শরীরের নিজস্ব একটা গন্ধ থাকে। যা সুগন্ধি না মাখলেও শরীরে থাকে। সেই গন্ধের খানিকটা নির্ভর করে আপনার রোজের ব্যবহারের ক্রিম, সাবান, শ্যাম্পু— ইত্যাদি শরীরের সার্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জিনিসপত্রের উপর। বাকি অনেকখানিই ঠিক করে দেয় বিশেষ একটি হরমোন।
নাম ‘কর্টিসল’। যার আরও একটি পরিচয় হল ‘স্ট্রেস হরমোন’। অর্থাৎ, মস্তিষ্ক চাপে থাকলে এই হরমোন নিসৃত হয় শরীরে। পুষ্টিবিদ মনপ্রীত কালরা বলছেন, ‘‘শরীরে কর্টিসলের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে আমাদের শরীরে ঘাম বেশি হতে থাকে, যা থেকে শরীরে ব্যাক্টেরিয়া এবং দুর্গন্ধ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই সমস্যা দূর করতে হলে শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়, সার্বিক জীবনযাপনেও বদল আনতে হবে।
কর্টিসল আর কী করে?
শরীরে কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কারণ, ওই হরমোন শরীরের বিপাকের হার থেকে শুরু করে রক্তে শর্করার মাত্রা, এমনকি, অতিরিক্ত চাপের মুখে শরীর কেমন প্রতিক্রিয়া দেবে, সেই সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। তাই শরীরে যদি অতিরিক্ত চাপের জন্য কর্টিসলের মাত্রা বেশি থাকে, তবে তা শারীরিক সুস্থতার মাপকাঠিগুলির ভারসম্য নষ্ট করতে পারে। যার ফলে শারীরিক দুর্গন্ধের পাশাপাশি, ওজন বৃদ্ধি, হজমের সমস্যাও হতে পারে।
কী ভাবে কর্টিসল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন?
কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস বদলে আর কিছু ভাল অভ্যাস নিজের রুটিনে জুড়ে জীবনযাপনে বদল আনতে পারেন। যা পরোক্ষে আপনার কর্টিসল ক্ষরণের মাত্রাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ মনপ্রীত।
১। সকালে ১৫ মিনিট রোদ্দুর মাখুন শরীরে, পরামর্শ পুষ্টিবিদের। তিনি বলছেন, ‘‘সকালের রোদ আমাদের দেহঘড়িকে ছন্দে রাখে, যা পরোক্ষে আমাদের কর্টিসল ক্ষরণকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’’ এ ছাড়া সকালের রোদ শরীরের সেরোটোনিনের মাত্রাকেও বাড়িয়ে দিতে পারে। সেরোটোনিন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
২। স্বাস্থ্যকর স্নেহপদার্থ খেয়ে দিন শুরু করুন। ভেজানো কাঠবাদাম, আখরোট হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর স্নেহপদার্থ শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে।
৩। সকালে শারীরিক কসরত করা জরুরি। অন্তত মিনিট ২০ যদি কোনও যোগাসন বা ব্যায়াম করা যায়, তবে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। তাতেও মানসিক চাপ কম থাকে। কর্টিসল নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪। যে কোনও খাবার খাওয়ার আগে ১-২ মিনিট গভীর ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। এ ভাবে শরীরে মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়া কম হয়। হজমশক্তিও ভাল থাকে।
৫। ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত খাবার বেশি খান। কারণ, ম্যাগনেশিয়াম শরীরে উত্তেজনা কমিয়ে মনমেজাজ হালকা করতে সাহায্য করে। কলা, কুমড়োর বীজ, কাঠবাদামে ম্যাগনেশিয়াম আছে।
৬। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম একান্ত প্রয়োজন। শরীরে কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের একটি অত্যন্ত উপযোগী পদ্ধতি হল ঘুম। কম ঘুম হলে শরীরে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়।
৭। কফি এবং চিনি জাতীয় খাবার কাজ করার ক্ষমতা এক লহমায় বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু একই সঙ্গে ক্যাফিন এবং চিনি— উভয়েই কর্টিসল ক্ষরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত ক্যাফিন বা চিনি জাতীয় খাবার খেলে তা কর্টিসলের ভারসম্য নষ্ট করতে পারে।
৮। জল বেশি খাওয়া জরুরি। অনেক সময় শরীরে আর্দ্রতার মাত্রা কমে গেলে তা থেকেও ঘামের দুর্গন্ধ হতে পারে।