Advertisement
E-Paper

আতঙ্কিত নয়, সাবধান হন

এইচএমপিভি বা হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাসে আদৌ কি আতঙ্কিত হওয়ার দরকার আছে? কী বলছেন চিকিৎসকরা? রইল বিশদে

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৩৯
Share
Save

শহরে এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলল, চিন থেকে ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস, এর জেরে ফের হতে পারে লকডাউন... এমনই বিভ্রান্তিকর তথ্যে সম্প্রতি সরগরম সমাজমাধ্যম। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুর সময়ের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়ায় এমন তথ্যে ছড়াচ্ছে আতঙ্কও। তবে আদৌ কি আতঙ্কিত হওয়ার কারণ আছে? সত্যিই কি এই ভাইরাস চিন থেকে ছড়াচ্ছে? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?

এইচএমপিভি ভাইরাস কী?

হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) ফ্লু জাতীয় একটি ভাইরাস বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এটি ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রথম পাওয়া গিয়েছিল। এই ভাইরাসের সংক্রমণে সর্দি, কাশি, জ্বর, দুর্বলতার মতো উপসর্গ দেখা যায়। সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে তা সেরেও যায়। সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায় জানালেন, সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে কেউ এলে তাঁর দেহে এই ভাইরাস থাকতেই পারে। কিন্তু তা সাধারণত গুরুতর আকার নেয় না বলে পরীক্ষা করে দেখা হয় না, কারণ সেটি ব্যয়সাপেক্ষ। এই সংক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত বিরল। তীব্র সংক্রমণের জেরে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে রোগীকে, তেমন ঘটনাও বিরল। যোগীরাজ বলেন, “এই ভাইরাস অনেক দিন ধরেই রয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত যে তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে, তা থেকে জানা যায় যে মোট ভাইরাল ইনফেকশনের প্রায় ৫ শতাংশ এইচএমপিভি-র জন্য হয়। ফলে সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা ইতিমধ্যেই রয়েছে। চরিত্র বদল না হলে এতেই অনেকটা প্রতিরোধকরা যাবে।”

এই ভাইরাসের চরিত্র বদল না হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভাইরাসটি যদি কোনও ভাবে আমূল পরিবর্তিত হয়ে বিপজ্জনক রূপ ধারণ করে, সে ক্ষেত্রে সাবধান হওয়ার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। চিনে যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেই প্রসঙ্গে চিকিৎসক যোগীরাজ বললেন, “চিনে সংক্রমণের ঠিক কী অবস্থা, তা নিয়ে তেমন তথ্য সামনে আসেনি। ভাইরাসের পরিবর্তন হয়েছে কি না, রোগীদের অক্সিজেন লাগছে কি না— এমন তথ্য চিন থেকে পাওয়া যাবে, সেই আশাও নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তেমন আলোকপাত করতে পারছে না এই বিষয়ে।” তিনি জানাচ্ছেন, সম্প্রতি চিনা নতুন বছর উপলক্ষে প্রবাসী অনেকেই দেশে ফিরেছেন। তাঁরা আবার চিন থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফিরে যাবেন। সে ক্ষেত্রে সংক্রমণ বেশি ছড়াবে কি না, সে দিকে নজর রাখার প্রয়োজন আছে।

কী ভাবে ছড়ায় সংক্রমণ

অন্য ফ্লু জাতীয় ভাইরাসের মতোই ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায় সংক্রমণ। হাঁচি-কাশির ড্রপলেট, সংক্রমিত কোনও জিনিসে হাত লেগে গেলে তা থেকে ছড়াতে পারে এই ভাইরাস।

কারা সাবধান হবেন

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ বললেন, “সব ভাইরাসই মাইল্ড, মডারেট বা সিভিয়র হতে পারে। এর কিছুটা নির্ভর করে ভাইরাসের উপরে, কিছুটা কার দেহে সংক্রমণ হয়েছে, তার উপরে। প্রবীণ এবং যাঁদের নানা কোমর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ গুরুতর রূপ নিতে পারে। কোভিডের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার দেখা গিয়েছিল। যাঁদের কোমর্বিডিটি ছিল না, তাঁদের সংক্রমণ তেমন কাবু করতে পারেনি।” তিনি জানাচ্ছেন, শিশুদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের আকার কিছুটা ছোট হয়, ফুসফুসের পাইপও ছোট থাকে। তাই সংক্রমণের জেরে সেখানে তাড়াতাড়ি ব্লক তৈরি হওয়ার ভয় থাকে। ভাইরাস বেশি করে ফুসফুসে পৌঁছে গেলে অক্সিজেন পরিবহণের ক্ষমতা কমে। তাই কোনও শিশুর জন্মগত ভাবে ফুসফুস দুর্বল থাকলে, তাকে সাবধানে রাখতে হবে। সাধারণ সর্দি-কাশির উপসর্গে পরীক্ষা করালে হয়তো এই ভাইরাস ধরা পড়তে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরীক্ষা করানোরও প্রয়োজন পড়ে না। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি জ্বর, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া ও খাওয়া কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা গেলে বুঝতে হবে শ্বাসতন্ত্রে বেশি প্রভাব পড়েছে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন। এই তিনটি উপসর্গ না থাকলে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।

পালমোনোলজিস্ট অনির্বাণ নিয়োগী বললেন, “পঁয়ষট্টি বছরের বেশি বয়স হলে বা যাঁদের দেহে অন্য রোগ যেমন ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, কিডনির রোগের কারণে এমনিই প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ভয় বেশি। ভাইরাস সংক্রমণ এঁদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার মতো রূপ নিতে পারে। তাই কোনও রোগ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে।”

সাবধানতা

শীতের সময়ে এমনিতেই শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন অনির্বাণ নিয়োগী। এর কারণ মূলত শহরাঞ্চলের অতিরিক্ত দূষণ। বাইরে গেলে তাই মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। এইচএমপিভি ভাইরাস রূপ বদল না করলে ভয়ের কিছু নেই। তীব্র সংক্রমণ না ছড়ালেও একসঙ্গে বহু মানুষের মধ্যে অল্প সংক্রমণ হলে সেটা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই যদি দেখা যায় এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে, সে ক্ষেত্রে ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণ এড়াতে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজ়ার ও মাস্কের ব্যবহার, সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে দূরত্ব বজায় রাখা, চোখে-মুখে হাত না দেওয়ার মতো নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে।


(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

HMPV

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy