নিপাট আপাত নিরীহ দেখতে পনিরও যে নকল এবং ক্ষতিকর হতে পারে, তা জানা গিয়েছিল আগেই! এ বার এক সমাজমাধ্যম প্রভাবী দাবি করলেন, তেমন পনির সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিবেশেন করা হচ্ছে খাস মুম্বইয়ের তথাকথিত উঁচুদরের রেস্তরাঁতেও। একটি ভিডিয়োয় তিনি আয়োডিন টেস্ট করে দেখিয়েছেন, অভিনেতা শাহরুখ খানের পত্নী গৌরী খানের রেস্তরাঁ ‘তরী’তে যে পনির পরিবেশন করা হচ্ছে সেটি ‘নকল’। কারণ ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে পনিরের উপর আয়োডিন দেওয়ার পরে তার রং বদলে কালো হয়ে যাচ্ছে। অথচ একই পরীক্ষায় শিল্পা শেট্টি, বিরাট কোহলি কিংবা ববি দেওলের রেস্তরাঁয় পনিরের রং কালো বা নীল হচ্ছে না! তবে কি সমাজমাধ্যম প্রভাবীর দাবি সত্যি!
ওই সমাজমাধ্যম প্রভাবীর ভিডিয়োর নীচে গৌরীর রেস্তরাঁ ‘তরী’র কর্তৃপক্ষও একটি মন্তব্য করেছেন। তাঁরা লিখেছেন, ‘‘আয়োডিন টেস্টে শুধু শর্করার উপস্থিতি বোঝা যায়। তা থেকে পনিরের খাঁটিত্ব বোঝা যায় না।’’ একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, যেহেতু ওই পনির সয়াবিনের দুধ দিয়ে তৈরি, তাই আয়োডিনের প্রভাবে তার রং বদলে যাওয়া স্বাভাবিক। তার মানে কখনওই এমন নয় যে, ‘তরী’তে অতিথিদের নকল পনির দেওয়া হচ্ছে।

নিজের রেস্তরাঁয় গৌরী খান। ছবি: সংগৃহীত।
পনির আসল কি নকল তা জানার জন্য আয়োডিন টেস্ট কতটা কার্যকর?
এর উত্তর জানার জন্য আগে জানা দরকার নকল পনির কী দিয়ে তৈরি? আয়োডিন টেস্টই বা করা হয় কী ভাবে?
নকল পনির
নকল পনির বা ভেজাল পনির তৈরি হয় শর্করা, পাম অয়েল জাতীয় ক্ষতিকর ভোজ্য তেল এবং সিন্থেটিক মিল্ক সলিড দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি ইমালসিফায়ার এবং অ্যাডিটিভের মতো রাসায়নিকের ব্যবহারও করা হয়, যাতে পনিরের স্বাদ এবং আকার আসলের মতো দেখতে লাগে। পুষ্টিবিদেরা বারে বারে বলেছেন, ওই সব ক’টি উপকরণ দীর্ঘ দিন ধরে শরীরে যাওয়া ক্ষতিকর। হজমপ্রক্রিয়ার জন্য তো বটেই, কোনও কোনও ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা এবং অন্যান্য রোগও হতে পারে এ থেকে।

ভেজাল পনির সহজে চেনার জন্য আয়োডিন টেস্ট করার কথা বলেন অনেকেই। —ফাইল চিত্র।
নকল পনির কেন?
দুধ কাটিয়ে ছানা দিয়ে তৈরি পনিরের খরচ অনেক। তুলনায় ভেজাল পনির বানাতে খরচ কম। মুনাফাও বেশি। তা ছাড়া আসল পনির দ্রুত খারাপ হয়ে যেতে পারে, তুলনায় নকল পনির ভালও থাকে বেশি দিন।
আয়োডিন টেস্ট
ভেজাল পনির সহজে চেনার জন্য আয়োডিন টেস্ট করার কথা বলেন অনেকেই। পদ্ধতিটি হল পনিরের টুকরোর উপরে কয়েক ফোঁটা টিংচার আয়োডিন ফেলতে হবে। যদি পনিরের রং তাতে না বদলায় তবে বুঝতে হবে পনিরে শর্করা নেই। কিন্তু যদি পনিরের রং বদলে কালো বা নীল হয়ে যায়, তবে বুঝতে হবে তাতে শর্করা রয়েছে।

রান্না করার প্রক্রিয়াতেও পনিরে শর্করা ঢুকতে পারে। সে ক্ষেত্রেও আয়োডিন পরীক্ষায় পনিরের রং বদলাবে। — ফাইল চিত্র।
আয়োডিনের পরীক্ষা কতটা কার্যকর?
আয়োডিন পরীক্ষার উপর পুরোপুরি ভরসা করা যায় না বলে জানাচ্ছেন নয়ডার একটি বেসরকারি হাসপাতালের পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক কিরণ সোনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, ‘‘আয়োডিন পরীক্ষায় পনিরের রং বদলে যাওয়ার একটাই অর্থ, তাতে শর্করা রয়েছে। আয়োডিন পরীক্ষা থেকে এর বেশি কিছু জানা যায় না। বহু পনির প্রস্তুতকারীই পনিরের গড়ন ঠিক রাখার জন্য তাতে ময়দা মেশান। তা অ্যাডিটিভ বা ইমালসিফায়ার জাতীয় রাসায়নিকের মতো ক্ষতিকর নয়। আবার অনেক সময় রান্না করার প্রক্রিয়াতেও পনিরে শর্করা ঢুকতে পারে। সে ক্ষেত্রেও আয়োডিন পরীক্ষায় পনিরের রং বদলাবে। তার মানে এই নয় পনিরে ভেজাল আছে।’’
‘তরী’তে ওই তরুণ রান্না করা পনিরেই আয়োডিনের পরীক্ষা করেছিলেন। চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, পনিরে সত্যিই ভেজাল আছে কি না, তা জানার জন্য গবেষণাগারে পরীক্ষা করা জরুরি। কারণ পনিরে সত্যিই ক্ষতিকর ভেজাল পদার্থ মেশানো আছে কি না তা শুধু আয়োডিন টেস্টে ধরা পড়বে না।