কাজে মন না বসা স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার লক্ষণ হতে পারে! আবার যাঁরা চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, তাঁদের মধ্যেও গোপনে বাসা বেঁধে থাকতে পারে স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া!
স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া কী?
স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া। সাধারণ ভাবে ওই রোগের নাম করলে প্রথমেই মনে আসে, রোগীর মস্তিষ্ক বিভ্রমের সমস্যা হচ্ছে। অথবা তিনি কল্পলোকে বাস করেন। কিন্তু গবেষণা বলছে, অমনোযোগ, সিদ্ধান্তহীনতার মতো খুব সাধারণ কিছু সমস্যাও স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার লক্ষণ হতে পারে। তবে আশার বিষয় এই যে, স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার ওই সব লক্ষণ অল্প বয়সেই চিহ্নিত করে সতর্ক হওয়া সম্ভব। অনেকখানি স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব রোগীকেও। অন্তত তেমনই বলছে ‘আমেরিকান জার্নাল অফ সাইকায়াট্রি’তে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র।
কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মনঃসংযোগের সমস্যা প্রাত্যহিক জীবনকে কতখানি প্রভাবিত করতে পারে, তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। বিশেষ করে যাঁরা কর্মরত এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ করেন, মনঃসংযোগে অসুবিধা হলে তাঁরা পেশাজনিত সমস্যায় পড়তে পারেন। কাজের ক্ষেত্রে তো বটেই, ব্যক্তিগত জীবনেও প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমস্যা। সেই সব সমস্যার মূল কারণ যদি আগে থেকে চিহ্নিত করা যায়, তবে তার সমাধানের চেষ্টাও করা যাবে দ্রুত।

—ফাইল চিত্র।
গবেষণার তত্ত্ব
গবেষণাটি করেছেন সুইৎজ়ারল্যান্ডের জ়ুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘৮০ শতাংশ স্কিৎজ়োফ্রেনিক রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, তাঁদের বোধশক্তির প্রয়োগে সমস্যা হচ্ছে।’’ বোধশক্তির প্রয়োগ বলতে বোঝায় স্মরণশক্তি, মনঃসংযোগ, যুক্তি, ভাবপ্রকাশের ভাষার প্রয়োগ এবং কোনও বিষয়ে ধারণা করার ক্ষমতা। যার সাহায্যে আমরা যে কোনও উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করি। যার অভাবে নিজেকে লক্ষ্যহীন, অগোছালো মনে হতে পারে। জ়ুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, ‘‘এই সব কিছুর জন্য মস্তিষ্কের যে অংশটি সবচেয়ে বেশি কাজ করে, তাকে বলা হয় সেরিব্রাল কর্টেক্স। দেখা গিয়েছে ৮০ শতাংশ স্কিৎজ়োফ্রেনিকদের সেরিব্রাল কর্টেক্সে একই ধরনের। তাদের মস্তিষ্কের ওই অংশে খুব বেশি ভাঁজ পড়েনি।’’
কী ভাবে কাজে লাগবে?
মস্তিষ্কে ভাঁজ পড়া বা ‘ব্রেন ফোল্ডিং’ হয় মস্তিষ্কের বাইরের আবরণে। সেই বাইরের আবরণই পরিচিত ‘সেরিব্রাল কর্টেক্স’ নামে। সেরিব্রাল কর্টেক্সে যত বেশি ভাঁজ, তত বেশি মেধা এবং বোধশক্তি। আর সেই ভাঁজ পড়ার কাজ মূলত হয় অল্প বয়স থেকে বয়ঃসন্ধির মধ্যেই। গবেষকেরা বলছেন স্কিৎজ়োফ্রেনিক রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে সেরিব্রাল কর্টেক্সের বিকাশ সে ভাবে হয়নি। ৪৫০০ জন স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার রোগীর ব্রেন স্ক্যানের রিপোর্ট পরীক্ষা করে ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তাঁরা।

—ফাইল চিত্র।
উপসংহার
অল্প বয়সে মনঃসংযোগের সমস্যা হলে তা ‘হতেই পারে’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। সিদ্ধান্তহীনতার সমস্যাকেও পরে ঠিক হয়ে যাবে ভেবে নিশ্চিন্ত থাকেন অনেকে। গবেষণালব্ধ তত্ত্বে বোঝা যাচ্ছে, ওই সমস্ত সমস্যা স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার উপসর্গ হলেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এড়িয়ে না গিয়ে সমস্যায় নজর রাখলে এবং শোধরানোর চেষ্টা করেও সফল না হলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া যেতে পারে। যদি তেমন হয়, তবে রোগের শুরুতেই তা আটকানো সম্ভব হবে।