ওজন কমাতে চাইছেন, অথচ খাচ্ছেন মুখরোচক খাবার। অপরাধ বোধ হচ্ছে না, তা নয়। কিন্তু নিজেকে শান্ত করছেন আজ থাক, কাল থেকে কড়া ডায়েটে চলবেন এটা বুঝিয়ে। এমন ভাবনায় অভ্যস্ত কমবেশি অনেকেই। কারও আলসেমি শরীরচর্চায়, কেউ আবার লোভনীয় খাবার দেখলে সংযম করতে পারেন না। স্বাভাবিক ভাবেই অধরা রয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত ফল। তবে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে ‘হারা হাচি বু’। বিষয়টি কী?
এটি হল জাপানি দর্শন যেখানে নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাসের কথা বলা হয়েছে। পেট আশি শতাংশ ভরে গেলেই খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে, খাওয়া নিয়ে এমনই ভাবনায় বিশ্বাসী জাপানিরা। একেই বলা হয় ‘হারা হাচি বু’।
বয়স যে সংখ্যামাত্র, তা মনে হতেই পারে এ দেশের বাসিন্দাদের দেখে। সুস্থ শরীরে লম্বা জীবন কাটাতে পারার জন্যই জাপানের ওকিনওয়ার সুনাম। শতায়ু পার করেছেন এমন অনেকেই আছেন এই শহরে।
অনেকেই মনে করেন, জাপানিদের সুস্থ এবং সুন্দর জীবনের রহস্য লুকিয়ে তাঁদের খাদ্যাভ্যাসে। হারা হাচি বু-র ভাবনাও এ দেশে বহু পুরনো। পুষ্টিবিদ শ্রুতি কে ভরদ্বাজের কথায়, সচেতন ভাবে পরিমিত খাদ্যাভ্যাসের কথা বলা হয়েছে এখানে।
উপকারিতা
ওজন কমাতে সহায়ক: অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়বে খুব স্বাভাবিক। এই নিয়মে সামান্য একটু পেট খালি রেখে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২০১৫ সালে ‘ইটিং বিহেভিয়ার্স’ নামে জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, এমন খাদ্যাভ্যাস অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার প্রবণতার পাশাপাশি লোভনীয় খাবার দেখলে খাই খাই ভাব কমাতে সাহায্য করে। পরিমিত এবং সচেতন খাদ্যভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করে।
হজম: বদহজমের অন্যতম কারণই হল ভাজাভুজি এবং অতিরিক্ত খাওয়া। এই পদ্ধতিতে কী খেতে হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা না হলেও, পরিমিত খাবারের কথা বলা হয়েছে। একসঙ্গে অনেকটা পরিমাণ খেলে পাচকরস এবং উৎসেচকেরও কাজ করতেও বাড়তি সময় লাগে। খাবারের পরিমাণ তুলনামূলক কম হলে পাচকরস দ্রুত কাজ করতে পারে। হজম করা সহজ হয়।
আরও পড়ুন:
পরিমিত খাদ্যগ্রহণ, উচ্চ ক্যালোরির প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করলে শরীর ভাল থাকে। ডায়াবিটিস, হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমে এতে। ২০১৬ সালে ‘আমেরিকান জার্নাল অফ লাইফস্টাইল মেডিসিন’-এ প্রকাশিত গবেষণার ফল বলছে, অতিরিক্তি খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেওয়ার মতো খাদ্যাভ্যাস বার্ধক্যের গতি কমিয়ে দিতে সহায়ক।
কী ভাবে খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করবেন?
১. পেট খালি থাকলে অনেকেরই আরও কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হতে পারে। সে কারণেই বলা হয়েছে এমন খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করতে হলে ধীরে খেতে হবে। অন্তত ২০ মিনিট ধরে। দীর্ঘ সময় ধরে খেলে মস্তিষ্কে সঙ্কেত পৌঁছবে অনেকটা খাওয়া হচ্ছে, যেটা দ্রুত খেলে কখনওই সম্ভব নয়।
২. বড় থালায় অল্প খাবার থাকলে, শুরু থেকেই মনে হবে পেট ভরবে না। বিষয়টি কিছুটা মানসিকও। তবে যদি পরিমিত খাবার ছোট থালা এবং বাটিতে খাওয়া হয়, তা হলে মনে যথেষ্ট পরিমাণ খাবার রয়েছে।
৩. পেটে খিদে না থাকলেও অনেকে চোখের খিদেতে খেয়ে নেন। কোনটা মনের খিদে কোনটা নয়, তা বোঝা দরকার বলছেন পুষ্টিবিদ। খাওয়া সম্পর্কে একটু সচেতন হলেই এই অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।
৪. খাওয়ার সময়ে টিভি দেখা, মোবাইল চালিয়ে রাখার অভ্যাস থাকে বেশির ভাগেরই। তবে ‘হারা হাচি বু’ খাওয়ার সময়ে শুধু খাবারের দিকেই মন দেওয়ার কথা বলে। সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে, প্রতিটি খাবারের স্বাদগ্রহণ এর অন্যতম শর্ত।