একান্তে থাকার সময়ে কি খুব বেশি নিঃসঙ্গ বোধ করেন? এমন কি মনে হয়, কেউ সঙ্গে থাকলে, কথা বললে ভাল লাগত? কিছু না হোক, কাছাকাছি কারও একটা উপস্থিতিই যথেষ্ট— এমনও মনে হয় কি? গবেষণা বলছে, একা থাকলে খারাপ থাকবেন কি না, তা নিয়ন্ত্রণের চাবি রয়েছে নিজেদেরই হাতে।
অনেকেই সারা ক্ষণের কাজ, ব্যস্ততা সামলে, নানা মানুষের সঙ্গে দরকারি-অদরকারি কথাবার্তা বলার পরে যখন একটু একা থাকার সুযোগ পান, তখন হাঁপ ছাড়েন। ভাবেন, যাক একটু হালকা হওয়া যাবে। নিজের মতো খানিক ক্ষণ সময় কাটানো যাবে। তাঁরাও কিন্তু একা থাকছেন অথচ নিঃসঙ্গতা তাঁদের খারাপ লাগছে না। গবেষণা বলছে, একা থাকাকে এক জন মানুষ কী ভাবে দেখছেন, কী ভাবে সেই সময়ের বর্ণনা করছেন, তার উপরে নির্ভর করছে তাঁদের ভাল থাকা।

সব সময়ে একা থাকা মানেই খারাপ থাকা নয়। ছবি: সংগৃহীত।
ঠিক কী কী বলছে গবেষণা?
‘কগনিশন অ্যান্ড ইমোশন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ওই গবেষণাপত্রটি। গবেষণাটি করেছেন ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক মিকেলা রডরিগেজ় এবং স্কট ক্যাম্পবেল। গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে, অন্তত ৫০০ জন প্রাপ্তবয়স্ককে প্রশ্ন করে এবং তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নজর রেখে ওই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন গবেষকেরা।
রডরিগেজ় লিখেছেন, ওই ৫০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ১৭৬ জন ছিলেন গ্র্যাজুয়েশন স্তরের পড়ুয়া। বাকিরা নানা বয়সের। কেউ কর্মরত। কেউ বা বাড়িতে থেকে সংসার সামলান। এঁদের প্রত্যেককে আধ ঘণ্টা নির্জনে সময় কাটাতে দেওয়া হয়। তার পরে সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে বলা হয়। জবাবের ভিত্তিতে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে যে ফল হাতে এসেছে, তা ‘চমকপ্রদ’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন গবেষকেরা।

‘বিচ্ছিন্ন বোধ করা’ নিঃসঙ্গতার সব থেকে নেতিবাচক উদাহরণ। ছবি: সংগৃহীত।
ফলাফলে কী দেখা গেল?
একা থাকার অনুভূতি বিচার করার জন্য ওই ৫০০ জনকে পাঁচটি বিকল্প দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি হল— ‘মি টাইম’ বা নিজের সঙ্গে সময় কাটানো, ‘টাইম অ্যালোন’ অর্থাৎ নিজের জন্য সময় ব্যয়, ‘সলিটিউড’ অর্থাৎ নির্জনতা, ‘বিইং অ্যালোন’ অর্থাৎ একা থাকা, ‘আইসোলেশন’ বা বিচ্ছিন্ন বোধ করা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক জবাব হিসাবে মনোনীত হয়েছে ‘নিজের সঙ্গে সময় কাটানো’। আর সবচেয়ে নেতিবাচক জবাব হিসাবে গণ্য হয়েছে ‘বিচ্ছিন্ন বোধ করা’।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, নির্জনে আধ ঘণ্টা থাকার পরে যাঁরা বলেছেন, বেশ খানিক ক্ষণ নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে পারলেন, দেখা গিয়েছে তাঁরা ভাল আছেন, নিশ্চিন্তও রয়েছেন। অন্য দিকে, যাঁরা বলেছেন, বিচ্ছিন্ন বোধ করছিলেন, তাঁদের কিছুটা হলেও খারাপ লাগার অনুভূতি তৈরি হয়েছে। একা সময় কাটানোর পরে যাঁরা বলছেন, ‘নিজের জন্য সময়’ পেলেন বা যাঁরা ‘নির্জনতা’-র মতো বিকল্পকে বেছে নিয়েছেন, তাঁদেরও মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষ অবনতি হয়নি। অন্য দিকে, যাঁরা বলেছেন ‘একা থাকলেন’ তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সামান্য হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

নিজের সঙ্গে সময় কাটানো কিন্তু একান্ত জরুরি। ছবি: সংগৃহীত।
নিঃসঙ্গতার বোধ বদলাবেন কী ভাবে?
গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে, শব্দের ক্ষমতা অনেক বেশি। তা ভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গিকেও বদলে দিতে পারে। একই সঙ্গে বদলে দিতে পারে মানসিক স্বাস্থ্যকেও। গবেষকেরা বলছেন, শুধু একা থাকার ব্যাখ্যাই বদলে নিলে কাজ হতে পারে। উদাহরণ হিসাবে তাঁরা বলছেন, ‘‘ধরুন যাঁরা বলেছেন একা থাকাকালীন বিচ্ছিন্ন বোধ করেছেন, তাঁরাই যদি ‘নিজের সঙ্গে সময় কাটালাম’ বলে ভাবেন তবে অনেকরকম ইতিবাচক বিষ ঘটতে পারে।’’ যেমন—
১। মন ভাল থাকতে পারে। ভাবনায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
২। নির্জনে সময় কাটানো তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না-ও হতে পারে।
৩। নির্জনে সময় কাটানোর পরিস্থিতি হলে, সেই সময়কে তিনি নানা ভাবে কাজে লাগানোর কথা ভাবতে পারেন।
৪। নিজের সুস্থতা এবং আত্মোন্নতির ব্যাপারে মনঃসংযোগ করতে পারেন।