জ্বর, পেটখারাপের ওষুধের বিক্রি কি বন্ধ হয়ে যাবে? তা নয়। সম্প্রতি ৩৫টি ‘কম্বিনেশন’ ওষুধের উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থা। এর আগে এই নিষেধাজ্ঞার পরেই সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বেড়েছে। অনেকেরই মনে হয়েছে, জ্বরের প্যারাসিটামল বা পেটখারাপের চেনা ওষুধ নরফ্লক্সাসিনের বিক্রি বুঝি বন্ধ হয়ে যাবে। আসলে মূল ওষুধের বিক্রি বন্ধ হয়নি, যে ওষুধগুলিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলি নানা ওষুধের ‘কম্বিনেশন’ বা ‘মিশ্রণ’। জ্বর, সর্দিকাশি, অ্যালার্জি, ডায়াবিটিস, হার্টের রোগ-সহ একাধিক পরিচিত ওষুধের নাম রয়েছে সেই তালিকায়।
সিডিএসসিও যে তালিকা দিয়েছে তাতে নাম রয়েছে প্যারাসিটামল ৩২৫ ওষুধটির। তবে এর সঙ্গেই কম্বিনেশনে রয়েছে নেফোপ্যাম হাইড্রোক্লোরাইড। এই দু’টি ওষুধের মিশ্রণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর বলেই দাবি করা হয়েছে। তেমনই তালিকায় রয়েছে পেটখারাপের ওষুধ নরফ্লক্সাসিন ও মেট্রোনিডাজ়োলের নাম। এই দু’টি ওষুধ যখন মিলিয়ে-মিশিয়ে খাওয়া হবে, তখন তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে মনে করা হয়েছে। আবার পেটব্যথার ওষুধ মেটফর্মিনের সঙ্গে এমন একটি ওষুধের কম্বিনেশন বিক্রি হচ্ছিল বাজারে, যা যন্ত্রণা দ্রুত কমালেও সকলের শরীরে একই রকম ফল না-ও দিতে পারে। এমন মিশ্র ওষুধগুলিকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এর আগেও ১৫৬টি কম্বিনেশন ওষুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সেখানে প্যারাসিটামল, সেট্রিজ়িন বা কিছু চেনা ভিটামিনের নামও ছিল।
আরও পড়ুন:
চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ‘কম্বিনেশন’ ওষুধগুলিকে বলা হয় ‘এফডিসি’, অর্থাৎ ‘ফিক্সড ডোজ় কম্বিনেশন’। একাধিক একই গোত্রীয় বা ভিন্গোত্রীয় ওষুধ বিভিন্ন মাত্রায় যোগ করে একটি মিশ্র ওষুধ তৈরি হয়। সহজ করে বললে, একাধিক রাসায়নিক গঠনযুক্ত ওষুধ একসঙ্গে করে একটি ওষুধ তৈরি করা হয়। এই সব ককটেল ওষুধের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন আগেও উঠেছিল। এমন ওষুধ দীর্ঘ দিন ধরে খেতে থাকলে লিভার ও কিডনির জটিল রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে বলেই দাবি করা হয়েছিল। এমন আরও অনেক অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ আছে, যাদের মিশ্রণ বাজারে বিক্রি হয়। ওষুধগুলি দ্রুত রোগের উপসর্গ কমাতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি করে বলেও দাবি।
ধরুন, যার জ্বর ও গায়ে ব্যথা রয়েছে, তাঁকে দু’টি আলাদা ওষুধ না দিয়ে একটি কম্বিনেশন দেওয়া হল। কিন্তু দু’টি ওষুধ যে মাত্রায় মেশানো হয়েছে, তা সেই রোগীর শরীরের জন্য কার্যকরী না-ও হতে পারে। ওষুধটি খেতে শুরু করলে তার বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই রোগীরা এমন ওষুধ কিনে খেতেন। সে ক্ষেত্রেও সমস্যা হত।