মন থাকবে নিয়ন্ত্রণে, মনোবিদেদের পরামর্শ জেনে নিন। ছবি: ফ্রিপিক।
অফিসে কাজ করতে বসলেই মাথায় গিজগিজ করে হাবিজাবি চিন্তা? অল্পেই উদ্বেগ বাড়ে। মন সারা ক্ষণই চঞ্চল, অস্থির। দুশ্চিন্তা মন, মস্তিষ্ক কুরে কুরে খায়। প্রবল মানসিক চাপে হিমশিম খেতে হয়। এক দিকে সংসারের দায়িত্ব, অন্যদিকে পেশাগত জায়গায় কাজের চাপ— দুয়ে মিলিয়ে মনের উপর যেন জগদ্দল পাথর চেপে বসছে। মন শান্ত রাখা তো দূর মনঃসংযোগই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। হয়তো মন অন্য দিকে রাখতে গল্পের বই পড়তে বসলেন, দেখবেন মাথায় ঘুরছে বিভিন্ন রকম চিন্তাভাবনা। পড়াতে আর মন দিতে পারছেন না। যাঁরা লেখালিখি করেন, তাঁদেরও এমন সমস্যায় পড়তে হয়। কিছু ক্ষণ পরেই মন অন্যমনস্ক হয়ে যায়।
মনোবিদেরা বলছেন, পাহাড়প্রমাণ চাপের মাঝেও মন শান্ত রাখলে, সব কাজই সঠিক ভাবে হতে পারে। তার জন্য ধৈর্য ও মনের জোর বাড়াতে হবে। মনের চাপ বাড়লে তা অবসাদের কারণও হয়ে উঠতে পারে। তা হলে কী করণীয়? এ বিষয়ে মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলছেন, “পারিপার্শ্বিক ঘটনাপ্রবাহ হোক বা পেশাগত ক্ষেত্রের চাপ সামলাতে এবং নিজের মনকে শান্ত রাখতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। শরীর ঠিক রাখতে বিভিন্ন রকম ব্যায়াম, মেডিটেশন বা ধ্যান জরুরি। আর মন ভাল রাখতে নিজেকে সময় দিতেই হবে। যতটা সম্ভব নেটমাধ্যম থেকে দূরে থাকতে হবে। নেতিবাচক খবর পড়া, সমাজমাধ্যমে সারাদিন অন্যের পোস্ট দেখা এবং তা নিয়ে চর্চা করলে নিজের মনের চাপও উত্তরোত্তর বাড়তে থাকবে।”
গত কয়েক দশক ধরেই মানসিক চাপ মানুষের ইচ্ছাশক্তি হ্রাস করেছে। আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়েছে অনেকখানি। সময়ের তুলনায় ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া ও কোনও কোনও ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার সঙ্গে নিজেকে খাপ না খাওয়াতে পারা, এ সবের জন্যই থাবা বসাচ্ছে অবসাদ। তবে জীবনকে যদি একটু গুছিয়ে নিয়ে লক্ষ্য স্থির রাখা যায়, তা হলে মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সহজেই। এই বিষয়ে মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মত, “মাল্টিটাস্কিং কোনও কাজেই আদতে মন দিতে দেয় না। বরং অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ করে মানসিক চাপ বাড়ায়। তাই মাল্টিটাস্কিং ছেড়ে বরং এক একটি কাজকে ‘লক্ষ্য’ করে এগোন। এতে কমবে মানসিক চাপ। প্রতি দিন ঘুম থেকে ওঠার পর কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখুন শ্বাসের ব্যায়াম ও মেডিটেশনের জন্য। সারা দিনের কাজ, ব্যস্ততা, হুড়োহুড়িকে সামলাতে এর জুড়ি নেই।”
অনিন্দিতার বক্তব্য, কেবলমাত্র দায়দায়িত্ব বা কাজকর্ম থেকেই যে মানসিক চাপ তৈরি হয় তা নয়, চারপাশের সম্পর্কগুলি থেকেও প্রচণ্ড অস্থিরতা ও উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। ধরুন, সহকর্মী বা বসের সঙ্গে সম্পর্ক অথবা পরিবারের ঘনিষ্ঠ মানুষগুলির সঙ্গে সম্পর্কের রসায়ন কেমন সেসবও মনের উপর প্রভাব ফেলে। যে কোনও সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করুন৷ ঈর্ষা জাগলে সাবধান৷ উদ্বেগে ও দুশ্চিন্তার এ এক বড় কারণ৷ ভেবে দেখুন ঈর্ষার কারণ কিন্তু সেই চাহিদা৷ আর এক জন কিছু পেয়েছে, যা আপনি পাননি৷ কাজেই কী পাননি সেই হিসাবে না গিয়ে কী পেয়েছেন, তার তালিকা বানান। এবং আরও কী কী পেতে চলেছেন তার ছবি সামনে রেখে এগিয়ে চলুন৷ প্যারানয়েড ব্যক্তিত্বের মানুষ প্রচুর আছে সংসারে৷ যাঁরা অন্যদের ব্যঙ্গ–বিদ্রূপ করে আনন্দ পান৷ তেমন মানুষকে এড়িয়ে চলুন বা উপেক্ষা করতে শিখুন। রাগ পুষে রাখার অভ্যাস ছাড়তে হবে৷
কারও উপর খুব রাগ হলে বা মন ক্লান্ত লাগলে মিনিট দশেক সময় নিয়ে টান টান হয়ে বসে গভীর ভাবে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। এই প্রক্রিয়ায় মন একটু শান্ত হবে। মানসিক স্বাস্থ্য ভাল করতে দিনে নিয়ম করে কিছুক্ষণ প্রাণায়াম করুন। মাসখানেক প্রাণায়াম অভ্যাস করলেও মনের বদল সামান্য হলেও টের পাওয়া যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy