এই রোগ হয়, যার নাম ‘মেটাবলিক ডিজ়ফাংশন-অ্যাসোসিয়েটেড স্ট্যাটোটিক লিভার ডিজিজ়’ বা এমএএসএলডি। লিভারে যদি ১০ শতাংশের বেশি মেদ জমে যায়, তখন তা ধীরে ধীরে স্ট্যাটোটিক রোগের দিকে বাঁক নেয়। এই রোগ ফ্যাটি লিভারেরই একটি ধরন, তবে তার চেয়েও মারাত্মক। এই বিষয়ে কলকাতার একটি হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “লিভারের ক্ষতি হলে তা সারা শরীরে প্রভাব ফেলে। এমনও দেখা গিয়েছে, ক্রনিক লিভারের রোগ থেকে কিডনি ফেলিয়োরও হয়েছে। এই ধরনের ফ্যাটি লিভারের অসুখ থেকে লিভার সিরোসিসও হতে পারে।”

ফ্যাটি লিভার দু’রকম। অ্যালকোহলিক ও নন অ্যালকোহলিক। মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান থেকে লিভারে চর্বি জমলে তা অ্যালকোহলিক ফ্যাট। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি মূলত খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত, তেল, ফ্যাট জাতীয় উপাদান বেড়ে গেলে হয়। এমএএসএলডি নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের রোগ। মদ্যপানের কারণে নয়, হজমপ্রক্রিয়ার দীর্ঘস্থায়ী গোলমালের কারণে হয়।

চিকিৎসক জানাচ্ছেন, লিভারে অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট জমতে শুরু করলে এই অঙ্গটি তার নিজস্ব কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। শরীরে জমা দূষিত পদার্থ বা ‘টক্সিন’ থেকে লিভার নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে না। রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে সেই দূষিত পদার্থ অন্ত্রে পৌঁছে যায়। প্রাথমিক ভাবে সেখান থেকেই প্রদাহ শুরু হয়। আর এর আক্রমণ এতই নিঃশব্দে ও ধীরে ধীরে হয় যে, ধরা পড়ার আগেই শরীরের ভিতরে তা অনেকটাই ক্ষতি করে ফেলে। এই ধরনের ফ্যাটি লিভার থেকে সিরোসিস, হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

কিডনির ক্ষতি হয় কতটা?

লিভারের রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে। তখন অন্য অঙ্গগুলিও ভুগতে শুরু করে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কিডনির। এই বিষয়ে নেফ্রোলজিস্ট অনিন্দ্য মৈত্র বলছেন, “ক্রনিক লিভারের রোগ হলে তার থেকে অ্যাকিউট কিডনি ফেলিয়োর হতে পারে। তলপেটে ব্যথা, যন্ত্রণা, প্রদাহ শুরু হবে, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে লিভার যদি একেবারেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা হলে আগে লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। তার পরে কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা যাবে। লিভারের রোগ যদি মারাত্মক আকার নেয়, তা হলে তার থেকে ‘হেপাটোরেনাল সিনড্রোম’ নামে কিডনির রোগ হয়, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। রোগীর অবস্থা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে তখন লিভার বা কিডনি কোনও কিছুই আর প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে না।”

রোগ শনাক্ত করার উপায় কী?

লিভারে কোনও সমস্যা হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ করতে ‘লিভার ফাংশন টেস্ট’ (এলএফটি) করতে হয়। তা ছাড়া সিটি স্ক্যান, লিভার আলট্রাসাউন্ড, এমআরআই স্ক্যান করে লিভারের অবস্থা বোঝা যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে লিভার বায়োপসি করেও দেখা হয়।

এমএএসএলডি ধরা পড়লে কী করণীয়? রোগ সারবে কী উপায়ে?

লিভার সুস্থ রাখতে জীবনযাপনে সংযমই আসল দাওয়াই। যদি এমএএসএলডির মতো জটিল রোগ ধরা পড়ে তা হলেও শরীরচর্চা ও সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব। কী ভাবে জেনে নিন।

১) সবচেয়ে আগে জরুরি সুষম ডায়েট। কার্বোহাইড্রেট ও চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। বাইরের খাবার, ভাজাভুজি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, নরম পানীয়, অ্যালকোহল পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে। তা হলেই লিভারে প্রদাহ কমবে, ক্ষত সারতে শুরু করবে ধীরে ধীরে।

২) লিভারের ক্ষত সারাতে মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট খুবই কার্যকরী হতে পারে। মূলত ডাল ও দানাশস্য জাতীয় খাবার খেতে বলা হয়। বাদ দিতে বলা হয় যে কোনও রকম রেড মিট। সব রান্নাই অলিভ তেলে করা হয়। বিভিন্ন রকম মরসুমি ফল, সবুজ সব্জি বেশি করে খেতে হবে এই ডায়েটে। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের মধ্যে রাখতে হবে সয়াবিন, ছোলা, মসুর ডাল, লেবু, টোফু, বিভিন্ন রকম বাদাম, কিনোয়ার মতো দানাশস্য।

৩) সপ্তাহে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা হলেও কার্ডিয়ো, ওয়েট ট্রেনিং করতে হবে। সেই সঙ্গে নিয়ম করে হাঁটা, সাঁতার কাটা এই ব্যায়ামও ভাল। প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে যোগাসন করলে লিভারের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। হজম প্রক্রিয়াও ভাল হবে।

৪) বেরিয়াট্রিক সার্জারিতেও অনেক সময়ে লিভারের রোগ সারানো যায়। এই ধরনের অস্ত্রোপচারে পাকস্থলীকে গুটিয়ে ছোট করে দেওয়া হয়, অথবা পাকস্থলীর আকার প্রায় ২০ শতাংশ কমিয়ে তার সঙ্গে অন্ত্রকে জুড়ে (বাইপাস) দেওয়া হয় এমন ভাবে যে কম পরিমাণ খাবারই শরীরে ঢুকবে। স্থূলত্ব, ক্রনিক লিভারের অসুখ, কিডনির রোগ, ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় এই পদ্ধতিতে।

পুষ্পিতার পরামর্শ, ওজন কমানোর ডায়েট আর ফ্যাটি লিভার সারানোর ডায়েট সম্পূর্ণ আলাদা। মদ্যপান থেকে লিভারের রোগ হোক বা না হোক, যকৃতে প্রয়োজনের বেশি চর্বি জমলে এই অভ্যাসটি একেবারে ত্যাগ করতে হবে। সেই সঙ্গে চিনি বা কৃত্রিম চিনি, দুই-ই খাওয়া কমাতে হবে। শরীরচর্চার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy