শরীরচর্চায় ঝড়বে মেদ। —প্রতীকী চিত্র।
বছর ৩৫-এর তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সীমা। দিনভর নানা ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটে তাঁর। কিন্তু দিনের শেষে যখন তিনি মনে করেন, একটু বেড়িয়ে আসবেন বা কোনও নিমন্ত্রণরক্ষায় যাবেন, তখনই যেন একটা মনঃকষ্ট শুরু হয়। তাঁর মনে হয়, সব পোশাকেই পিঠের ও হাতের কাছের অংশ বড্ড বেশি চাপা লাগছে। আর স্লিভলেস? নৈব নৈব চ। পরলেই হাতের উপরের দিকের অতিরিক্ত মেদ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসে!
শুধু সীমা নন। বাহুমূলে অতিরিক্ত মেদ জমার মতো সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সুন্দর, সুঠাম চেহারার জন্য নানা ভাবে পরিশ্রম করলেও অনেক সময়ে দেখা যায়, বাহুমূল ও পিঠে যে মেদ জমে, তা সহজে কমতে চায় না। বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে বাহুমূল ও পিঠের এই মেদ না ঝরাতে পেরে মনঃকষ্টে ভোগা, আত্মবিশ্বাস হারানোর মতো সমস্যাও দেখা দেয়। এই সমস্যার সমাধান করতে পারে ব্যায়াম ও জীবনধারায় কিছু বদল।
ব্যায়াম যেমন
বাহুমূল, পিঠ ও কাঁধের কাছে যে মেদ জমে, তা কমানোর জন্য কিছু বিশেষ ধরনের ব্যায়াম রয়েছে বলে জানাচ্ছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস। তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে ‘স্পট রিডাকশন’ ব্যায়াম সবচেয়ে উপকারী। শরীরের কোনও নির্দিষ্ট অংশের মেদ ঝরানোর জন্য যে নির্দিষ্ট ব্যায়াম করা হয়, সেগুলিকেই ‘স্পট রিডাকশন’ ব্যায়াম বলা হয়। বাহুমূল, হাত ও পিঠের অতিরিক্ত মেদ ঝরানোর জন্য রয়েছে এমনই কিছু ব্যায়াম:
আর্ম সার্কলিং: প্রথমে একটি চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন। হাত দু’টি দু’পাশে কাঁধ বরাবর টান টান ভাবে তুলুন। এ বার এক সঙ্গে দু’টি হাত ঘড়ির কাঁটার দিকে ১৬ বার ঘোরান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘোরান ১৬ বার। ব্যায়ামটি দু’-তিন বার করা যেতে পারে।
পেক ডেক: প্রথমে হাতের মুঠো বন্ধ করুন। হাত দু’টি ভাঁজ করে মুখের সামনে সোজাসুজি রাখুন। সে অবস্থাতেই হাত দু’টি দু’পাশ দিয়ে পিছনে নিয়ে যান। এই অবস্থায় দশ পর্যন্ত গুনুন। তার পরে হাত দু’টি আবার সামনের দিকে আনুন। এ ভাবে চার-পাঁচ বার ব্যায়ামটি করা দরকার।
পুলিং অব আর্মস ব্যাকওয়ার্ডস: প্রথমে সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন। টানটান করে একটি হাত মুঠো করে উপরের দিকে তুলুন। এ বার, হাতে হালকা চাপ পড়বে, এমন ভাবে সেটিকে টানটান করে পিছন দিকে ঠেলার চেষ্টা করতে হবে। এই অবস্থাতেই দশ অবধি গুনুন। দু’হাতে চার বার করে এই ব্যায়ামটি করা যেতে পারে। সৌমেনের মতে, বাহুমূলের মেদ ঝরাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ব্যায়ামগুলির মধ্যে এটি একটি।
ডাউনওয়ার্ড ফেসিং ডগ: সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত দু’টি টানটান করে উপরের দিকে তুলে ধীরে ধীরে নামিয়ে মাটিতে ভর দিন। এই অবস্থায় শরীরটি ত্রিভুজের মতো দেখাবে। এ বার ওই অবস্থাতেই কোমরটি কিছুটা নীচের দিকে ঠেলুন। ব্যায়ামটি করার সময় দশ পর্যন্ত গুনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। দিনে চার-পাঁচ বার করা যায় এটি।
পুশ আপ: নানা কারণে এই ব্যায়ামটি ভীষণ পরিচিত। ব্যায়ামটি হাত ও বাহুমূলের পাশাপাশি পুরো শরীরেরই মেদ ঝরাতে কাজে লাগে। ব্যায়ামটি করার জন্য প্রথমে উপুড় হয়ে শুতে হবে ম্যাট বা কোনও শক্ত জায়গার উপরে। পা দু’টির মধ্যে কিছুটা দূরত্ব থাকবে। শরীরকে টানটান রেখে হাত ও পায়ের আঙুলের উপরে ভর দিয়ে তা তুলতে হবে কিছুটা। মনে রাখবেন, শরীরের ভার যেন হাতের উপরেই বেশি পড়ে। ব্যায়ামটি করার সময়ে আট পর্যন্ত গুনবেন। দিনে তিন-চার বার ব্যায়ামটি করা যেতে পারে।
এ ছাড়াও হাতের মেদ ও সার্বিক ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্ডিয়ো, বেঞ্চ ডিপসের মতো কিছু ব্যায়ামও করা যেতে পারে।
জীবনধারায় নজর
ফিটনেস বিশারদ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ব্যায়ামের সঙ্গে বয়স, খাওয়াদাওয়ার ধরন ও শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার। প্রত্যেকের শরীরের গঠন আলাদা। সেই অনুযায়ী তাঁদের ওজনের মাপকাঠিও আলাদা হয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে, মেনোপজ়ের পরে এবং শারীরিক নানা কারণে মহিলাদের হাতের গঠনে বদল আসে। এ সময়ে ওজন কমানোর লক্ষ্যে অনেকেই ক্র্যাশ ডায়েট করে ফেলেন। অর্থাৎ, অতিরিক্ত কম মাত্রায় খেয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই মেদ ঝরানোর চেষ্টা করেন অনেকে। গুরুপ্রসাদের মতে, এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দ্রুত ওজন কমলেও বেশি দিন তা ধরে রাখা যায় না। এর ফলে নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতাও দেখা দিতে পারে। তাই, যদি মেদ ঝরানোটাই প্রধান লক্ষ্য হয়, তবে ক্র্যাশ ডায়েট চলবে না। বরং, নিয়মিত ভাবে পরিমিত মাপে সব ধরনের খাবারই খেতে হবে। হাতের পেশিগুলি আরও সুগঠিত করতে তাঁর পরামর্শ, খাদ্যতালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার কিছুটা বেশি পরিমাণে রাখা যেতে পারে। সেই সঙ্গে, নিয়মিত ভাবে শারীরচর্চা করলে শরীরের গঠন ভাল থাকবে। বাড়তি মেদও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। তবে, যে কোনও ব্যায়াম বা খাদ্যতালিকায় বদল আনার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy