দেরিতে মা হবেন ভাবছেন, কী করা উচিত । ছবি: সংগৃহীত।
চাকরি, পেশা সামলে এখন সংসার গোছাতে দেরি করছেন অনেক মেয়েই। হয় সঙ্গী বেছে বিয়ে করতে দেরি হচ্ছে, অথবা চাকরি, পারিবারিক দায়দায়িত্ব সামলে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করতে বেশ অনেকটা সময় লাগছে। এমনও দেখা গিয়েছে, বয়স বেড়েছে, সন্তান আসেনি। ফলে হতাশা, একাকিত্ব বেড়েছে। যদি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করতে অনেক দেরি হয়ে যায়, বা দেরিতে মা হবেন বলে ভাবেন, তা হলে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সে নিয়ে পরামর্শ দিলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুদীপ বসু ও মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়।
সন্তান নেওয়ার আদর্শ বয়স কত?
২২ থেকে ৩০ বছর হল মা হওয়ার আদর্শ সময়। কোনও মেয়ের ‘ফার্টিলিটি’ বা উর্বরতা এই বয়সেই সবচেয়ে ভাল থাকে। ৩০ পেরিয়ে গেলেই জরায়ুর ধারণক্ষমতা ও উর্বরতা দুই-ই কমতে থাকে।
বেশি বয়সে মা হতে চাইলে কী কী জটিলতা দেখা দিতে পারে?
মেয়েদের জরায়ুতে যে ডিম তৈরি হয়, তা প্রতি মাসেই খরচ হয়ে যায়। বয়স যত বাড়বে ততই এই ডিমগুলির গুণ নষ্ট হতে থাকবে। চাইলেন আর মা হয়ে গেলেন, ব্যাপারটা কিন্তু অত সহজ নয়। কারণ বয়স যত বাড়বে, ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণমানও কমতে থাকবে। ৩৫-এর পর মা হওয়ার সম্ভাবনা দ্রুত কমে যেতে থাকে। চল্লিশে যদিও গর্ভধারণ করেন, তা হলেও হরমোনের গোলমালের জন্য গর্ভপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। আবার ডিম্বাণুর গুণমান ভাল না হলে সন্তান বিকলাঙ্গ হতে পারে। বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে মায়ের স্বাস্থ্যও। চল্লিশ পার হলেই সেটা ‘হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি’।
জরায়ুর বয়স বাড়ে খুব তাড়াতাড়ি। একে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘ওভারিয়ান এজিং’। বাইরে থেকে বোঝা যায় না। শরীরের বয়স যে হারে বাড়ে, তার থেকে অনেক দ্রুত হারে বাড়ে জরায়ুর বয়স। তা ছাড়া, এখনকার আবহাওয়ার পরিস্থিতি, দূষণ, খাবারে ভেজাল, স্থূলত্ব ও জীবনযাপনে অসংযমের কারণে জরায়ুর কর্মক্ষমতা অনেক তাড়াতাড়ি কমে যাচ্ছে। তাই সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা দ্রুত করাই ভাল।
চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় পরামর্শ দিচ্ছেন, ৩০ বছরের আগেই সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করা উচিত। কারণ ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়স অবধি মহিলাদের মেনোপজের সময়। সেটা ৪০ বা তার আগেও হতে পারে অথবা ৫০-এও হতে পারে। ঋতুস্রাব হচ্ছে মানেই ডিম্বাণুর গুণগত মান ঠিক আছে তা একেবারেই নয়। সাধারণত সন্তান পরিকল্পনা শুরু করার এক বছর অবধি চেষ্টা করে যেতে হয়। তার পরেও না হলে তখন পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে সমস্যাটা কোথায়। সমস্যা চিহ্নিত হলে তার পর ওষুধ ও জরুরি চিকিৎসা। এর পরেও সন্তান না এলে তখন ল্যাপারোস্কোপি ও অন্যান্য থেরাপি করা দরকার। এর পর আইইউআই ও শেষে আইভিএফ। যদি দেখা যায় তিন বারেও আইভিএফ সফল হয়নি, তখন জানিয়ে দেওয়া হয় যে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
৪০-এ মা হতে চাইছেন, তা হলে কী করা উচিত?
১) স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, সবচেয়ে আগে দু’রকম টেস্ট করিয়ে নেওয়া খুব দরকার। ক) আলট্রাসাউন্ড- এই পরীক্ষা করালে বোঝা যাবে জরায়ু ঠিক কেমন পর্যায়ে রয়েছে এবং ডিম্বাণুর গুণগত মান কেমন। খ) এএমএইচ টেস্ট- এই পরীক্ষা করালে বোঝা যাবে জরায়ুতে কতগুলি ডিম আর অবশিষ্ট আছে, মা হওয়া সম্ভব কি না।
২) ‘প্রি-কনসেপশনাল কাউন্সেলিং’ খুব জরুরি। ভারতে এমন ধারণা আগে কম ছিল, এখন বাড়ছে। সন্তান দেরিতে নেওয়ার পরিকল্পনা করলেও আগে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি। সে ক্ষেত্রে আগে আলট্রাসাউন্ড ও এএমআইচ পরীক্ষা করিয়ে দেখে নেওয়া হয় স্বাভাবিক ভাবে মা হওয়া সম্ভব কি না। তা ছাড়া, আরও দেখা হয়, সন্তান ধারণে ও প্রসবের সময়ে কোনও জটিলতা আসতে পারে কি না। হাইপারটেনশন, ডায়াবিটিস, থাইরেয়ড আছে কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয়। হার্টের রোগ থাকলেও মা হওয়া যায়। তখন আগে থেকেই শরীরকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়, যাতে গর্ভস্থ শিশু ও মা দু’জনের শরীরই সুস্থ থাকতে পারে।
৩) থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার। মা ও বাবা দু’জনেই যদি বাহক হন, তা হলে ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুরও থ্যালাসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
৪) রুবেলা টেস্ট করানো খুবই জরুরি। চিকিৎসক বলে দেবেন কখন রুবেলার টিকা নিতে হবে। রুবেলার টিকা নেওয়া থাকলে গর্ভাবস্থায় সংক্রমণের ভয় কম থাকবে। তা না হলে, গর্ভাবস্থায় যদি কোনও রকম সংক্রম হয়, তা হলে শিশু সুস্থ ও স্বাভাবিক হবে না।
৫) এখন এন্ডোমেট্রিওসিস, পলিসিস্টিক ওভারির মতো সমস্যা ঘরে ঘরে। তাই মা হওয়ার কথা ভাবলে আগে থেকে এ সবের চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া ভাল।
৬) বয়স ৩৯ পার করে গেলেই সেই মহিলার রক্তের এনআইপিটি টেস্ট করে নেওয়া হয়। তাতেই ৯৯ শতাংশ বলে দেওয়া যায় শিশুর ডাউন সিন্ড্রোম হতে পারে কি না।
৭) যদি শুরু থেকেই ভাবেন যে সন্তান অনেক বেশি বয়সে নেবেন, তা হলে অনেক আগে থেকে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। একে বলা হয় ‘উসাইট প্রিজ়ারভেশন বা এগ ফ্রিজিং’। আগে থেকে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখলে ভবিষ্যতে মা হওয়ার কোনও সমস্যা থাকে না। চিকিৎসক বলছেন, ধরুন, ৩০ বা ৩২ বছর বয়সে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করলেন, তা হলে ৩৮ বা ৩৯ বছরে গিয়ে মা হওয়া ততটা জটিল হবে না। তা ছাড়া, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্বামীর স্পার্ম কাউন্ট কম বা শুক্রাণুর গণগত মান ভাল নয়, তখন ডিম্বাণু সংরক্ষণের কথা ভাবা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy