এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হল লাল চোখ। —ফাইল চিত্র।
বর্ষা মানেই জল-কাদার বিড়ম্বনার সঙ্গে কিছু অসুখ-বিসুখের দাপট বৃদ্ধি পাওয়া। আর এই মরসুমের অসুখ মানেই অন্যতম কনজাঙ্কটিভাইটিস। চোখের কনজাঙ্কটিভা আক্রান্ত হলেই এই অসুখ হয়। সাধারণত, ভাইরাস, ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক আক্রমণে সংক্রমণ হয় চোখে।
এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হল লাল চোখ। এ ছাড়া চোখে এই অসুখ কোনও ভাবেই সারাসরি ছোঁয়া ছাড়া হয় না। চিকিৎসকদের মতে, বর্ষাকালে বাতাসে ভেসে বেড়ায় অনেক ভাইরাস। তার মধ্যে শক্তিশালী অ্যাডিনো ভাইরাস অন্যতম। চিকিৎসকদের মতে, তাদের কাছে যেই সব রোগী আসছেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই অ্যাডিনো জাতীয় ভাইরাসে আক্রান্ত। এই ভাইরাসের আক্রমণে কর্নিয়ায় ছোট ছোট দানা তৈরি হয়৷ যার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকে, চোখে ব্যথা হয়, পিচুটি জমে। এমন সময় চোখে আলো পড়লেও সমস্যা হয়।
এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ও সুস্থ দুই ধরনের মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা সতর্কতা প্রয়োজন। সুস্থ মানুষকে নজর রাখতে হবে, যাতে এই অসুখে আক্রান্ত না হন, আর আক্রান্তকে আরোগ্য লাভের পাশাপাশি তার থেকে এই অসুখ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে দিকেও নজর দিতে হবে। কনজাঙ্কটিভাইটিসের ভয় বাড়িতে বসে থাকা যায় না, কাজের প্রয়োজনে, পড়াশোনার তাগিদে বাড়ি থেকে বেরোতেই হয়। ভিড় মেট্রো, বাস, ট্রামেও উঠতে হয়। বাজারেও যেতে হয়। ভিড়ের মাঝে থেকেও কনজাঙ্কটিভাইটিস কী ভাবে প্রতিরোধ করবেন?
১) বারংবার হাত ধোয়া: কোভিডের সময় আমাদের এই অভ্যাস হয়েছিল। বারে বারে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস কিন্তু আবার শুরু করতে হবে। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এর থেকে ভাল উপায় আর নেই। ব্যাগে আবার স্যানিটাইজ়ার রাখতে হবে।
২) রোগীর থেকে দূরত্ব: বাড়িতে কারও কনজাঙ্কটিভাইটিস হলে কিংবা বাসে, ট্রামে কোনও রোগীর সম্মুখীন হলে চেষ্টা করুন তাঁর থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার। রোগীর চোখের দিকে তাকালেই আপনার এই রোগ হবে এমনটা নয়। তবে রোগী চোখে হাত দিয়ে কোনও জায়গা স্পর্শ করলে, ওই জায়গা যদি অজান্তে আপনিও ধরে ফেলেন এবং চোখে হাত দিয়ে ফেলেন তা হলে আপনার এই রোগ হতেই পারে। রাস্তায় বেরিয়ে ঘন ঘন চোখে হাত দেবেন না।
৩) নিজের জিনিস ভাগ করবেন না: তোয়ালে, বালিশের কভার, রুমালের মতো জিনিসগুলি বাড়িতে কারও সঙ্গে ভাগ করবেন না। এমনকি, মেকআপের জিনিসও কোনও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ভাগ করবেন না, অন্যেরটাও ব্যবহার করবেন না।
৪) চোখে চশমা: বাইরে বেরোলেই চোখে চশমা পড়ুন। পাওয়ার না থাকলেও এই সময়ে চোখের সুরক্ষার জন্য একটি পাওয়ার ছাড়া চশমা কিনে ফেলতে পারেন। এতে সাজেও বদল আসবে আর চোখ সুরক্ষিতও থাকবে। ভুল করেও চোখে হাত যাবে না।
৫) সংক্রমিত হলে বাড়িতে থাকুন: যদি আপনার কনজাঙ্কটিভাইটিস হয়, তা হলে ক’দিন বাড়িতেই থাকুন। শিশুরা আক্রান্ত হলেও স্কুলে পাঠাবেন না ভুলেও। আপনার থেকে সংক্রমণ যেন অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে, সে দিকেও সতর্ক থাকতে হবে। বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের থেকেও দূরত্ব রাখুন এই সময়।
৬) চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: আক্রান্ত হলে বাজারচলতি ড্রপ ব্যবহার করবেন না, এতে কর্নিয়ার ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়ম মেনে ড্রপ দিলে দিন পাঁচ-সাতেই সুস্থ হওয়া যায়। চোখে কালো চশমা পরে থাকলে বাইরের আলো ও জীবাণু দুই-ই আটকাবে। বার বার চোখে হাত দেওয়ার প্রবণতাও কমবে।
৭) স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন: আক্রান্ত হলে না সেরে ওঠা অবধি কম্পিউটার, টেলিভিশন ও মোবাইল স্ক্রিন থেকে সরে থাকতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy