Advertisement
১২ জানুয়ারি ২০২৫
Uncessary Watering of Eyes

অযাচিত অঝোর অশ্রুধারা, চিকিৎসা কী?

নেত্রনালির সমস্যা থেকে হতে পারে এই অসুখ। জেনে নিন এর চিকিৎসা ও নিরাময়

শ্রেয়া ঠাকুর
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৭
Share: Save:

অঝোরে ঝরছে অশ্রুজল, আপনি কাঁদতে না চাইলেও। ফুলে রয়েছে চোখের কোণ। ঠান্ডা লেগেছে ভেবে উড়িয়ে দিলে কিন্তু বিপদ! নেত্রনালির সমস্যা থেকেও কিন্তু হতে পারে এমন।

কাকে বলে নেত্রনালির সমস্যা?

আমাদের চোখের জল তৈরি হয় ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড তথা অশ্রুগ্রন্থি থেকে। এই গ্রন্থি থেকে বেশ কয়েকটি ডাক্ট দিয়ে চোখে জল আসে। চোখের পলক ফেলার মাধ্যমে সেই জল কর্নিয়ার উপরে ছড়িয়ে যায় এবং তার পর চোখের কোণ (যেটি নাকের দিকে অবস্থিত) দিয়ে বেরিয়ে নাকে প্রবেশ করে। এই বেরিয়ে যাওয়ার পথকে বলা হয় নেত্রনালি। কোনও কারণে এতে সংক্রমণ ঘটলে এই জল সেই পথে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে, অনবরত চোখ থেকে জল ঝরতে থাকে। একেই এক কথায় বলা চলে নেত্রনালির সমস্যা।

চক্ষুবিশারদ হিমাদ্রি দত্তের কথায়, “চোখ ভিজানোর পরে অতিরিক্ত জল নাকে প্রবেশ করে। এই নাকে প্রবেশের পথকেই বলা হয় নেসো-ল্যাক্রিমাল ডাক্ট বা নেত্রনালি। কোনও কারণে এটি বন্ধ হলেই জল পড়া ও সংক্রমণের সমস্যা দেখা যায়।”

চক্ষুবিশারদ জ্যোতির্ময় দত্ত জানালেন, “নাকের দিকে চোখের যে কোণ, সেখানে দুটো ফুটো রয়েছে। একে বলা হয় আপার ও লোয়ার ল্যাক্রিমাল পাঙ্কটা। এই দুই ফুটোর মধ্যে দিয়ে দুটো নল চলে গিয়েছে, যাদের বলা হয় ক্যানালিকুলাস। এ বার, চোখ ও নাকের মাঝখানে একটি ল্যাক্রিমাল স্যাক থাকে। এই স্যাক পাম্পের মতো কাজ করে, অর্থাৎ সেটি যখন প্রসারিত হয় তখন চোখ থেকে জল টেনে নেয়। যখন সংকুচিত হয় তখন জলটা নেসো-ল্যাক্রিমাল ডাক্ট দিয়ে নাকে চলে যায়। এ পথটি যদি বন্ধ হয়ে যায়, তা হলেই সমস্যা। মূলত স্ট্রেপটোকক্কাস, স্টেফাইলোকক্কাস, নিউমোকক্কাস ধরনের ব্যাক্টিরিয়া ওখানে সংক্রমণ তৈরি করে।”

চোখের জল নিকাশি ব্যবস্থার সমস্যা কাকে বলে?

ল্যাক্রিমাল পাঙ্কটা, ক্যানালিকুলাস বা নেসো-ল্যাক্রিমাল ডাক্টে কোনও চোট লাগল, কোনও সংক্রমণ ঘটলে জল নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় চোখ থেকে অনবরত জল পড়ার সমস্যা। পিচুটিও জমতে থাকে চোখের কোণে।

কী ভাবে নির্ণয় করা হয় এই অসুখ?

ডা. জ্যোতির্ময় দত্ত বললেন, “প্রথমেই নাক ও চোখের কোণে বুড়ো আঙুলের চাপ দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে পাঙ্কটা দিয়ে কিছু বেরোচ্ছে কি না। একে বলা হয় রিগারজিটেশন টেস্ট। যদি কিছু না বেরোয়, তখন দু’ফোঁটা ফ্লুরোসেন্ট ডাই দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখতে বলা হয়। দু’মিনিট বাদে চোখ খুলে যদি দেখা যায় ডাইটা চোখে তখনও রয়েছে, তখন বোঝা যায় নেত্রনালি বন্ধ।”

এ ছাড়াও একটা ভোঁতা সিরিঞ্জের সাহায্যে লোয়ার পাঙ্কটা দিয়ে ক্যানালিকুলাসে পরিশ্রুত জল পাঠানো হয়। একে বলা হয় সিরিঞ্জিং।

এ বার যদি লোয়ার পাঙ্কটা দিয়ে জল বেরিয়ে আসে, তা হলে সেখানে বা ক্যানালিকুলাসে সমস্যা। যদি আপার পাঙ্কটা দিয়ে বেরোয়, তা হলে ল্যাক্রিমাল স্যাক বা নেসো-ল্যাক্রিমাল ডাক্টে সমস্যা রয়েছে। ড্যাক্রোসিস্টোগ্রাফি বলে আর একটা পরীক্ষা রয়েছে। ডাই ইনজেক্ট করে, এক্স রে করে সমস্যা চিহ্নিত করা যায়।

তা হলে অঝোর অশ্রুধারার চিকিৎসা কী?

জন্মের পরে তিন সপ্তাহ অশ্রুগ্রন্থি সক্রিয় হয় না। তখনও যদি বাচ্চার চোখে পিচুটি হয়, অল্প জল থাকে তা হলে ধরে নেওয়া হয় জন্মগত ড্যাক্রোসিস্টাইটিস হয়েছে। মাকে ও বাবাকে বলা হয় নেসো-ল্যাক্রিমাল ডাক্ট ও ল্যাক্রিমাল স্যাক যেখানে রয়েছে সেখানে আঙুল দিয়ে চেপে জোরে মালিশ করতে।

এটায় কাজ না হলে প্রোবিং নামক একটি পদ্ধতি রয়েছে, তাতে শিশুকে অজ্ঞান করে ল্যাক্রিমাল প্রোব ব্যবহার করে বন্ধ নেত্রনালি খোলানো হয়। তাতে কাজ না হলে বেলুন ক্যাথিটার ডায়লেটেশন পদ্ধতি বা ইনকিউবেশন উইথ সিলিকন টিউব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

এতেও সমস্যা না কমলে ড্যাক্রোসিস্টোরাইনোস্টমি ছাড়া উপায় নেই। সার্জারির জন্য শিশুর বয়স চার থেকে ছ’বছর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হয়।

বড়দেরও নেত্রনালির সমস্যা হতে পারে

“সংক্রমণের পাশাপাশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে নেত্রনালি সরু হয়ে আসে। হয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, অথবা কখনও জল নিষ্কাশিত হয়, কখনও হয় না। ফলে, সেখান থেকে বারবার সংক্রমণ ঘটতে পারে,” বললেন ডা. হিমাদ্রি দত্ত।

জানা গেল, চোখের কংজাংটিভা বা নাক থেকে ব্যাক্টিরিয়া প্রবেশ করে নেত্রনালিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। অনেক সময় মিউকাস জমে চোখের কোণ ফুলে যায়, একে বলে মিউকোসিল। তখনই চিকিৎসা না হলে পায়োসিল হতে পারে, অর্থাৎ পুঁজ জমে। একেবারে চিকিৎসা না করালে ফাইব্রোসিস হয়ে যায়। এই সংক্রমণ থেকে কর্নিয়াল আলসারও হতে পারে। ডা. জ্যোতির্ময় দত্ত জানালেন, চল্লিশ থেকে ষাট বছরের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। বংশগত কারণে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণে অসুখটি হতে পারে। রোগীর ক্রনিক ড্যাক্রোসিস্টাইটিস হলে ড্যাক্রো সিস্টোরাইনোস্টমি করতে হবে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ল্যাক্রিমাল স্যাকের যদি খুব খারাপ অবস্থা হয় তবে তা ড্যাক্রোসিস্টেকটমি করে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়৷ এ ছাড়া এন্ডোনেসাল ডিসিআরও করা হয়। মাথায় রাখতে হবে, প্রতি অস্ত্রোপচারের আগে সিরিঞ্জিং বাধ্যতামূলক।

অ্যাকিউট ড্যাক্রোসিস্টাইটিসের ক্ষেত্রে প্রবল সংক্রমণ, ফোলা,ব্যথা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে জ্বরও আসে। তখন ওরাল ও টপিকাল অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনে অস্ত্রোপচার করা হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Health Lifestyle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy