অবসাদ কি বদলে যেতে পারে অ্যালঝাইমার্সে? ছবি: ফ্রিপিক।
আলমারি গুছিয়ে চাবি কোথায় রাখলে্ তা আর মনেই করতে পারলেন না। গ্যাসে দুধ বসিয়েও বেমালুম ভুলে গেলেন। প্রয়োজনীয় জিনিস সকালে হয়তো কোথাও রেখেছেন, দুপুর গড়াতে তা আর মনেই এল না। কথায় বলে, বয়স বাড়লে স্মৃতি মাঝেমাঝেই বিশ্বাসঘাতকতা করে। কিন্তু এখনকার জীবনযাপনে যে পরিমাণ কাজের চাপ এবং তার থেকে সৃষ্ট উদ্বেগ, মানসিক চাপে পিষ্ট হতে হতে স্মৃতিরা যে কখন লুকোচুরি খেলতে শুরু করে দিয়েছে, তা টের পেতেই ঢের দেরি হয়ে যায়। মনোজগৎ জুড়ে অবসাদ ধীরে ধীরে স্মৃতির পাতাও খালি করতে থাকে। দীর্ঘকালীন অবসাদ থেকে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ হতে দেখা যায় মাঝেমধ্যেই। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, অবসাদ বাড়তে থাকলে তার থেকে অ্যালঝাইমার্সের লক্ষণ দেখা দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
বয়সজনিত কারণেই যে সব সময়ে ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়, তা নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় চেনা মুখ, নিজের জিনিস, সহজ কথা মনে রাখতে না পারার নেপথ্যে রয়েছে অ্যালঝাইমার্স। ভুলে যাওয়ার সমস্যা অনেকেরই হয়। কিন্তু কেউ অ্যালঝাইমার্সের শিকার কি না, তা বোঝা বেশ কঠিন। এই বিষয়ে মনোরোগ চিকিসক শর্মিলা সরকারের মত, “সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু গবেষণা বলছে, বাইপোলার ডিজঅর্ডার থেকে অ্যালঝাইমার্স হতে পারে। তবে অবসাদ থেকে যে হঠাৎ করে অ্যালঝাইমার্স দেখা দেবে, তা নয়। বিভিন্ন বিষয় এখানে কাজ করে। অবসাদ যদি দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকে এবং সঠিক চিকিৎসা না হয়, তখন মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। মস্তিষ্কের নানা জটিল রোগের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে।”
অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে ‘কগনিটিভ ডিজফাংশন’ হতে পারে। তখন ভুলে যাওয়ার সমস্যা বাড়ে। উদ্বেগের সঙ্গে ভুলে যাওয়াও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তবে কেবল স্মৃতিশক্তি নয়, যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে কোনও কিছুর পরিকল্পনা করা, যুক্তি দিয়ে বিচার করার ক্ষমতা, সমাজে মেলামেশা করার ক্ষমতা— এই সব কিছু নিয়েই কিন্তু কগনিটিভ ফাংশন। অ্যালঝাইমার্সের রোগীর যে কেবল স্মৃতিনাশের লক্ষণ দেখা দেবে তা-ই নয়, চিন্তাভাবনা গুলিয়ে যাবে, মেলামেশা করতে সমস্যা হবে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকবে, কথাবার্তাও অসংলগ্ন হবে, নিজের মনের ভাব ভাষায় ব্যক্ত করতে পারবেন না।
শর্মিলা বুঝিয়ে বললেন, "ধরা যাক কেউ বই পড়তে ভালবাসতেন, কিন্তু অবসাদ বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে, তখন বই পড়ার ইচ্ছাটাও চলে গেল। আবার এমন দেখা গিয়েছে, যিনি মেলামেশা করতে খুব ভালবাসতেন, তিনি নিজেকে গুটিয়ে ঘরবন্দি করে ফেলেছেন। একই সঙ্গে ছোট ছোট জিনিসও ভুলতে শুরু করেছেন। তখন তাকে বলা হবে ‘সিউডো ডিমেনশিয়া’। চিকিৎসায় এর প্রতিকার সম্ভব। কিন্তু যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হয়, তখন তার প্রভাব মস্তিষ্কে ভাল রকমই পড়তে থাকবে। নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য বিগড়ে যাবে। অ্যাসিটাইল কোলিন নামে এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটারের ক্ষরণ কমতে থাকবে। তখন অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করবে।"
এই অসুখ ঠেকাতে জীবনযাপনের দিকে নজর দিতে হবে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, সুষম খাবার খেতে হবে। কেউ যদি ধূমপান করেন, তা হলে সেই অভ্যাস বন্ধ করতে হবে। মদ্যপানের ক্ষেত্রেও তা পরিমিত রাখা জরুরি। সেই সঙ্গে ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সারা ক্ষণ দুশ্চিন্তা হলে মন শান্ত রাখার জন্য পছন্দের কাজ করতে হবে। মেডিটেশন বা ধ্যানেও খুব উপকার হয়। মানসিক চাপ নিজে সামলাতে না পারলে কাউন্সেলিং করিয়ে নেওয়া খুব জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy