জ্বরের ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামলকে সুরক্ষিতই বলে থাকেন চিকিৎসকেরা। তবে কী ডোজ়ে প্যারাসিটামল খাওয়া হচ্ছে এবং কখন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, হবু মায়েরা জ্বরের সময়ে বেশি ডোজ়ে প্যারাসিটামল খেয়ে ফেললে গর্ভস্থ শিশুর উপর তার মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে সমস্যা হতে পারে।
‘নেচার মেন্টাল হেল্থ’ নামক জার্নালে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। গবেষকেরা ৩০৭ জন অন্তঃসত্ত্বার উপর পরীক্ষা করে দাবি করেছেন, গর্ভাবস্থায় বেশি প্যারাসিটামল খেয়েছিলেন যে মহিলারা, প্রসবের পরে দেখা যায় তাঁদের বেশির ভাগেরই সন্তান ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজ়অর্ডার’-এ (এডিএইচডি) আক্রান্ত। ছোটদের মনঃসংযোগের সমস্যা, সর্ব ক্ষণ অকারণ অস্থিরতার মতো লক্ষণ এই রোগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বলে মনে করা হয়। অস্থিরতার পাশাপাশি আচরণগত সমস্যাও দেখা দেয় শিশুদের। মনঃসংযোগের অভাব হয়, নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। একই সঙ্গে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বিপজ্জনক হারে বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন:
প্যারাসিটামলের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। বিগত কয়েক বছর ধরে সমীক্ষা চালিয়ে ব্রিটেনের গবেষকেরা দাবি করেছিলেন, প্যারাসিটামল নির্দিষ্ট ডোজ়ে না খেলে বা যখন-তখন বেশি মাত্রায় খেয়ে ফেললে তা শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। লাগাতার যদি ওষুধটি বেশি ডোজ়ে কেউ খান, তা হলে তাঁর লিভার ও কিডনিতে চাপ পড়বে। পেটের গোলমাল তো হবেই, কিডনিতে পাথর জমার আশঙ্কাও বাড়বে। বেশি প্যারাসিটামল খেলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে প্যারাসিটামল খেতে থাকলে ঘন হলুদ রঙের প্রস্রাব, তলপেটে তীব্র যন্ত্রণা— লিভার খারাপ হওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জির সমস্যাও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকেরা।
এই বিষয়ে চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কী ওষুধ কতটা ডোজ়ে খেতে হবে, তা জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চেনা ওষুধও নিজের মতো করে খেয়ে ফেললে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারে।