বঙ্গের মাথায় যতই হিমালয় আর পায়ের কাছে সাগর ছুঁয়ে থাক, গ্রীষ্মে উত্তর বাদে বাকি সব জেলাগুলিরই এখন-তখন দশা হয়। গত বছরই মে মাসের তাপমাত্রা বাংলায় ঊর্ধ্বসীমার রেকর্ড ছুঁয়েছিল। এ বছর অবশ্য এপ্রিলের প্রথমার্ধেই পারদ চল্লিশ ছুঁইছুঁই। ভরদুপুরে রাস্তায় বেরোনো দায়। ঝাঁ-ঝাঁ রোদে মাথা ধরছে চৈত্রেই। এখনও বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ বাকি। তার পরেও বর্ষা পুরোদমে না আসা পর্যন্ত চলবে বিস্তৃত গ্রীষ্মকাল। ফলে আগামী তিন মাসে বাড়তে থাকা পারদ এবং রুক্ষ্ম আবহাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়া স্বাভাবিক ব্যপার। হিট স্ট্রোক-সহ নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। এমন ‘প্রখর দারুণ’ তাপে বাঁচার উপায় হিসাবে এককালে পরনের পোশাকের পকেটে পেঁয়াজ রাখতে বলা হত। বিশ্বাস ছিল, তাতে গরমের অস্বস্তি কমবে। এমনকি, হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও কাটানো যেত বলে মানতেন পুরনো দিনের মানুষেরা। কিন্তু সেই টোটকা কি সত্যিই কার্যকরী?

ছবি: সংগৃহীত।
পেঁয়াজ কি হিট স্ট্রোক আটকাতে পারে?
পেঁয়াজ শরীর ছুঁয়ে থাকলে হিট স্ট্রোক আটকানো যাবে এর কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখনও। তবে পেঁয়াজ যে শরীরে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে তা প্রমাণিত। ভারতেরই বহু রুক্ষ্ম প্রদেশে, যেখানে গরম বাংলার থেকেও বেশি খর, সেখানে এখনও গরমে টাটকা পেঁয়াজের রস খাওয়ার চল আছে। দিল্লির এক প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ কণিকা নারাং জানাচ্ছেন, পেঁয়াজে শরীর ঠান্ডা রাখার প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। যেমন কোয়ারসেটিন এবং সালফার। কণিকা একটি প্রতিবেদনে লিখছেন, ‘‘কোয়ারসেটিন এবং সালফার শরীরে ঘাম তৈরি করে। সেই ঘামই শরীরকে অতিরিক্ত তাপ কমিয়ে ঠান্ডা রাখে।’’
আমেরিকার ন্যাশনাল হেল্থ ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র এ-ও বলছে যে, পেঁয়াজে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যালস মুক্ত রাখে। যে ফ্রি র্যাডিক্যালস শরীরের অধিকাংশ রোগ এবং বার্ধক্যের জন্য দায়ী। যা গরমে শরীরকে আরও বেশি অসুস্থ করে তুলতে পারে। পেঁয়াজ সেই ফ্রি র্যাডিক্যালস থেকে শরীরকে বাঁচালে, শরীরের লড়াই করার ক্ষমতা বাড়বে।

ছবি: সংগৃহীত।
তবে পুষ্টিবিদ কণিকা বা এনআইএইচে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে যা বলা হয়েছে, তার কোনওটিই পোশাকে পেঁয়াজ রাখার প্রসঙ্গে নয়। পেঁয়াজ খেলে কী উপকার হতে পারে, সে কথাই বলা হয়েছে দু’ক্ষেত্রে। কিন্তু পোশাকের পকেটে পেঁয়াজ রাখলে তা শরীর থেকে বাড়তি তাপ কমাতে পারবে কি?
পেঁয়াজ কি শরীর থেকে তাপ শোষণ করতে পারে?
বিজ্ঞানে এর কোনও প্রমাণ নেই। গরমের দেশে এই টোটকাকে কার্যকর বলে মানা হলেও বিজ্ঞান বলছে পেঁয়াজ পকেটে রাখার থেকে গরম ঠেকাতে বরং খাওয়াই উপযুক্ত, তাতে কাজ হওয়ার অনেক বেশি নিশ্চয়তা রয়েছে।