হাত-পায়ে ঝিঁঝি ধরে কেন? ছবি: শাটারস্টক।
হাতে বা পায়ে ঝিঁঝি ধরার বিষয়টি নিয়ে সকলেই অবগত। অনেক সময় পা বা হাতের উপর দীর্ঘ ক্ষণ চাপ পড়লে বা একই ভঙ্গিতে বসে বা শুয়ে থাকলে সাময়িক যে অসাড় অনুভূতি তৈরি হয়, সেটিকেই সাধারণত ‘ঝিঁঝি ধরা’ বলা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘টেম্পোরারি প্যারেসথেশিয়া’, ইংরেজিতে এটিকে ‘পিনস অ্যান্ড নিডলস’ও বলা হয়ে থাকে।
এই ঝিঁঝি ধরার অনুভূতিটিকে মোটামুটি ভাবে তিন ধাপে বিভক্ত করা যায়।
প্রথম ধাপে কিছুটা অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়, এই সময় মনে হয় যেন ত্বকের ভিতর অসংখ্য পিপড়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। এই বিষয়টিকে ‘কমপ্রেশন টিঙ্গলিং’ বলা হয়। দ্বিতীয় ধাপটি সাধারণত শুরু হয় পাঁচ-দশ মিনিট পর। এই ধাপে হাত বা পায়ের সংশ্লিষ্ট অংশটি অসাড় হয়ে আসে। তৃতীয় ও শেষ ধাপটি শুরু হয় চাপ অপসারণ করার পর। এই অংশটিকেই ইংরেজিতে ‘পিনস অ্যান্ড নিডলস’ বলা হয়। এই সময়ে মনে হয় কেউ যেন অসংখ্য সুচ দিয়ে একসঙ্গে ওই অংশে খোঁচা দিচ্ছে। তবে সাধারণত কিছু ক্ষণের মধ্যেই অসাড়তা এবং খোঁচা লাগার মতো অস্বস্তিকর অনুভূতি চলে গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।
কেন হয় এমনটা?
মানবদেহের সর্বত্র অসংখ্য স্নায়ু রয়েছে, এই স্নায়ুগুলি মস্তিষ্ক ও দেহের অন্যান্য অংশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করে। বসা বা শোয়ার সময় এই স্নায়ুর কোনও একটিতে চাপ পড়তে পারে। স্নায়ুতে চাপ পড়ার ফলে শরীরের ওই অংশ থেকে তথ্য মস্তিষ্কে ঠিক ভাবে পৌঁছতে পারে না। ফলে শরীরের ওই অংশে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এর ফলে ঝিঁঝি ধরতে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে চাপ অপসারিত হলে, একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ রক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রবাহিত হয়, পাশাপাশি, প্রচুর পরিমাণ তথ্য মস্তিষ্কে প্রবাহিত হতে শুরু করে। ফলে সুচ ফোটার অনুভূতি তৈরি হয়।
কোন কোন শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে ঝিঁঝির সমস্যা বাড়ে?
১. দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবিটিসে ভুগলে তার প্রভাব পড়ে স্নায়ুর উপর। স্নায়ুর এই সমস্যার কারণেই ডায়াবেটিক রোগীদের মাঝেমধ্যেই পায়ে ঝিঁঝি ধরে।
২. অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার শেষের পর্যায়ে যখন শিশুর ওজন বাড়তে শুরু করে, তখন জরায়ুর চাপে পায়ের স্নায়ুগুলির উপর চাপ পড়তে শুরু করে। সেই সময় হবু মায়েদের ঝিঁঝির সমস্যা হয়।
৩. ভিটামিন বি ১ ও বি ১২ প্রভাবে সারা শরীরে স্নায়ুগুলি ঠিক মতো কাজ করে। শরীরে এই ভিটামিনগুলির ঘাটতি হলেও ঝিঁঝি ধরার সমস্যা বেড়ে যায়।
৪. হাইপোথাইরয়েডিজ়মের ক্ষেত্রে অর্থাৎ যখন শরীরের থাইরয়েড গ্রন্থি ঠিক মতো থাইরয়েড হরমোন ক্ষরণ করতে পারে না তখনও হাতে-পায়ে ঝিঁঝি ধরে।
৫. অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে অ্যালকোহলিক নিউরোপ্যাথির সমস্যা শুরু হয় কারও কারও। এই রোগে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই রোগীদেরও ঘন ঘন হাতে পায়ে ঝিঁঝি ধরে।
৬. সুষুম্নাকাণ্ডের স্নায়ু কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে রোগী র্যাডিকিউলোপাথিতে আক্রান্ত হন। এই অবস্থায় রোগীর হাতে ও পায়ে ঝিঁঝি ধরে ও পরে পিন ফোটার মতো যন্ত্রণা শুরু হয়। কোনও কোনও সময় এই যন্ত্রণা দীর্ঘ সময়ের পরেও কমতে চায় না। তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় অস্ত্রোপচার করানো ছাড়া উপায় থাকে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy