Advertisement
E-Paper

টেলিমেডিসিনের সুবিধে-অসুবিধে

সামনাসামনি ডাক্তার দেখানোর সুবিধে না থাকলে, তার সহজ সমাধান টেলিমেডিসিন। ঘরে বসেই পাওয়া যায় এই পরিষেবা

ঊর্মি নাথ 

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৯
Share
Save

টেলিমেডিসিন শব্দটির সঙ্গে এখন সকলেই অল্পবিস্তর পরিচিত। এই প্রসঙ্গে জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, “টেলিমেডিসিন চিকিৎসাক্ষেত্রে বড়সড় বিপ্লব এনে দিয়েছে, বিশেষ করে যেখানে হোমকেয়ার প্রয়োজন। কোভিডের আগে এই বিষয়ে কোনও ধারণা ছিল না এ দেশে।” একই মত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরির। তিনি বললেন, “কোভিডের আগে পর্যন্ত ব্যাপারটা খুব প্রচলিত ছিল না। সরকারি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন ‘স্বাস্থ্য ইঙ্গিত’ নামে চালু হয়। সেই সময়ে হাসপাতালে না গিয়ে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে ডাক্তার দেখানোর কথা প্রচার করা হয়। বলা যেতে পারে, তখনই টেলিমেডিসিন সরকারি তকমা পেয়ে যায়।”

টেলিমেডিসিন কী?

চিকিৎসকের চেম্বারে রোগী শারীরিক ভাবে উপস্থিত না হয়ে কম্পিউটার বা মোবাইলে ভিডিয়ো কলিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন, বিভিন্ন রিপোর্ট, পুরনো প্রেসক্রিপশন ইত্যাদি দেখাতে পারবেন। সেই সব দেখে ও রোগীর সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ওষুধ, ডায়েট প্রেসক্রাইব করেন চিকিৎসক। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পরিষেবা পৌঁছে দিতে টেলিমেডিসিন ভাল কাজ করছে এখন। ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সম্ভব।

“সরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকেরা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে পরিষেবা দেন সেই জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে। ব্লক অফিস থেকে এই ব্যাপারটা পরিচালনা করা হয়। ব্লকের স্বাস্থকেন্দ্রগুলিতে সিএইচও বা সেখানকার ডাক্তাররা থাকেন, যিনি রোগীর প্রেশার দেখেন, ওজন মাপেন, রোগীর সমস্যা নিয়ে ভিডিয়ো কলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নেন। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালেও এমন ব্যবস্থা আছে। কিছু অ্যাপের মাধ্যমেও টেলিমেডিসিনের সুবিধে নেওয়া যায়,” বললেন ডা. তালুকদার।

সুবিধে-অসুবিধে

এই পরিষেবা ঘরে বসেই পাওয়া সম্ভব, তাই ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ভিড়ের মধ্যে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় না। বিশেষ করে বয়স্ক রোগী, যাঁরা নিয়মিত চেকআপ করান, তাঁদের জন্য টেলিমেডিসিন যথেষ্ট কার্যকর। “শহর ও গ্রামে বয়স্কদের হোমকেয়ার সার্ভিস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে। অনেকের পক্ষেই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরের হাসপাতালগুলিতে বারবার এসে দেখানো সম্ভব হয় না। এতে যেমন সময় ও অর্থ ব্যয় হয়, তেমন শারীরিক পরিশ্রমও হয়। আমার অনেক পেশেন্ট এক সময়ে চেম্বারে এসে দেখাতেন, এখন এই রাজ্যের বাইরে থাকেন। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে পরামর্শ নেন,” বললেন ডা. তালুকদার।

অনেকেই চিকিৎসার জন্য ভেলোর, মুম্বই, দিল্লির চিকিৎসকদের পরামর্শ নেন। সে ক্ষেত্রেও এই পরিষেবা সহায় হতে পারে।

বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে গেলে তাঁরা আগে কয়েকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে আসতে বলেন। রিপোর্ট দেখে তারপরে চিকিৎসা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথম বার টেলিমেডিসিন বেশ কাজের। কিছু ক্ষেত্রে ফলোআপ করানোর প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমেই বলে দেওয়া যায়। “বিশেষ করে ডায়াবিটিস, থাইরয়েডের রোগীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্তপরীক্ষা করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়। তিনি ওষুধ, ইনসুলিনের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারেন টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে। তা ছাড়া হাসপাতাল থেকে় ডিসচার্জের কয়েক দিন পরে রোগীকে দেখাতে হলে, সে ক্ষেত্রেও টেলিমেডিসিন সহায়ক,” বললেন ডা. তালুকদার।

তবে সব ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কার্যকর নয়। নিউরোলজিক্যাল, মাল্টিঅরগ্যান সমস্যার মতো নানা জটিল রোগের ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনে বিশেষ সুবিধে হয় না। এ ছাড়া এখনও প্রথম বার রোগীকে চাক্ষুষ দেখতে চান বেশির ভাগ চিকিৎসকই। এতে রোগ শনাক্তকরণে সুবিধে হয়। “এই অতৃপ্তি দু’পক্ষেরই। বুকে স্টেথো চেপে বা পেট টিপে না দেখলে রোগীরা মনে করেন, ডাক্তারবাবু ঠিক মতো দেখলেন না। আবার উল্টো দিকে চিকিৎসকেরও মনে হয়, ঠিক মতো পরীক্ষা করা হল না। তাই অনেক সময়ই টেলিমেডিসিনে ওষুধ দেওয়ার পরে এ-ও বলে দেওয়া হয়, একটু সুস্থ হলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে যেন সরাসরি আসেন রোগী,” বললেন ডা. তালুকদার।

এখন অনেক অভিভাবক সময়ের অভাবে বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য এই পরিষেবার সাহায্য নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে ডা. গিরি বললেন, “বয়স্কদের ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন অনেকটা সহজ, কারণ রোগীর সঙ্গে চিকিৎসক সরাসরি কথা বলতে পারেন। কিন্তু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের কথা শুনতে হয়, সেই জন্য সামনাসামনি তাঁদের সঙ্গে দেখা করা প্রয়োজন। একদম নতুন রোগীকে ইমার্জেন্সি না হলে পুরোপুরি টেলিমেডিসিনের উপরে ভরসা করে চিকিৎসা করা কাম্য নয়, উচিতও নয়। যে বাচ্চারা একবার এসেছে, তাদের ফলোআপ বা রিপোর্ট দেখানো এর মাধ্যমে করা যায়।” মানসিক সমস্যার প্রসঙ্গে মনোবিদ ডা. জলি লাহা বললেন, “ফোনে বা ভিডিয়ো কলে কাউন্সেলিং হয়তো করা যায়। কিন্তু যখন ওষুধ দেওয়ার ব্যাপার থাকে তখন কিন্তু একজন মনোবিদ চাইবেন রোগীকে অন্তত প্রথম বার মুখোমুখি দেখতে, তাঁর সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে।”

টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় নেটওয়ার্ক সমস্যা। এর পরেও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকেরা এই পরিষেবা দিচ্ছেন। যে কোনও প্রান্ত থেকে মানুষ যাতে ঠিক চিকিৎসা পান, তাই এই ব্যবস্থাকে উন্নত করার চেষ্টা চলছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

medicines

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}