১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Health

সঠিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সেরে উঠতে পারে ব্লাড ক্যান্সার, জানাচ্ছেন চিকিৎসক চক্রপাণি

ব্লাড ক্যান্সারের ধরন একবার নির্ণয় হয়ে গেলে, তার পরে চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।

ব্লাড ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব

ব্লাড ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২১ ০০:৪৭
Share: Save:

লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার, বর্তমান সময়ে অত্যন্ত মারাত্মক একটি রোগ। বিগত কয়েক দশক ধরেই দেখা গিয়েছে কোনও রোগীর শরীরে যদি ব্লাড ক্যান্সারের উপস্থিতি ধরা পড়ে, তবে তিনি অত্যন্ত উদ্বেল হয়ে পড়েন। যেন জীবনে সমস্ত কিছু শেষ হয়ে যাবে। এক অজানা মৃত্যুভয়! সত্যিই এক সময় এই ব্লাড ক্যান্সার অত্যন্ত জটিল এবং মারণ একটি রোগ ছিল। তবে সময় বদলেছে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কোনও রোগীর যদি ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে, তা হলে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, আর এই কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন চিকিৎসক অনুপম চক্রপাণি, অ্যাপোলো হসপিটালের হেমাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন বিভাগের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর।

অনুপম চক্রপাণি জানাচ্ছেন, “ব্লাড ক্যান্সার বরাবরই মারাত্মক একটি রোগ। মূলত তরুণ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই রোগে মৃত্যুর হার অনেকটাই বেশি। প্রতি বছর এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে ব্লাড ক্যানসার থেকে সারিয়ে তোলার চিকিৎসা রয়েছে আমাদের কাছে।”

পরিসংখ্যান বলছে, আমেরিকায় প্রতি বছর প্রায় দুই লক্ষেরও বেশি মানুষ ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সেখানকার তুলনায় ভারতের জনসংখ্যা অনেকটাই বেশি। ফলত আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি। ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের শরীরে এই রোগ বাসা বাঁধে।

যে কোনও বয়সে ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে। এর ফলে রক্তের মধ্যে থাকা উপাদানগুলির অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার ও গঠন হতে থাকে। সে লোহিত রক্ত কণিকা হোক বা শ্বেত রক্ত কণিকা হোক বা প্লেটলেট। সাধারণত ব্লাড ক্যান্সারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। একটি হল অ্যাকিউট বা তীব্র এবং অন্যটি হল ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী।

তীব্র ব্লাড ক্যান্সারের ফলে শরীরে হঠাৎ অপরিণত শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকে। যেটি শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যেই সব থেকে বেশি দেখা যায়। এটি দুই প্রকারে হতে পারে, তীব্র মাইলয়েড লিউকোমিয়া এবং তীব্র লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকোমিয়া।

অন্যদিকে, দীর্ঘস্থায়ী ব্লাড ক্যান্সারের ফলে দেহে তুলনামূলকভাবে পরিণত শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। মূলত ৫০-৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগটি প্রায়শই দেখা যায়। এটিও দুই প্রকারে হতে পারে, দীর্ঘস্থায়ী মাইলয়েড লিউকোমিয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকোমিয়া।

এছাড়াও আরও এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার দেখা যায়। যেটি লিম্ফোমা আকারে হতে পারে। যেটি প্রায় ৪৫ ধরনের হতে পারে। এবং অবশ্যই তা সতর্কভাবে নির্ণয় করা উচিত। এর কয়েকটি লক্ষণ হল, ঘাড়, কুঁচকির মতো শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া।

চিকিৎসক চক্রপাণির মতে, প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে তীব্র লিউকোমিয়ার তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। অন্যদিকে শিশুদের মধ্যে দুর্বলতা, অলসতা, রক্তপাত বা হঠাৎ করে জ্বরের মতো লক্ষণ দেখা যায়।

৫০ বা তার বেশি বয়স্কদের মধ্যে একাধিক মাইলোমার মতো লক্ষণ দেখা যায়। মাইলোমা হল অস্থি মজ্জার মধ্যে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। এর বিভিন্ন লক্ষণগুলি হল হাড়ের ব্যথা, রক্তাল্পতা, কিংবা রেনাল ফেলিউর ইত্যাদি।

“তীব্র ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, রোগ নির্ণয়ের জন্য আমরা সাধারণত অস্থি মজ্জা পরীক্ষা অথবা সিটোমেট্রি পরীক্ষা করি।”, জানাচ্ছেন চিকিৎসক চক্রপাণি। তাঁর মতে, ভারতে প্রায় ২০,০০০ শিশু প্রতি বছর লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হয়।

ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বলতে গিয়ে ডাঃ চক্রপাণি জানাচ্ছেন, “ব্লাড ক্যান্সারের ধরন একবার নির্ণয় হয়ে গেলে, তার পরে চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি উপলব্ধ রয়েছে। কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপি ইত্যাদি। আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ রোগ নিরাময়ের জন্য অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপনও করা হয়ে থাকে।”

চিকিৎসকের মতে, “বাচ্চাদের লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকোমিয়া হলে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে তা নিরাময়যোগ্য। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের তীব্র মাইলয়েড লিউকোমিয়ার ক্ষেত্রে তা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ নিরাময়যোগ্য।”

যে সমস্ত ক্ষেত্রে ব্লাড ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা যায় না, ডাঃ চক্রপাণি তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যালোজেনিক বা অটোলগাস প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে রোগীর আয়ু আরও ১০ থেকে ১৫ বছর বেড়ে যায়।

অন্যদিকে লিম্ফোমায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ডাঃ চক্রপাণি রিট্যুক্সিম্যাব, ব্রেনটুক্সিম্যাব এবং নিভোলুম্যাবের মতো থেরাপির কথা তুলে ধরেছেন, যেগুলি লিম্ফোমার ক্লোনাল ক্যান্সার কোষগুলিকে আক্রমণ করে এবং মেরে ফেলে। তিনি আরও জানিয়েছেন, “যদি লিম্ফোমাকে প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা যায়, তবে ৯০ শতাংশ রোগীকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা যেতে পারে।”

“আমাদের এখানে যে চিকিৎসা ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা ভারত তথা বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে তুলনীয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা রোগীদের রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় করে তাঁদের নতুন জীবন দিতে সক্ষম হয়েছি। সুতরাং যদি আপনার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে, তবে আতঙ্কিত হবেন না। আমরা আছি।”, এই বলেই শেষ করলেন চিকিৎসক চক্রপাণি।

অন্য বিষয়গুলি:

Health Blood Cancer Apollo Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy