গরমে হাঁপিয়ে, ঘেমেনেয়ে দু’দণ্ড জিরোনোর ফুরসত পেলে ঠান্ডা শরবত খাওয়ার সাধ হয়! রাস্তাঘাটে তেমন শরবতের জোগানের অভাবও নেই। বোতলবন্দি নরম পানীয়ের পাশাপাশি টাটকা ফলের রস, লস্যি, আমপান্না, বেলের পানা, লেবুর শরবত, ডাবের জল— গরম পড়তে না পড়তেই প্রাণ জুড়োনোর সব বন্দোবস্ত হাজির। যাঁদের বাইরের জলে সমস্যা তাঁদের অনেকে বাড়ি থেকে বানিয়ে আনা গ্লুকোজ় বা ফলের রসের বোতলও আনেন। কিন্তু যাঁরা ডায়াবেটিক বা যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন, তাঁদের জন্য কী ধরনের পানীয় উপযোগী?

ছবি: সংগৃহীত।
ডায়াবেটিকদের খাওয়ার উপযোগী পানীয়
দিল্লির এক হাসপাতালের চিকিৎসক রিচা চতুর্বেদী জানাচ্ছেন, ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য শরবত বানাতে হলে প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, পানীয়টির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং গ্লাইসেমিক লোড কতটা? রিচা বলছেন, ‘‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল একটি খাবার কত দ্রুত শর্করায় ভাঙছে আর গ্লাইসেমিক লোড হল শর্করা যুক্ত একটি খাবার রক্তে শর্করার মাত্রাকে কতটা প্রভাবিত করছে। এর পাশাপাশি কখন, কতটা পরিমাণে খাওয়া হচ্ছে, তা-ও মাথায় রাখা জরুরি।’’
১। ডাবের জল বা নারকেলের জল

—ফাইল চিত্র।
গরমে শরীরকে আর্দ্র রাখতে নারকেল বা ডাবের জল সবচেয়ে ভাল পানীয়। কারণ, তাতে প্রাকৃতিক ভাবেই শর্করা কম রয়েছে। বেশি পরিমাণে আছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস। নারকেলের জলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও মাঝারি মানের। পরিমিত মাপে খেলে গ্লাইসেমিক রক্তে শর্করার মাত্রাকেও প্রভাবিত করে না। তাই এটি ডায়াবেটিকদের জন্য আদর্শ।
কতটা খাবেন? দিনে ১০০-১৫০ মিলিলিটার (আধ গ্লাস বা পৌনে এক গ্লাস) পর্যন্ত ডাবের জল খাওয়া যেতেই পারে। তবে বাড়তি নুন বা চিনি দেওয়া চলবে না।
কখন খাওয়া ভাল? বেলায়, অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে অথবা হালকা শরীরচর্চার পরে।
২। শসা-পুদিনার শরবত

—ফাইল চিত্র।
শসায় জলের পরিমাণ বেশি আর শর্করা অত্যন্ত কম, যা ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। একটি শসা, দু’-তিন চামচ পুদিনাপাতা কুচি, সামান্য লেবুর রস, জল আর ভাজা জিরের গুঁড়ো দিয়ে বানিয়ে নিন শরবত। তবে এতে চিনি বা নুন দেওয়া যাবে না।
কতটা খাবেন? প্রতি দিন অন্তত ২০০ মিলিলিটার করে এই শরবত খেতে পারবেন ডায়াবিটিসের রোগীরা।
কখন খাবেন? দুপুরে বা যে কোনও দু’টি আহারের মাঝামাঝি সময়ে এই শরবত খাওয়া যেতে পারে।
৩। টম্যাটোর রস

—ফাইল চিত্র।
টম্যাটোয় আছে লাইকোপেনের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস, এতে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত অল্প। টম্যাটোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম। মিক্সিতে টম্যাটো বেটে নিয়ে তাতে সামান্য গোলমরিচ আর লেবুর রস মিশিয়ে খান। রস ছেঁকে খেতে বারণ করছেন চিকিৎসক।
কতটা খাবেন? দিনে ১৫০ মিলিলিটার টম্যাটোর রস খাওয়া যেতে পারে।
কখন খাবেন? বেলায়, দুপুরে অথবা মধ্যাহ্ণভোজের আগে টম্যাটোর রস খাওয়া যেতে পারে।
৪। আমপোড়া শরবত

—ফাইল চিত্র।
কাঁচা আম পুড়িয়ে তার সঙ্গে মশলা মিশিয়ে যে শরবত বানানো হয়, তা ডায়াবিটিসের রোগীরাও খেতে পারেন। কারণ, কাঁচা আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তবে সেই শরবতেও নুন বা চিনি দেওয়া যাবে না।
কতটা খাবেন? দিনে ১৫০-২০০ মিলিলিটার আমপোড়া শরবত খেতে পারবেন এক জন ডায়াবিটিসের রোগী।
কখন খাবেন? বেলায়, বা দুপুরের খাওয়ার আগে খাওয়া যেতে পারে।

—ফাইল চিত্র।
কোন ফলের রস খাবেন না?
যে সমস্ত ফল প্রাকৃতিক ভাবে বেশি মিষ্টি, যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু, আঙুর ইত্যাদির গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও বেশি। তার উপর এই সমস্ত ফলের রস যখন খাওয়া হয়, তখন তাতে ফাইবারও থাকে না। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘তরমুজ, বেদানার রস মাঝেমধ্যে, অর্থাৎ সপ্তাহে ২-৩ বার অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। তবে তা সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন এবং ফাইবার খাওয়ার পরে খেতে হবে। পাশপাশি, রস পুরোপুরি না ছেঁকে, শাঁসসমেত খাওয়া গেলে আরও ভাল।’’