Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Anuttama Banerjee

‘সারা ক্ষণ রোগ নিয়ে বাতিক, উদ্বেগের কথা লোককে কী করে বলব?’ আলোচনায় অনুত্তমা

‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘রোগভীতি’।

মনে সারা ক্ষণ মৃত্যভয়, সামাল দেব কী ভাবে?

মনে সারা ক্ষণ মৃত্যভয়, সামাল দেব কী ভাবে? ছবি: নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ ২০:৩২
Share: Save:

সারা ক্ষণ রোগ রোগ বাতিক! কোনও রোগের কথা কানে এলেই মনে হতে থাকে, এই বুঝি আমারও হল। শরীরে সামান্য বেগতিক হলেই বার বার চিকিৎসকের কাছে দৌড়নো। চিকিৎসক হয়তো বলছেন ভয়ের তেমন কিছুই নেই, তবুও মন যেন মানতে চায় না। বার বার মনে হয়, এই বুঝি কোনও বড় অসুখ শরীরে বাসা বাঁধছে কিন্তু ধরা পড়ছে না। বিষয়টা রোগ নিয়ে বাতিক জেনেও ভয় কাটতে চায় না কারও কারও। এ সব নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘রোগভীতি’।

প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমন কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লিখেছেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর আগে এক জ্যোতিষী আমায় বলেছিলেন, আমার বুকে কয়েক দিনের মধ্যেই বড় রকম গন্ডগোল ধরা পড়বে। তবে থেকেই আমার মনে হচ্ছে, আমার বুঝি স্তন ক্যানসার হয়েছে। বার বার পরীক্ষা করাচ্ছি, রিপোর্টও ঠিকঠাক আসছে, কিন্তু মনে শান্তি পাচ্ছি না। খালি মনে হচ্ছে, যখন ধরা পড়বে তখন আর কিছুই করার থাকবে না, আমি বোধ হয় মরেই যাব। তখন আমার মেয়েটার কী হবে? আমার মনের এই ভয় বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গিয়েছে।’’ শ্রীজিত নামে একজন লিখেছেন, ‘‘আমার বয়স ২৫ বছর। আমি কর্মসূত্রে আমেরিকায় থাকি। এক বার আমায় শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে ভর্তি করানো হয়েছিল। আমার রোগভীতি তখন থেকেই। আমার কিছু হলেই আমি সেই রোগ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিই। এখন আমার পড়াশোনা আর জ্ঞানে আবদ্ধ থাকছে না, দুশ্চিন্তায় পরিণত হচ্ছে। আমার কাছে মৃত্যুভয়টা রোগভীতির থেকেও বেশি। আমার পরিবারকে দেখাশোনার জন্য আমি ছাড়া আর কেউ নেই। খালি মনে হয়, আমি না থাকলে ওদের কী হবে?’’

এই সমস্ত চিঠিতে প্রত্যেকেই যেন নিজেদের অসুখের ভয়ে নিজেদের মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের জানতে হবে এই ভীতির মূলে ঠিক কী রয়েছে? মনোবিদ বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি চিঠিতেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই এই ভয়ের সূত্রপাত। রোগভীতির পাশাপাশি আরও এক ভয়ে আমারা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছি, তা হল-- আমাদের পরে আমার প্রিয়জনেদের কী হবে। আপনাদের সকলের ভয়ের পিছনেই যে বাস্তবতা রয়েছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে, ভীতি কখন বাড়াবাড়ির পর্যায় চলে যাচ্ছে, তা বুঝতে হবে। কার শরীরে কোন রোগ বাসা বাঁধবে, তা কেউ বলতে পারে না। ভয় থেকে আপনারা তো সমস্ত শারীরিক পরীক্ষাই করাচ্ছেন, চিকিৎসকরাও আপনাদের নিশ্চিত করছেন এই বলে যে, আপনি একেবারেই সুস্থ আছেন, তবুও কেন এই ভীতি? জীবনে সুখ এলেই সুখ হারানোর ভয় আসে। আপনারা আসলে জীবনের ভাল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাই মনের ভিতর সেই ভালটা হারানোর ভীতি কাজ করছে। যখনই রোগ বা কোনও কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা আমাদের মাথায় আসে, তখনই কিন্তু শরীরের ভিতর এমার্জেন্সি অ্যালার্ট বেজে ওঠে। মনের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে শরীর পলায়নের পথ খুঁজতে শুরু করে। তখন হৃদ্‌স্পন্দন বেড়ে যেতে থাকে, শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। এই সব লক্ষণ কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের সমান্তরাল বলে মনে অনুভূত হতে পারে। আমাদের উদ্বেগ আমাদের শরীরে নানা ধরনের অস্বস্তির কারণ হয়। একে মনে রোগভীতি, উপরন্তু শারীরিক অস্বস্তিগুলি আরও বেশি করে মনের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। মনে হয়, এই বুঝি সব শেষ হয়ে গেল। আমার পরামর্শ, রোগ খোঁজাখুজি না হয় এ বার বন্ধ করলাম। রোগের উপসর্গ দেখা দিলে তো চিকিৎসক রয়েছেন, তিনিই পারবেন রোগের কিনারা করতে। ওই কাজটা না হয় তাঁদের উপরেই ছাড়া হল। কোথাও ব্যথা হলে আমরা যতটা না খারাপ থাকি, ব্যথাটা কেন হল সেই কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ি। তাই কারণ খোঁজা বন্ধ করে দিলেই সমস্যা অনেকখানি কমে যাবে। শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের কথাকেই বেশি গুরুত্ব দিন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Anuttama Banerjee Mental Health Mental Health Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE