আর কয়েক দিন পরেই দোল। রং খেলার প্ল্যান প্রায় তৈরি। রংবেরঙের আবির, পিচকারি, মুখোশের পসরা সাজিয়ে বসতে শুরু করেছে দোকান। রং ছাড়া রঙের উৎসবের উদ্যাপন অসম্পূর্ণ। কিন্তু এই কৃত্রিম রং থেকে নানা সমস্যাও হতে পারে, বিশেষত বাচ্চাদের। তাই উৎসবে মেতে ওঠার আগে ঠিকমতো সতর্ক থাকাও জরুরি।
- অ্যালার্জি থাকলে: সাধারণ রং বা আবিরে বিভিন্ন কেমিক্যালস থাকে, যা থেকে হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। ডাস্ট অ্যালার্জি, কোল্ড অ্যালার্জির ধাত থাকলে আবির বা রং থেকে দূরে থাকুন। রং থেকে আচমকা অ্যালার্জিও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ অ্যালার্জির ওষুধ খেতে পারেন। তবে আধ ঘণ্টার মধ্যে কষ্ট না কমলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বাচ্চাদের এ ধরনের অ্যালার্জি হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। নিজে থেকে কোনও ওষুধ দেবেন না।
- ত্বকের সমস্যায়: রং থেকে জ্বালা, চুলকানি, র্যাশ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রং খেলার আগে ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে নিতে পারেন। লাগাতে পারেন নারকেল তেল। বেশি কড়া রং যা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা না লাগানোই ভাল। রং তোলার জন্য মুখে বারবার সাবান, স্ক্রাবার ঘষবেন না, এতে ত্বকের ক্ষতি হয়। ধীরে ধীরে দু’-তিন দিনে রং উঠে যাবে। ত্বকের সমস্যা থাকলে বা স্পর্শকাতর ত্বক হলে হার্বাল রং দিয়ে দোল খেলতে পারেন।
- আবহাওয়া বদলে: ফাল্গুনের শেষে এ সময়ে কিন্তু শীত পুরোপুরি যায় না, এ দিকে চড়া রোদ উঠে গরম লাগে। আবহাওয়া বদলের এ সময়ে এমনিও শরীর খারাপের আশঙ্কা থাকে। তার মধ্যে রং খেলে দীর্ঘক্ষণ ভিজে গায়ে থাকলে তো কথাই নেই! সমস্যা এড়াতে শুধু আবির খেলতে পারেন।
- পেটের সমস্যা: রং খেলার আনন্দে মশগুল হয়ে অনেকেই হাত ধোয়ার কথা ভুলে যান। রং হাতেই মিষ্টি, খাবার খাওয়া হয়ে যায়। ফলে পেটের গোলমাল হওয়া স্বাভাবিক। জেনারেল ফিজ়িশিয়ান সুবীর মণ্ডল বলছেন, “এক-দু’দিনের মধ্যে সাধারণত এ সমস্যা সেরে যায়। হাতে রং থেকে গেলে কয়েক দিন চামচ দিয়ে খেতে পারেন।”
- চোখের খেয়াল: আবির বা রং চোখে ঢুকলে সমস্যা গুরুতর হতে পারে। সানগ্লাস পরে রং খেলতে পারেন। চোখে রং ঢুকলে না রগড়ে সঙ্গে সঙ্গে জলের ঝাপটা দিন।
- ছোটদের জন্য: সন্তানের যে রঙে অ্যালার্জি রয়েছে, তা বাচ্চার প্রথম দোলে অনেক মা-বাবাই বুঝতে পারেন না। এতে রং থেকে বাচ্চার হাঁচি, শ্বাসকষ্ট হলে, সমস্যা নির্ধারণ করতে সময় নষ্ট হয়। ফলে চিকিৎসা শুরু হতেও দেরি হয়। ডা. মণ্ডল বলছেন, “বাচ্চার প্রথম দোলে সতর্ক থাকতে হবে। সামান্য সমস্যা হলেও তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।” যে সব বাচ্চার অল্পতেই ঠান্ডা লাগার ধাত রয়েছে, যাদের আগেও শ্বাসের সমস্যা হয়েছে, নেবুলাইজ়ার নিতে হয়েছে, দোলের দিন তাদের নিয়ে সতর্ক থাকুন। বাচ্চা প্রথম বার রং খেলার আগে যে শিশুবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে সে রয়েছে, তাঁর পরামর্শ নেওয়া ভাল। শিশুকে একবারে আবির, রং খেলতে না দিয়ে, আগে অল্প একটু মাখিয়ে কোনও অসুবিধে হচ্ছে কি না, দেখে নিতে পারেন।
সমাধানের কিছু উপায়
- আবির বা রং থেকে ত্বকের সমস্যা হলে ভেষজ রঙে দোল খেলতে পারেন। বাজারে গোলাপ, অপরাজিতা, জবা, নয়নতারা ইত্যাদি নানা ফুলের পাপড়ি থেকে তৈরি আবির সহজলভ্য। সিন্থেটিক আবিরের তুলনায় সে রং ফিকে হলেও দোল খেলতে না পারার চেয়ে ভাল। তবে দেখতে হবে, যাঁদের সঙ্গে রং খেলছেন, তাঁরাও যেন এমন হার্বাল রংই ব্যবহার করেন। না হলে আপনি হার্বাল রং নিয়ে গেলেও কৃত্রিম রং থেকে দূরে থাকতে পারবেন না।
- বয়স্ক ও বাচ্চা, যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে, যারা নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার করে, দোলের দিন তাদের রঙের থেকে দূরে থাকাই ভাল।
দোলের দিন চারদিকে ছুটির মেজাজ। এ দিন পথঘাটও ফাঁকা থাকে। উৎসবের দিন হাসপাতাল, ডাক্তার, ওষুধের ঝক্কি এড়াতে চাইলে আগেভাগে সতর্ক হওয়াই ভাল। আনন্দের দিনে এমন অবস্থা যেন তৈরি না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখুন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)