গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বলিউড অভিনেত্রী মালাইকা অরোরার বাবার আত্মহননের ঘটনা আরও এক বার মনে করিয়ে দেয়, বার্ধক্যে অবসাদ কতটা ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। মালাইকার বাবা প্রয়াত অনিল মোহতা ছিলেন পেশায় নাবিক। কয়েক বছর আগে কর্মজীবন থেকে অবসর নেন তিনি। স্ত্রীর সঙ্গে বহু বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদও হয়। অবশ্য, বিচ্ছেদের কয়েক বছর পর থেকে তাঁরা আবার এক ছাদের তলায় থাকতে শুরু করেন। যদিও, আত্মহত্যার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে নাকি দুই মেয়েকে ফোনে জানিয়েছিলেন যে, তিনি খুবই ক্লান্ত। তার পরেই প্রশ্ন উঠছে যে, এই ক্লান্তি কতটা মানসিক? মনের জোর কি একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছিল?
প্রবীণদের মধ্যে অবসাদ জাঁকিয়ে বসার নেপথ্যে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। তার মধ্যে অন্যতম হল একাকিত্ব। একটা বয়সের পর সন্তান হয়ে ওঠে একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু বিদেশি সংস্থায় মোটা মাইনের চাকরি আর প্রবাস জীবনের হাতছানিকেই বেছে নেন অনেকেই। ছেলেমেয়েরা বিদেশে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজেদের জীবন নিয়ে। এ দিকে, বৃদ্ধ বাবা-মা ক্রমশই একা হয়ে যেতে থাকেন। একরাশ মনখারাপ সারা ক্ষণই তাঁদের আষ্টেপৃষ্ঠে থাকে। তবে শুধু ছেলেমেয়ে দূরে থাকলে কিংবা তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা এলেই যে অবসাদ গ্রাস করে, তা কিন্তু নয়। সঙ্গীর মৃত্যুশোক, পরিবারে গুরুত্ব কমে যাওয়া, শারীরিক অসুস্থতা, অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং শারীরিক সক্রিয়তা কমে যাওয়ার মতো কিছু বিষয় বার্ধক্যে অবসাদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। মনোবিদ ঈপ্সিতা চট্টোপাধ্যায়ও সহমত এ বিষয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘বয়স বাড়লে শারীরিক এবং মানসিক দুর্বলতা চলে আসে। একটা বয়সের পর আবার নতুন করে শুরু করার ভাবনা অনেকের পক্ষেই ভাবা সম্ভব হয়ে ওঠে না। মনে হয় জীবনের সমস্ত রং, আনন্দ ধুয়েমুছে গিয়েছে। বাকি আর কিছুই নিয়ে। এই ভাবনা থেকে অবসাদ তৈরি হয়। সেই অবসাদ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন সাহস এবং ভরসা দেওয়ার এক জন মানুষের দরকার হয়। অনেকেই তেমন কাউকে পান না। সঙ্গীহীনতা তখন আরও মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করে।’’
জীবনে ব্যস্ততা কমে যাওয়া বার্ধক্যে অবসাদ ডেকে আনে। চাকরি থেকে অবসরের পর জীবন একটা গণ্ডিতে আটকে যায়। রুটিনে বদল আসে। যে মানুষটি ঘরে-বাইরে কাজপাগল হিসাবে পরিচিত ছিলেন, হঠাৎ সেই কাজ থেকে ছুটি হয়ে যাওয়া অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। অবসরের পর নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন সব কিছু থেকে। বাকি জীবনটা কী ভাবে কাটাবেন, কোন মন্ত্রে ভাল থাকবেন, আদৌ নিজের মনের মতো হবে কি না— একটা অনিশ্চয়তা কাজ করতে থাকে। সেখান থেকেই অবসাদের শুরু। এই পরিস্থিতি যাতে না আসে তার জন্য আগে অবসরের আগেই পরিকল্পনা করে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বয়সজনিত রোগের চিকিৎসক ধীরেশ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘অবসরের পর ভাল থাকার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে অবসরের আগেই। ‘প্রি রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান’ থাকা জরুরি। যিনি ৬০-এর পর কী ভাবে জীবনে বাঁচবেন সেটা যদি আগে সময় নিয়ে ভেবে রাখা যায়, তা হলে সমস্যা হয় না। ৮০-র পরেও তো অনেকে বাঁচছেন। ফলে এই দীর্ঘ জীবনপর্বে কী ভাবে ভাল থাকবেন, সেটা নিয়ে পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। সেটা অনেকে করেন না বলেই বার্ধক্যে অবসাদ জাঁকিয়ে বসে।’’
বার্ধক্যে ভাল থাকা কঠিন নয়। শুধু পন্থাগুলি জেনে নিতে হবে। তা হলে আর অবসাদ গ্রাস করার ঝুঁকি থাকবে না। বার্ধক্যে কী কী ভাবে ভাল থাকা যায়?
পছন্দসই কাজ করা
পারিবারিক দায়িত্ব, কর্মক্ষেত্র, সন্তানকে বড় করে তোলা— সব কিছু সামলাতে গিয়ে নিজের পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হয়ে ওঠে না। অবসরের পর নিজের পছন্দের কথা ভাবুন। বিভিন্ন দায়িত্বের ভিড়ে অনেক স্বপ্নপূরণ হয়নি, সেগুলি নিয়ে বার্ধক্যে নতুন করে ভাবা যায়।
নিজেকে ব্যস্ত রাখা
চাকরি থেকে অবসর নেওয়া মানেই ব্যস্ততাহীন জীবন কাটানো নয়। বরং অন্য কোনও কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারেন। কিংবা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও নিজেকে নতুন করে খুঁজে নেওয়া যেতে পারে। মন ভাল থাকবে।
বেড়াতে যেতে পারেন
মাঝেমাঝেই বেড়াতে যেতে পারেন। পাহাড়, জঙ্গল কিংবা সমুদ্র— পছন্দের জায়গায় গিয়ে কাটিয়ে এলে মন ভাল হয়ে যাবে। একঘেয়েমিও কেটে যাবে। মনের মধ্যে জমে থাকা নানা চিন্তাও দূর হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy