Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Heart Attack Risk Factor

বাড়ির ভিতরেও শিকার হচ্ছেন বায়ুদূষণের, বাড়ছে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা! সতর্ক করলেন চিকিৎসকেরা

কার্ডিয়োলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক আয়োজিত গ্লোবাল সামিটে কী ভাবে বায়ুদূষণের মাত্রা ধীরে ধীরে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি করে চলেছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শোনা গেল।

Cardiologists explain how air pollution effects on human heart at global summit 2023 organized by CSI.

বায়ুদূষণের জেরে ক্ষতি হচ্ছে হৃদ্‌যন্ত্রের। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:৫৯
Share: Save:

যে কোনও বড় শহরের হাওয়া বিষিয়ে যাওয়ার পিছনে যানবাহনকে বহু দিন ধরেই দুষছেন পরিবেশবিদেরা। কিন্তু গাড়ির বাইরেও দূষণের উৎস কম নেই। পরিবেশবিদদের অনেকেই বলছেন, নির্মাণস্থল, জঞ্জালের স্তূপ ও সেই আবর্জনায় আগুন ধরানো কিংবা নিকাশি নালা, এগুলি থেকেও কিন্তু হাওয়া দূষিত হয়ে চলেছে ক্রমাগত। বায়ুদূষণের প্রভাবে মানুষের মধ্যে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। তবে কেবল ফুসফুসই নয়, বায়ুদূষণ প্রভাব ফেলছে হৃদ্‌যন্ত্রের উপরেও। অল্পবয়সিদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসাবে বায়ুদূষণকেই দায়ী করছেন হৃদ্‌রোগ চিকিৎসকেরা। বাইপাসের ধারে এক হোটেলে কার্ডিয়োলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক আয়োজিত গ্লোবাল সামিট ২০২৩ অনুষ্ঠানে কী ভাবে বর্ধিত বায়ুদূষণের মাত্রা ধীরে ধীরে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি করে চলেছে সেই নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলেছে। দেশ-বিদেশের হৃদ্‌রোগ চিকিৎসক, শিক্ষক ও পরিবেশবিদেরা হাজির ছিলেন ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সেই সামিটে।

বায়ুদূষণের মাত্রাবৃদ্ধির দরুণ গ্যালেক্টিন প্রোটিনের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। এই গ্যালেক্টিন প্রোটিনের পরিমাণ দেহে বাড়লেই হৃৎপিণ্ডে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। হৃদ্‌যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত রক্তবাহগুলির ক্ষয় হচ্ছে। আর এক বার সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে সেই ক্ষত কিছুতেই সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম ‘মায়োকার্ডিয়াল ফাইব্রোসিস’। যখনই আমাদের হৃদ্‌যন্ত্রে ফাইব্রোব্লাস্ট নামে একটি বিশেষ ধরনের কোষ কোলাজেন তৈরি করতে শুরু করে, তখনই হয় মায়োকার্ডিয়াল ফাইব্রোসিস। তার ফলে নানা ধরনের হৃদ্‌রোগ হয়। ডেকে আনে মৃত্যু।

তাই কেবল ফুসফুসের সংক্রমণ রুখতেই নয়, হৃদ্‌রোগের ঝুকি এড়াতেও আমাদের বায়ুদূষণের বিষয় আরও বেশি করে সজাগ হতে হবে। চিকিৎসক বিজয় ব্যাং বলেছেন, ‘‘প্রতিনিয়ত আমরা অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছি। হৃদ্‌রোগের বাড়বাড়ন্ত ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে এটা কিন্তু একটা বড় কারণ। বাড়ির বাইরে বেরোলেই যে দূষিত বায়ু আমাদের শরীরে ঢুকছে এমনটা নয়, বাড়ির ভিতরেও কিন্তু আমরা ক্রমাগত বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছি। বাইরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে অল্প হলেও আমাদের মধ্যে সতর্কতা বেড়েছে, সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে সেই বায়ুদূষণ রোধ করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তবে বাড়ির ভিতরে যে বায়ুদূষণ হচ্ছে সে বিষয় অনেকেরই কোনও ধারণা নেই। এসি চালানোর ফলে, বাড়িতে ধূমপান করার ফলে, রান্নাঘরে চারকোল-তেলের ব্যবহারের ফলে, এমনকি পোষ্যের শরীরের লোম থেকে ছড়িয়ে— নানা ভাবে বাড়ির ভিতরের বায়ু দূষিত হচ্ছে। তাই এ বিষয়ও কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। রান্নাঘরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা, ঘর সাজানোর জন্য মোমবাতির ব্যবহার না করা, ঘরের মধ্যে ধূমপান না করা— এই ছোট ছোট বদল এনে আমরা বাড়ির ভিতরের দূষণ রোধ করতে পারি।’’

Cardiologists explain how air pollution effects on human heart at global summit 2023 organized by CSI.

কার্ডিয়োলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক আয়োজিত গ্লোবাল সামিট ২০২৩ অনুষ্ঠানের মঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।

ইদানীং অল্পবয়সিদের মধ্যে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কেন এমনটা হচ্ছে? চিকিৎসক রমেশ দাগ্গুবতি বলেন, ‘‘বায়ুদূষণের কুপ্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ আর ক্রনিক অসুখ যেমন ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপে সমস্যা রয়েছে এমন মানুষদের মধ্যে। ইদানীং অল্পবয়সিরা যাঁরা আপাতদৃষ্টিতে বেশ স্বাস্থ্যকর তাঁরাও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ধরুন, এক গর্ভবতী মহিলা যদি তাঁর অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন অতিরিক্ত দূষিত বায়ুতে শ্বাসপ্রশ্বাস নেন, তা হলে কিন্তু সেই দূষণের প্রভাব ভ্রুণের উপরেও পড়ে। তাই সেই বাচ্চা যদি জন্মানোর পরে খুব স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনও করে, সে ক্ষেত্রেও তাঁর হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ, যা ক্ষতি হওয়ার তা তাঁর মায়ের গর্ভে থাকার সময়ই হয়ে গিয়েছে। দূষিত বায়ু আমাদের নাক, গলা, ফুসফুস এমনকি, ত্বকের মাধ্যমেও শরীরে ঢুকছে ক্রমাগত। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার পরেও কিন্তু বায়ুদূষণের প্রভাবে অল্পবয়সি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’’

হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে বাড়ির বাইরে খোলা আকাশের নীচে অনেকেই শরীরচর্চা করেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, দূষিত বায়ুর মাত্রা বেশি এমন জায়গায় গিয়ে শরীরচর্চা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আপনি যেই অঞ্চলটি শরীরচর্চার জন্য বেছে নিচ্ছেন সেখানকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে(এআইকিউ) কত তা যাচাই করে তবেই শরীরচর্চার জন্য বাড়ির বাইরে বেরোন। বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপে আপনি বাতাসের এআইকিউ-এর মাত্রা যাচাই করতে পারেন। পরিবেশবিদ স্বাতী নন্দী বলেছেন, ‘‘বাড়িতে প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়ার জন্য আমাদের উদ্যোগী হয়ে উঠতে হবে। কার্বন নির্গত হয় এমন যে কোনও উপায় ব্যবহারের থেকে আমাদের দূরে সরে আসতে হবে। এসিও কিন্তু বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ, তাই এসির ব্যবহারের বিষয়ও আমাদের আর একটু বেশি সতর্ক হতে হবে। ছোট থেকেই পরিবেশের বিষয় সতর্ক হতে হবে। তাই পরিবেশ বিদ্যাকে মূল ধারার পড়াশোনার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Heart Attack Heart Attack Risk Pollution Air pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy