E-Paper

অ্যাডিসন’স ডিজ়িজ়ে সাবধান হোন

অকারণ ওজন হ্রাস, ত্বক কালচে? শীঘ্র চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

ঐশী চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ ০৫:৪৬
Share
Save

খিদে নেই। কাজে মন লাগে না। ওজনও এমনি-এমনি কমছে৷ হাতের তালুতে, ত্বকে কালো ছোপ। আপাত ভাবে খাদ্যাভ্যাস বা মানসিক কোনও সমস্যা মনে হলেও রোগটা একটু অন্য রকম। বেশ বিরলও। অসুখটি হল অ্যাডিসন’স ডিজ়িজ়।

অসুখটি যেমন

এন্ডোক্রিনোলজিস্ট কৌশিক পণ্ডিত বলছেন, “এটি এমন এক ধরনের রোগ, যেখানে দেহের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে হরমোন তৈরি বা ক্ষরণ করে না। একে অ্যাড্রিনাল ইনসাফিশিয়েন্সিও বলা হয়। রোগটি কেমন তা বুঝতে গেলে প্রথমেই জানা দরকার অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির ভূমিকা। দেহে দু’টি বৃক্কের মাথায় রয়েছে দু’টি ছোট, ত্রিভুজাকার গ্রন্থি। এই গ্রন্থি দু’টির কাজ হল কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, কর্টিসল ও অ্যালডোস্টেরন উৎপাদন ও ক্ষরণ করা।” কী হবে যদি দেহে কর্টিসল বা অ্যালডোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়?

কর্টিসলের প্রধান কাজ হল আমাদের যে কোনও চাপকে সামলে দেওয়া, তা সে মানসিক হোক বা দুর্ঘটনা, আঘাত, অস্ত্রোপচার থেকে শরীরে কোনও ক্ষত। এই হরমোনই উচ্চ রক্তচাপ, শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

অন্য দিকে, অ্যালডোস্টেরন হরমোনের কাজ হল রক্তে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। কতটা প্রস্রাব হচ্ছে, তা-ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এই হরমোনটি। তাই বৃক্ক দু’টিকে, তথা শরীরকে সুস্থ রাখতে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যখন কেউ অ্যাডিসন’স ডিজ়িজ় তথা অ্যাড্রেনাল ইনসাফিশিয়েন্সিতে আক্রান্ত হন, তখন ধীরে ধীরে শরীরে এই দুই হরমোন উৎপাদন ও ক্ষরণ কমতে থাকে। যদি দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হয়, তা হলে এক সময়ে মৃত্যুও হতে পারে রোগীর।

ঘটনাচক্রে, এই বিরল রোগের শিকার হয়েছিলেন অভিনেত্রী সুস্মিতা সেনও। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে একটি বার্তার মাধ্যমে সে কথা জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে শুধু সুস্মিতা নন, ইতিহাস বলে, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি, প্রখ্যাত সাহিত্যিক জেন অস্টেন-সহ অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিছু সূত্র এ-ও দাবি করে যে, ঠিক সময়ে নির্ণয় না হওয়ায় অস্টেনের মৃত্যু এই রোগেই হয়েছিল।

উপসর্গ কী

এই রোগে হরমোনজনিত ঘাটতির ফলে দেখা দেয় নানা উপসর্গ। যেমন:

  • খিদে না পাওয়া।
  • কোনও কারণ ছাড়াই ওজন কমতে থাকা।
  • শরীরের নানা অংশ যেমন হাতের তালু বা ত্বকের নানা জায়গায় কালো ছোপ পড়া (হাইপারপিগমেন্টেশন)।
  • গা-হাতে-পায়ে ব্যথা, বিশেষত পেশিতে।
  • শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • বমি, পেট খারাপ হওয়া।
  • শরীরে জলের ঘাটতি।
  • অবসাদ ও খিটখিটে মেজাজ।
  • মাথার চুল, গায়ের রোম কমে যাওয়া ও আরও নানা কিছু।

চিকিৎসক সুবীর মণ্ডল জানাচ্ছেন, এই রোগ নিঃশব্দে শরীরে বাসা বাঁধে। আর অসুখটি সব বয়সের মানুষেরই হতে পারে। রোগটি অনেক আগে হলেও উপসর্গগুলি দেখা দিতে কখনও দু’-চার মাস, কখনও আবার তারও কিছুটা বেশি সময় লেগে যায়। এই রোগের সঙ্গে অন্য রোগের লক্ষণগুলি অনেকাংশে মিলে যায়। তাই এক-একটা উপসর্গ যখন দেখা দেয়, তখন প্রথমে অনেকেই তাতে আমল দেন না।

চিকিৎসকেরা এ-ও সতর্ক করছেন যে, অনেক সময়ে ইন্টারনেটে নিজের উপসর্গগুলি কোন রোগের হতে পারে, তা দেখার প্রবণতা থাকে রোগী বা তাঁর পরিবারের। এই সব ক্ষেত্রে অ্যাডিসন’স রোগটির ধরা পড়ার সম্ভাবনা বিলম্বিত হতে থাকে। তাই আচমকা স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সাধারণত দেরিতে দেখা দিলেও কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে লক্ষণগুলি দ্রুত এবং আচমকা প্রকট হয়ে ওঠে। তখন ধরে নেওয়া হয় যে ‘অ্যাকিউট অ্যাড্রিনাল ফেলিয়োর’ বা ‘অ্যাড্রিনাল ক্রাইসিস’-এর শিকার রোগী। এই সব ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন রোগীকে।

রোগের ধরন

মূলত দু’টি কারণে এমন সমস্যা দেখা দেয়—

  • প্রাইমারি অ্যাড্রিনাল ইনসাফিশিয়েন্সি: এটিকেই মূলত অ্যাডিসন্‌’স ডিজ়িজ় বলা হয়। সাধারণত, যখন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলির বাইরের অংশটি (কর্টেক্স) কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন গ্রন্থিটি পর্যাপ্ত পরিমাণে হরমোন উৎপাদন ও ক্ষরণ করতে পারে না। সাধারণত যক্ষ্মা, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিতে কর্কট রোগ বা অন্য কোনও সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়লে এই গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে যায়। এ ছাড়াও, নানা ধরনের ওষুধের ফলে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি অক্ষম হয়ে যেতে পারে।
  • সেকেন্ডারি অ্যাড্রিনাল ইনসাফিশিয়েন্সি: অনেক সময়ে দেহে থাকা পিটুইটারি গ্রন্থির উপরে চাপ পড়তে পারে। কোনও টিউমর বা অস্ত্রোপচারের ফলেও সেটির উপরে প্রভাব পড়ে। এর ফলে পিটুইটারি গ্রন্থির যা কাজ (এক বিশেষ হরমোনের ক্ষরণ), তা করতে পারে না। ফলে চাপ বাড়ে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির উপরে। এ ক্ষেত্রেও অ্যাডিসন’স ডিজ়িজ়ের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তবে সেকেন্ডারি অ্যাড্রিনাল ইনসাফিশিয়েন্সির শিকার যাঁরা, তাঁদের ত্বক কালো হয়ে যাওয়ার লক্ষণটি দেখা দেয় না। এঁদের সাধারণত হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়।

অনেক সময়ে, কিছু দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ নেওয়া বন্ধ করলেও এই সমস্যাটি দেখা দেয়। তবে এ ক্ষেত্রে তা ক্ষণস্থায়ী।

এ ছাড়াও, জিনগত কারণে বা টাইপ-১ ডায়াবিটিস কিংবা মস্তিষ্কে কোনও গুরুতর চোট লাগলেও দেখা দেয় অ্যাড্রিনাল ইনসাফিশিয়েন্সি।

চিকিৎসার উপায়

রক্ত পরীক্ষা, গ্রন্থি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, হরমোনের উৎপাদন ও ক্ষরণ স্বাভাবিক মাত্রায় হচ্ছে কি না, এমন নানা পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকেরা এই রোগ নির্ণয় করতে পারেন। আর রোগটি ধরা পড়া মাত্রই প্রয়োজন সেই হরমোনের খামতিকে পূরণ করা। এটি মূলত ওষুধ ও স্টেরয়েড ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে হয়। এ ক্ষেত্রেও জানা জরুরি যে, স্টেরয়েড নিতে হতে পারে। অনেকে ভাবেন তা ক্ষতিকারক। তবে ডা. সুবীর মণ্ডলের কথায়, “এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্টেরয়েড হরমোন যদি শরীরে হঠাৎ করে কমে যায়, তা হলে মৃত্যুও হতে পারে।” তবে তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, স্টেরয়েডের ব্যবহার করতে হবে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে। এ বিষয়ে কৌশিক জানাচ্ছেন, নির্ধারিত মাত্রায় স্টেরয়েডের প্রয়োগ করলে তা জীবনদায়ী হয়। অ্যাডিসন’স-এ যাঁরা আক্রান্ত, তাঁদের স্টেরয়েড নিতে হবে যতক্ষণ চিকিৎসক বলছেন— সেটা সারা জীবনও হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Health Healthy life

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।