খেতে খেতে জল খেতে নেই। বলেন মা-ঠাকুরমারা। তাঁদের বক্তব্য, খাওয়ার সময় জল খেলে হজম হয় না ঠিকমতো। কেউ আবার বলেন, খাওয়ার সময় হাতের কাছে জল না-থাকলে তো গলায় খাবার আটকে যাবে! বরং অল্প জল খেলে হজম ভাল হয়। কারও বক্তব্য, খাবার সময় ঢক ঢক করে জলই যদি খেতে হয়, পেট ভরে গেলে খাবার খাবে কখন? নানা মুনির নানা মত। কিন্তু আদতে কোনটি ঠিক?
আসলে খাওয়ার সময় জল খাওয়া বা না-খাওয়া পুরোটাই ব্যক্তিবিশেষ এবং কী খাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করছে, বলছেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। তবে যে অনেকে বলেন হজমের গন্ডগোল হয়? সুবর্ণের মতে, এই কথার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। যদিও পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন অন্য কথা। তিনি বলছেন, ‘‘খাওয়ার সময় অতিরিক্ত জল খেলে কারও ক্ষেত্রে হজমে সমস্যা হলেও হতে পারে। কারণ, এতে হজমে সহায়ক উৎসেচক, পাচক রস জলে দ্রবীভুত হয়। তবে, খেতে গিয়ে বিষম লাগলে বা শুকনো খাবার খেতে গিয়ে গলা শুকিয়ে গেলে জল তো খেতেই হবে।’’
আরও পড়ুন:
পুষ্টিবিদের কথায়, খেতে বসে অল্প জল খেলে অসুবিধা নেই। তবে শিশুকে খাওয়াতে গিয়ে এক গ্রাস ভাতের পর এক গ্লাস করে জল খাওয়ালে মুশকিল। এতে শিশু চিবোয় না, তাকে খাবার জল খাইয়ে গিলতে সাহায্য করা হয়। ঠিকমতো না-চিবোলে পাচক রস নিঃসৃত হবে না, যা পরবর্তী কালে হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
তবে এই নিয়ে চিকিৎসকের বক্তব্য, “খাওয়ার সময় জল খাওয়া বা না-খাওয়ার সঙ্গে হজম হওয়া, না-হওয়া, কোনওটাই যুক্ত নয়। শুকনো খাবার খেলে জল খেতেই হবে। সোজা কথায়, তেষ্টা পেলে জল খাবেন, না-হলে নয়।”
কেউ কেউ বলেন, খাওয়ার আগে বা পরে জল খাওয়া উচিত। অনেকেই এই নিয়ম অনুসরণ করেন। শম্পার মতে, পুষ্টিবিদ হিসাবে তিনিও এমন পরামর্শই দিয়ে থাকেন। খাওয়ার সময় অতিরিক্ত জল না-খেয়ে, খেতে বসার আধ ঘণ্টা বা ১৫ মিনিট আগে বা খাওয়ার আধ ঘণ্টা পরে জল খাওয়া ভাল বলে মনে করেন তিনি।
দিনভর জল কখন, কী ভাবে খাওয়া দরকার?
শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ সঠিক ভাবে সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া জরুরি। এক জন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের দিনে ২-৩ লিটার জল খাওয়া দরকার। চিকিৎসকের কথায়, শরীর ভাল রাখতে সারা দিনে পরিমাণ মতো জল খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদ সতর্ক করছেন আরও একটি বিষয়ে। অনেকেই ঘুম থেকে উঠে ঢক ঢক করে ২-৩ গ্লাস জল খেয়ে নেন। এক বারে ২০০-২৫০ মিলিলিটারের জল খাওয়া ঠিক নয়। আর বোতল থেকে সরাসরি নয়, গ্লাসেই জল খাওয়ার অভ্যাস করা ভাল।