আলসেমিতে কাজে মন বসছে না, কী করে কাটিয়ে উঠবেন। ছবি: ফ্রিপিক।
আলস্যটা ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না কিছুতেই। সকালে চোখ খুলে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতেই যেন ক্লান্তিটা ফিরে আসে। রাতে ঘুমের পরেও কেন যে এত ক্লান্তি, তা বুঝতেই বুঝতেই অফিস যাওয়ার সময়টা এসে যায়।
কোনও রকমে শরীরটাকে টেনে কাজকর্ম সেরে অফিসে তো গেলেন, সেখানেও কি কাজে মন বসছে? খালি মনে হচ্ছে, কুঁড়েমি করেই দিনটা কাটিয়ে দিলে বেশ হত। কাজে আগ্রহ নেই, চনমনে ভাবটাই যেন উধাও। উৎসাহ কমে যাওয়ায় যে কোনও কাজেই দেরি হচ্ছে। কাজও মনের মতো হচ্ছে না কিছুতেই। ফলে উদ্বেগও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। মনের উপর চাপ যেন কয়েক মন ভারী পাথরের মতো চেপে বসছে। অতিরিক্ত আলসেমি শরীর ও মনের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।
এখনকার ব্যস্ত সময়ে দু’দণ্ড জিরোবার জো নেই। তার মধ্যেই শরীর, মন জুড়ে পাহাড়প্রমাণ ক্লান্তি। মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, আপনার অবচেতন মন কাজের ব্যাপারে উদ্যমী হতে দিচ্ছে না। এর কারণ হল অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা, মানসিক চাপ এবং অবশ্যই জীবনযাপনের কিছু ত্রুটি। খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, শরীরচর্চা না করা, তার উপরে নেশা করা, এ সবই আলসেমি দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে। তা হলে এর থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী?
আলস্য কাটিয়ে মন চনমনে করে তুলুন পাঁচ উপায়ে
১. শরীরচর্চা জরুরি
আলস্য কাটিয়ে উঠতে গেলে আগে জীবনযাপনে কিছু প্রয়োজনীয় বদল আনতে হবে। কুঁড়েমি করে খাওয়া বাদ দেওয়া চলবে না। আজ করব, কাল করব বলে শরীরচর্চা বাদ দিলে হবে না। রোজের একটা রুটিন তৈরি করুন। মনোবিদেদের পরামর্শ, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম এবং সকালে তাড়াতাড়ি ওঠা জরুরি। ঘুম ভেঙে গেলে আর বিছানায় গড়াবেন না। অন্তত মিনিট কুড়ি শরীরচর্চা করে নিন। জিমে যাওয়ার সময় না থাকলে বাড়িতেই হাঁটুন। ছাদে বা বাড়ির সামনে জোরে জোরে হাঁটুন। হালকা যোগব্যায়ামও খুব কার্যকরী। সকাল সকাল শরীরচর্চা করে নিলে সারা দিনটা ঝরঝরে লাগবে। রক্ত সঞ্চালন ভাল হবে, এন্ডোক্রিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়বে, ফলে কোনও ভাবেই আপনার ক্লান্তি আসবে না। আলসেমি করার ইচ্ছেও থাকবে না।
২. কাজে নতুনত্ব আনুন
গুছিয়ে কাজ করাটা খুব জরুরি। যে কাজটা রোজই করছেন তাতেই হয়তো আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে কাজের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ দুই-ই কমেছে। তাই কাজে নতুনত্ব আনা দরকার। প্রথমেই কাজের জায়গাটা ভাল করে গুছিয়ে ফেলুন। অফিসে যে ডেস্কে কাজ করছেন, সেখানটা সুন্দর করে সাজান। বাড়িতে কাজ করলে সেই জায়গাটা পরিচ্ছন্ন রাখুন। কাজের প্রক্রিয়ায় বদল আনুন। নতুন নতুন ভাবনাচিন্তা করুন। সময়কেও গুরুত্ব দিতে হবে। কখন কোন কাজটা করবেন, সেটা সময় হিসাবে ভাগ করে নিন। কাজ ফেলে রাখবেন না। তা হলেই দেখবেন আগ্রহ ফিরে এসেছে।
৩. দুশ্চিন্তা ছেড়ে মনের জোর বাড়ান
আমাদের রোজকার অভ্যাসে এমন কিছু ভুল আছে, যা মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মনোবিদেরা বলছেন, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা অবসাদ। মনের অসুখে বেশি ভুগছেন কমবয়সিরাই। এর কারণ হল দুশ্চিন্তা। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে গিয়ে অনেক বেশি চাপ নিয়ে ফেলছেন তাঁরা মনের উপরে। ফল আশানুরূপ না হলেই হতাশা গ্রাস করছে। তার থেকেই অবসাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। সব কাজেই যে একবারে সাফল্য আসবে, তা নয়। কিন্তু চেষ্টা ছাড়লে চলবে না। হতাশা থেকেই কাজে উৎসাহ কমছে। আর তখনই আলস্য পেয়ে বসছে। তাই মনের জোর, একাগ্রতা বাড়ানোর পরামর্শই দিচ্ছেন মনোবিদেরা।
৪. খাওয়াদাওয়ায় বদল আনতেই হবে
কম ঘুম, শরীরে জলশূন্যতা, পুষ্টিকর খাবারের অভাব থেকেও বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। হজমের গোলমাল দীর্ঘ দিন ধরে হতে থাকলে শারীরিক দুর্বলতা আসে। তার জের পড়ে মনের উপরেও। শরীর ঠিক না থাকলে কাজেও মন বসে না। তাই দিনভর যদি তরতাজা থাকতে হয়, তা হলে খাওয়াদাওয়ায় বদল আনতেই হবে। পুষ্টিবিদেরা জানাচ্ছেন, বাইরের খাবার একেবারে বর্জন করতে হবে। বাড়িতে কম তেলমশলায় রান্না করা খাবার খান। ভাত, রুটি, দুধ, মাছ, ফল, শাকসব্জি রোজকার খাবারে দরকার। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৫. মন ছটফট করলে ধ্যানে বসুন
হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাচ্ছেন, আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে ঠেকেছে, ঘুম আসছে না, বিছানায় এ পাশ-ও পাশ করেই রাত কাবার। প্রতি দিন দশ থেকে পনেরো মিনিট করে ধ্যান করুন। দেখবেন সপ্তাহখানেক বাদে অনেকটাই ফল পাচ্ছেন। উদ্বেগ কমছে, আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন। আলস্যও উধাও হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy