২০২১ সালে তিনি লিভার ফাইব্রোসিস রোগে আক্রান্ত হন। ছবি: ফেসবুক।
রবিবার রাত ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ ফেসবুকে একটি ছবি অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছেন তিনি। অক্সিজেন চলছে। হঠাৎ কী হল লেখিকার? ছবিটি শেয়ার হওয়া মাত্রই অনুরাগীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
গত ৬ জানুয়ারি তসলিমা তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে তোলা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। তার সঙ্গে তসলিমা লিখেছিলেন, ‘‘৮০ কিলো থেকে চেষ্টা চরিত্তির করে ৮ মাসে হয়েছিলাম ৫২ কিলো। ৫২র হাড় সর্বস্ব শরীর দেখে ভয়ে পিছু হটতে শুরু করলাম। ২ মাসে তড়িঘড়ি ওজন বাড়িয়ে করলাম ৫৬.৫ কিলো। এখানেই থেমে থাকুক চাইছি।’’ তবে কি কম সময়ে অনেকটা ওজন ঝরানোর কারণেই অসুস্থ হয়ে পরেছেন লেখিকা? এমন প্রশ্নও এসেছে অনেকের মনে।
আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তসলিমা জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালে তিনি লিভার ফাইব্রোসিস রোগে আক্রান্ত হন। বহু চিকিৎসককে দেখিয়েছিলেন সে সময়ে। সকলেই বলেছিলেন, এই রোগের কোনও ওষুধ নেই। তবে অনেকটা ওজন কমিয়ে ফেললে, সুস্থ থাকা সম্ভব। নয়তো ধীরে ধীরে লিভার যদি কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তা হলে মৃত্যু অবধারিত। তাই বেঁচে থাকার তাগিদেই তার ওজন ঝরানোর যত্রা শুরু হয়। রোগা হতে শরীরচর্চা থেকে ডায়েট, সবই করেছিলেন লেখিকা।
হঠাৎ ওজন কমে গেলে কী কী শারীরিক সমস্যা হতে পারে?
দ্রুত ওজন ঝরানোর জন্য কেউ খান সাপ্লিমেন্ট, কেউ আবার শুরু করেন কড়া ডায়েট। পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়াই শুরু হয় খিদে কমানোর নানা টোটকা! পুষ্টিবিদ ও যাপন সহায়ক অনন্যা ভৌমিকের মতে, ‘‘দ্রুত ওজন ঝরাতে এখন অনেকেই ভরসা করেন ব্যারিয়েট্রিক সার্জারির উপর। এ ক্ষেত্রে কিন্তু পরবর্তী কালে হজমশক্তির উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। অনেকে আবার ওজন ঝরানোর জন্য কম ক্যালোরিযুক্ত ‘মিল রিপ্লেসমেন্ট’ খান। এগুলি সব অকৃত্রিম উপাদান। দীর্ঘ দিন এগুলি খেতে থাকলে খিদের ইচ্ছে কমে যায়, শরীরে খাবার শোষিত হওয়ার প্রক্রিয়াটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা শুরু হয়। মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়া, অবসাদ গ্রাস করা, হৃদ্স্পন্দনের হার বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও তৈরি হয় এই ধরনের ‘মিল রিপ্লেসমেন্ট’ দীর্ঘ দিন ধরে খেলে। অনেকেই আবার সমাজমাধ্যমে নানা ভিডিয়ো দেখে ডায়েট শুরু করেন। সব ডায়েট যে সকলের শরীরে এক রকম ফল দেবে, এমনটা কিন্তু নয়। অনেকেই মনে করেন, কম খেলেই দ্রুত ওজন ঝরবে। এ ধারণাও ঠিক নয়। পুষ্টিবিদরা আপনার শারীরিক দিক বিবেচনা করে তবেই কিন্তু খাদ্যতালিকা তৈরি করেন। তাঁরা যেই তালিকা তৈরি করে দেন, তাতে থাকে সঠিক ভারসাম্য। আর আমরা নিজে নিজে নেট ঘেঁটে যে ডায়েট শুরু করি, তার ফলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি শুরু হয়। মিনারেল ও ভিটামিনের মারাত্মক অভাব তৈরি হয়। এর ফলে চুল পড়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ঋতুচক্রে অনিয়ম, হজমশক্তি কমে যাওয়া, ত্বকের জেল্লা হারিয়ে যাওয়া, উদ্বেগ তৈরি হওয়ার মতো একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।’’
মাসে কতখানি ওজন কমানো স্বাস্থ্যসম্মত? বেশি ওজন ঝরালে কী কী সমস্যা হতে পারে? চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘প্রতি সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম মতো ওজন ঝরানো হল ‘হেলদি ওয়েট লস’! এর বেশি হয়ে গেলেই নানা শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হতে পারি আমরা। দ্রুত অনেকখানি ওজন কমলে রক্তাল্পতা, ক্লান্তি, মাড়ি থেকে রক্তপাত, মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়। এ ছাড়া, পেশির ভর কমে যেতে পারে, যাকে আমরা বলি সারকোপেনিয়া। দীর্ঘ দিন নানা রকম ক্র্যাশ ডায়েট করলে শরীরের সব অঙ্গের উপরেই এর প্রভাব পড়তে পারে। হার্ট থেকে কিডনি, লিভার থেকে পাকস্থল, সবই বিকল হয়ে যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy