Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Diabetes

২১ দিনেই মিলবে স্বস্তি

রোগের কারণকে নির্মূল করতে পারলে, মাত্র ২১ দিনেই মিলতে পারে ডায়াবিটিসের সুরাহা

কোয়েনা দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৮
Share: Save:

“কী খেলে জুড়াবে প্রাণ, থাকবে হাসি মুখ?...”

আজ প্রায় বছর পঁচিশ ডায়াবিটিসের ওষুধ খাচ্ছেন কুণাল। বাদ দিয়েছেন আলু, মিষ্টি-সহ নানা খাবার। ৩৫ বছরের ত্রিধাকে আবার রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে নিতে হয় ইনসুলিন ইনজেকশন। এ দিকে মাত্র ২১ বছর বয়স শৌর্যর। তাঁরও বর্ডার লাইনে আছে সুগার।  

শৌর্য, কুণাল, ত্রিধা... এ রকম কয়েক জন নন, আমাদের চারপাশে রয়েছেন অসংখ্য মানুষ, যাঁরা ডায়াবিটিসের সমস্যায় ভুগছেন। মুঠো মুঠো ওষুধ খাচ্ছেন। কিন্তু এর শেষ কোথায়? সে প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছেন ডা. নন্দিতা শাহ। চিকিৎসাবিদ্যার প্রভূত উন্নতি সত্ত্বেও, কেন নির্মূল হচ্ছে না ডায়াবিটিস? তাঁর মতে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং গোড়া থেকে রোগের কারণকে নির্মূল করতে পারলে, মাত্র ২১ দিনেই মিলতে পারে ডায়াবিটিস থেকে স্বস্তি।

শুনতে খানিক অবাস্তব লাগলেও ডা. শাহ কিন্তু নিশ্চিত যে, জীবনযাপন ও খাদ্যতালিকায় সামান্য বদলই ২১ দিনে সারিয়ে তুলতে পারে ডায়াবিটিস। আজীবন মুঠো মুঠো ওষুধ খেয়ে যাওয়া ছাড়াই এক ব্যক্তি প্রকৃত অর্থে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন।

ভাল থাকার মন্ত্র নাকি একদম বেসিক...

  • ডায়াবিটিস আর মিষ্টির অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক। রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়লেই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ মিষ্টি ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় যাবতীয় খাবার। কিন্তু ডায়াবিটিসের কারণ মিষ্টি নয়। ডায়াবিটিসের ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে। বরং রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ার মূল কারণ খাবারে থাকা ফ্যাট। তাই ডায়াবিটিস নির্মূল করতে চাইলে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে প্রথমেই বাদ দিতে হবে যে কোনও ধরনের ফ্যাট জাতীয় খাবার। স্বাস্থ্যের কারণে চিকেন, মাছ ইত্যাদি সিদ্ধ বা গ্রিল করে খান অনেকে। অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়াতে দুধ, দই ইত্যাদি বেছে নেন। কিন্তু এই সবেতেই থাকে ফ্যাট। চিকেন সিদ্ধ করলে জলের উপরে ভাসে তেল, দুধ গরম করলেও, তাতে থাকা ফ্যাট সর হয়ে উপরে জমে। তাই তেল, ঘি, মাখন তো বটেই, সঙ্গে মাছ, মাংস, দুগ্ধজাতীয় পণ্য... সব রকম প্রাণিজ খাবারই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
  • ফ্যাটের পাশাপাশি খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবারের অভাবও ডায়াবিটিসের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ফাইবার শরীর থেকে ফ্যাট নির্গত করতে সাহায্য করে, যা মূলত উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে পাওয়া যায়। প্রাণিজ খাবারে কোনও রকম ফাইবার থাকে না। ফলে বেশি পরিমাণে খান শাকসবজি, ফল ইত্যাদি।
  • তবে প্রক্রিয়াজাত উদ্ভিজ্জ খাবারে সে গুণ থাকে না। উদ্ভিদজাত হলেও, পরিশোধিত/রিফাইনড বিভিন্ন খাবার যেমন তেল, চিনি, হোয়াইট রাইস, ময়দায় ফাইবার থাকে না। তাই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে খাদ্যতালিকা থেকে এই সমস্ত খাবার বাদ দেওয়া প্রয়োজন।
  • গত কয়েক বছরে বেড়েছে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার প্রবণতা। বিভিন্ন রকমের জাঙ্ক ফুড, ফ্রায়েড, চিপস খাওয়া এখন দৈনন্দিন অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডায়াবিটিস নির্মূল করতে এড়িয়ে চলতে হবে সে সবও।

খেতে ভালবাসে বল কে না...

বাদ কী কী দিতে হবে তা তো হল, এ বার তবে আসল প্রশ্ন। ২১ দিনে ডায়াবিটিস সারাতে মানুষ তা হলে কী খাবেন?

  • সাধারণ ভাবে ডায়াবিটিস রোগীদের কলা, আম, বেদানা, সবেদা ইত্যাদি ফল না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু ডা. শাহ বলছেন, কোন ফল মিষ্টি, তাতে কী গুণ আছে, এ সব দেখার প্রয়োজন নেই। বরং যত ইচ্ছে যা খুশি ফল খেতে পারেন।
  • সঙ্গে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন সব ধরনের শাক, আনাজপাতিও।

বেসিক ভারতীয় খাবার ডাল, ভাত, রুটি, সবজিও চলতে পারে। তবে তাতে মানতে হবে কিছু নিয়ম—

  • ভাতের জন্য সাদা ভাত নয়, খেতে হবে ব্রাউন রাইস।
  • আনাজের খোসায় থাকে ফাইবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান। তাই খোসাসহ রাঁধুন তা।
  • ডাল বা সবজি রান্না করুন তেল ছাড়া। অয়েল রিপ্লেটর হিসেবে নারকেল, বাদাম কিংবা তিল ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো থেকেই আদতে ভোজ্য তেল উৎপাদন হয়। তবে প্রক্রিয়াকরণ করায় তাতে উপকারের বদলে ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই নারকেল কোরা, রোস্টেড বাদাম ও তিল গুঁড়ো কড়াইতে কিছুক্ষণ নাড়িয়ে নিলেই তেলের কাজ হয়ে যাবে। এতে যেমন খাবারের স্বাদ বাড়বে, তেমন উপকারও বজায় থাকবে।
  • সাধারণত ডাল বা তরকারি রাঁধতে কড়াইতে তেল দিয়ে তাতে দেওয়া হয় মশলা। নন্দিতা বলছেন, “পদ্ধতিটা সামান্য বদলে নিন। রান্নার আগেই শুকনো কড়াইয়ে রোস্ট করে গুঁড়ো করে নিন আস্ত মশলাপাতি। এ বার ডাল বা আনাজ সিদ্ধ করে নিয়ে তাতে মিশিয়ে দিন বানিয়ে রাখা মশলা।”
  • সঙ্গে কাঁচা বা সিদ্ধ করে, মশলা মাখিয়ে খেতে পারেন ছোলা, মটর, বাদাম ইত্যাদি। পেঁয়াজ, লেবু, লঙ্কা সহযোগে বানিয়ে নিতে পারেন চাটও, যা মুখরোচক এবং স্বাস্থ্যকর উভয়ই।
  • বুঝে খেতে হবে চা, কফিও। দুধ, চিনি দিয়ে চা, কফি খাওয়া চলবে না একেবারেই। তবে গ্রিন টি, নানা ধরনের ভেষজ লিকার চা অবশ্য খেতে পারেন।

প্রাকৃতিক খাবার, উদ্ভিজ্জ খাবারের অর্থ কিন্তু শুধুই স্বাদহীন, সিদ্ধ খাবার নয়। এই তালিকায় রয়েছে পিৎজ়া, বার্গার, কেক, কাটলেট, পাওভাজি, বিরিয়ানি, চাইনিজ়, তাই, ইটালিয়ান, বাঙালি সবই। শুধু জানতে হবে খাবার রান্নার স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি।

নন্দিতার কথায়, “মানুষের শরীর অনেকটা গাড়ির মতো। যে গাড়ি ডিজ়েলে চলে তাতে পেট্রল দিলে যেমন চলবে না, তেমনই প্রকৃতির স্বাভাবিক খাবারের বদলে অন্যান্য খাবারই শরীরে রোগসমূহ ডেকে আনে। খাদ্য-খাদক চক্রে প্রকৃতিতে যখন এক প্রাণী অন্য প্রাণীর মাংস খায়, তখন তার হাড়, চামড়া, রক্ত-সহ সব খায়। কিন্তু মানুষ সে সব বাদে কেবল মাংসটুকু তেল, মশলা সহযোগে খায়। ক্ষতিও সে কারণেই হয়। মানুষও যদি অন্যান্য প্রাণীর মতো কাঁচা মাংস খেতে পারত, তবে কিন্তু সমস্যা হত না।”

কোয়েনা দাশগুপ্ত

এই খাদ্যতালিকার সঙ্গে বিরোধ নেই ওষুধেরও। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে যাঁরা নিয়মিত ওষুধ খান, তাঁরা এই খাদ্যতালিকার সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে চালিয়ে যেতে পারেন ওষুধ খাওয়াও। পরে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সুগার লেভেল পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যতালিকা, বিশেষজ্ঞের পরামর্শের পাশাপাশি ২১ দিনে ডায়াবিটিস নির্মূল করতে সঙ্গে জরুরি নিয়ম মেনে ঠিক শারীরচর্চাও।

অন্য বিষয়গুলি:

Vegetables
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy