স্কুলব্যাগের ওজন কোন ক্লাসে কেমন হবে, বলে দিলেন চিকিৎসক। প্রতীকী ছবি।
পড়াশোনার চাপ বাড়ছে। সেই সঙ্গে স্কুলের ব্যাগও দিন দিন ভারী হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে ভারী ব্যাগ বহনের ফলে স্কুলপড়ুয়ারা ভুগছে পিঠের ব্যথার সমস্যায়। মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁদের সমীক্ষায় জানিয়েছেন, ইদানীং কালে পিঠের ব্যথা, মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়েই চিকিৎসকের কাছে বেশি আসছে খুদে পড়ুয়ারা। পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, পিঠে ভারী স্কুলব্যাগ নেওয়ার প্রভাব মেরুদণ্ডেও পড়তে শুরু করেছে। বেশি দিন এমন চললে মেরুদণ্ড বেঁকে যেতে পারে। শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
লীলাবতী হাসপাতালের অস্থি ও মেরুদণ্ডের চিকিৎসক সমীর রুপারেল জানিয়েছেন, দিনে ৮ থেকে ১০ জন পড়ুয়া আসে পিঠে ব্যথার সমস্যা নিয়ে। সকলেরই যে মেরুদণ্ডের সমস্যা হচ্ছে, তা নয়। তবে যে ভাবে স্কুলব্যাগের ওজন দিন দিন বাড়ছে, তাতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে মেরুদণ্ড ও স্নায়ুতে। ফলে মেরুদণ্ডের জটিল অসুখ স্কোলিয়োসিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।
কী এই স্কোলিয়োসিস?
চিকিৎসকের কথায়, মেরুদণ্ডের গঠনগত সমস্যা হল স্কোলিয়োসিস। এ ক্ষেত্রে প্রচণ্ড চাপের কারণে মেরুদণ্ড সোজা হয়ে না বেড়ে, বাঁকা হয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভারী ব্যাগ বইবার কারণে ছোটরাও এখন ‘জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক স্কোলিয়োসিস’-এ আক্রান্ত হচ্ছে। ১০ বছর বয়সের পর থেকে মেরুদণ্ড দ্রুত বাড়তে থাকে। সাধারণ ভাবে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত উচ্চতা বাড়ে। কিন্তু তার আগেই যদি মেরুদণ্ডের বৃদ্ধি থমকে যায়, তখন বিপদ হতে পারে। মেরুদণ্ডের হাড়, দুই হাড়ের মাঝের ‘ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক’, লিগামেন্ট, মাংসপেশি, মেরুদণ্ডের মাঝে যে স্নায়ু আছে, সবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন আর অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি থাকবে না।
স্কুলব্যাগের ওজন ঠিক কত হওয়া উচিত?
২০০৬ সালে এই নিয়ে আইন তৈরি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। বলা হয়েছিল, পড়ুয়াদের ব্যাগের ওজন শরীরের ওজনের থেকে ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। ভারী ব্যাগ যাতে বইতে না হয়, সে জন্য স্কুলে লকারের ব্যবস্থা রাখাও জরুরি। এই বিষয়ে সরকারি হাসপাতালের অস্থি চিকিৎসক সুব্রত গড়াই জানাচ্ছেন, এখনকার স্কুলপড়ুয়াদের ব্যাগ মানেই বোঝা। তাতে মোটা মোটা ৭-৮টা বই, গুচ্ছের খাতা, স্কুল থেকে দেওয়া ডায়েরি ছাড়াও পেনের বাক্স, টিফিন বাক্স, জলের বোতল, ছাতা বা বর্ষাতি, ক্যারাটে বা পিটি-র ক্লাস থাকলে আলাদা পোশাক, সবই থাকে। তাই ওজনও বাড়তে থাকে। শিশুর বয়স অনুযায়ী পিঠের ব্যাগের ওজন হওয়া জরুরি।
· প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ার ব্যাগের ওজন হওয়া উচিত ১ থেকে দেড় কেজি।
· তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের ব্যাগের ওজন হওয়া উচিত ২-৩ কেজি।
· ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুল ব্যাগের ওজন ৩-৪ কেজির বেশি হওয়াই উচিত নয়।
· নবম এবং দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের ব্যাগের ওজন ৫ কেজির বেশি হবে না।
ব্যাগ কী ভাবে ব্যবহার করা উচিত?
ব্যাগ নেওয়ার নিয়ম আছে। সুব্রতবাবুর কথায়, স্কুলব্যাগে দুটো স্ট্র্যাপ থাকা জরুরি। যাতে ব্যাগের ভার দুই কাঁধেই সমান ভাবে পড়ে।
ব্যাগ যেন কোমরের নীচ অবধি না ঝোলে। তা হলেই সেটিকে ভারী মনে হবে।
এক কাঁধে ব্যাগ নিলেই পিঠ-কোমরে চাপ পড়বে। এই অভ্যাস ক্ষতিকর। খুদে পড়ুয়ারা যেন কখনওই তা না করে।
প্রয়োজনে টিফিন বাক্স, জলের বোতল বা ছাতার জন্য আরও একটি হাতব্যাগ নেওয়া যেতে পারে। তা হলে পিঠের ব্যাগের ওজন কমবে।
বাবা-মায়েরা খেয়াল রাখবেন, খুদের পিঠ বা কোমরে ব্যথা হচ্ছে কি না। যদি তেমন ব্যথা হয়, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy