কোল্ড ডায়রিয়াকে ভয় নয়।
দিনকয়েক আগেই অহনার মায়ের হঠাৎ করে শুরু হল পেট খারাপ। অন্য সময়ে ঘরোয়া পথ্য কাজে দিলেও কিছুতেই এ বার যেন উপশম মিলছে না। বরং ক্রমশ দুর্বল হয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগল অহনার মায়ের। শেষে হাসপাতালে ভর্তি করার পরে জানা গেল অহনার মায়ের কোল্ড ডায়রিয়া হয়েছে। কী এই কোল্ড ডায়রিয়া? সাধারণ ডায়রিয়ার চেয়ে কি তা আলাদা? জেনে নেওয়া যাক কী ভাবে তা শনাক্ত করা যায় এবং তার চিকিৎসা।
শীতের মরসুম মানে চারিদিকে উৎসবের মেজাজ। প্রাণ খুলে বেড়ানো, খাওয়াদাওয়া চলতেই থাকে। তবে আনন্দ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকা জরুরি। না হলে রোগভোগে ছন্দপতন হবে। শীতে অ্যাডিনোভাইরাস, নোরোভাইরাস, রোটাভাইরাস ইত্যাদি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, জ্বরের সঙ্গে প্রকোপ বাড়ে কোল্ড ডায়রিয়ার। যদিও ডাক্তারি ভাষায় এই শারীরিক সমস্যাকে কোল্ড ডায়রিয়া বলে না, এটি সম্পূর্ণ লোকাল টার্ম। নাম যা-ই হোক না কেন সমস্যাটির চিকিৎসা ঠিক সময়ের মধ্যে শুরু না করতে পারলে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
রোগটি আসলে কী!
কোল্ড ডায়রিয়ার প্রসঙ্গে ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘কিছু কিছু ভাইরাস আছে যেগুলো শ্বাসনালি ও খাদ্যনালি উভয়কেই আক্রমণ করে। এই ধরনের সমস্যা শীতের দিনে বেশি হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জার কয়েকটা স্ট্রেন এবং রোটাভাইরাস এই সমস্যার মূল কারণ। সর্দি-কাশি, জ্বরের সঙ্গে লুজ মোশন বা পেট খারাপ, পেটে ব্যথা, ক্র্যাম্প, বমি ইত্যাদি হলে দুটোকে একসঙ্গে সাধারণত কোল্ড ডায়রিয়া বলে। যদিও এটা স্থানীয় টার্ম। গ্রীষ্ম বা বর্ষায় সাধারণত যে ডায়রিয়া হয়, তা প্রধানত দূষিত জলের জন্য সংক্রমণ থেকে হয়। এই ডায়রিয়া মূলত ব্যাক্টিরিয়াজনিত সমস্যা। আর কোল্ড ডায়রিয়ার কারণ ভাইরাস।’’ এই রোগ শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে বেশি হয়, মধ্যবয়সিদের সেই তুলনায় কম, কারণ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শিশু ও বয়স্কদের তুলনায় যুবক বা মধ্যবয়সিদের বেশি। কোল্ড ডায়রিয়া হওয়ার আর একটি কারণ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। অনেক সময়ে হাই ফিভার বা ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিঅ্যালার্জিক মেডিসিন খেয়ে থাকেন অনেকে। তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও হতে পারে এই সমস্যা। ‘‘যাঁদের সাইনাসের সমস্যা আছে বা সর্দি-কাশি হয়ে বুকে কফ জমে গিয়েছে, তাঁরা অনেকেই কফ বাইরে না ফেলে তা অনেক সময়ে গিলে ফেলেন। সেই সংক্রামিত কফ পেটে গিয়ে সমস্যা তৈরি করে, যা থেকে ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে হয় যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন ডায়াবেটিক, ক্যানসারের রোগীদের। এ ছাড়া এই সমস্যা শিশুদেরও হয়। তাই কফ যতটা পারবেন শরীর থেকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। শিশুদের অভিভাবকদেরও এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে,’’ বললেন ডা. তালুকদার।
চিকিৎসা
সর্দি-কাশি-জ্বরের সঙ্গে লুজ় মোশন, পেটে ক্র্যাম্প, বমি ইত্যাদি সমস্যা হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যা না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণ ডায়রিয়ার সঙ্গে কোল্ড ডায়রিয়ার চিকিৎসার কিছুটা পার্থক্য আছে। এই ব্যাপারে ডা. সুবীর মণ্ডল বললেন, ‘‘এই সমস্যাগুলো শুরু হলে সর্তক হতে হবে। সাধারণ ডায়রিয়াতে ওআরএস ওয়াটার বা স্যালাইন দেওয়া হয়, প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিকও দেওয়া হয়। যদিও প্রথম দিনই ঠিক কারণ নির্ধারণ না করেই ডায়রিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া সমর্থন করি না। ডায়রিয়া হওয়া মানে শরীর বিষাক্ত কিছুর জন্য সংক্রামিত হয়েছে, সেটা বার হয়ে যাচ্ছে। তাই সেটা বার করে দেওয়াই ভাল। কোল্ড ডায়রিয়া হয় ভাইরাসজনিত কারণে। ভাইরাস দেহে যে সকল টক্সিক পদার্থ উৎপন্ন করে, তার থেকেই হয় কোল্ড ডায়রিয়া। তাই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে একে দমন করা যায় না। অ্যান্টিবায়োটিক লড়াই করে ব্যাক্টিরিয়ার সঙ্গে। কোল্ড ডায়রিয়ায় না বুঝে ওআরএস জল খাওয়ালে হিতে বিপরীত হতে পারে। সেই সময় শরীর কতটা জলশূন্য হয়েছে, শিরা কতটা সঙ্কুচিত হয়েছে তা ইকোকার্ডিয়ো টেস্ট করে বুঝে নিয়ে তার উপর ভিত্তি করে ফ্লুইড দেওয়া উচিত।’’
সাবধানতা
চিকিৎসকেরা মনে করেন, যাঁদের অল্পতেই ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি হয় বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং শিশুদের ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে চললে কোল্ড ডায়রিয়ার কবলে পড়তে হয় না।
এই সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে পারলে অনেকটাই দূরে রাখা যাবে এ ধরনের সংক্রামক রোগব্যাধি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy