গলার স্বর বদলে যাচ্ছে কি? ছবি: সংগৃহীত।
গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে গাড়ির চাকা যেমন গড়ায় না, ঠিক তেমন ভাবেই সামান্য কিছু ক্ষণের জন্য মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করলেই সমূহ বিপদ। কারণ, শারীরবৃত্তীয় নানা ক্রিয়াকলাপ থেকে হেঁটে চলে বেড়ানো কিংবা কথা বলার মতো সাধারণ কাজ— সবই নিয়ন্ত্রণ করে এই অঙ্গটি। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে যে কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। স্ট্রোকের তীব্রতার উপর শারীরিক নানা রকম পরিবর্তন আসতেই পারে। আবার, মস্তিষ্কের স্নায়ুর জটিল একটি রোগ হল পার্কিনসন্স। এই রোগে আক্রান্ত হলেও কিন্তু শারীরিক নানা রকম পরিবর্তন আসে। চিকিৎসকেরা বলছেন, দুটি রোগের ক্ষেত্রেই রোগীর গলার স্বরে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। কারণ, পার্কিনসন্স একটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ। মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট একটি অংশের স্নায়ু নষ্ট হতে থাকলে এই রোগের আবির্ভাব হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, পার্কিনসন্স-এ আক্রান্ত রোগীদের স্বরযন্ত্রের একটি অংশ অর্থাৎ ল্যারিঙ্গস-এর কর্মক্ষমতা ব্যাহত হয়। ফলে অনেকের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক স্বর বদলে যায়।
পার্কিনসন্স হলে গলার স্বরে কী ধরনের পরিবর্তন আসে?
১) পার্কিনসন্স-এ আক্রান্তদের সাধারণত গলার স্বর খুবই ক্ষীণ হয়। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, মস্তিষ্কের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে কথা বলতে পারার ক্ষমতাও লোপ পেতে পারে। কোন কথার উত্তরে কী বলতে হবে, তা বুঝে ওঠার ক্ষমতাই থাকে না।
২) স্বরযন্ত্রের পেশির উপর নিয়ন্ত্রণ কমে এলে গলার স্বর আরও ক্ষীণ হতে শুরু করে। কথা বলতে, তরল কিংবা শক্ত খাবার খেতেও সমস্যা হতে পারে।
৩) অনেকের আবার গলার স্বর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে থাকে। ফলে পার্কিনসন্সে আক্রান্ত রোগী কী বলতে চাইছেন তা বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে।
স্ট্রোক কী ভাবে গলার স্বর বদলে দিতে পারে?
মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক না হলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পৌঁছতে পারে না। অক্সিজেনের অভাবেই স্ট্রোক হয়। দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিসের মতো রিস্ক ফ্যাক্টর মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পাশপাশি রক্তে ভেসে বেড়ানো ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলও ধমনীতে আটকে গিয়ে রক্ত চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে সাধারণত হাত, পা অসাড় হয়ে যায়। কিছু ক্ষণের জন্য রোগী চোখে অন্ধকার দেখতে পারেন। শরীরের এক পাশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, স্ট্রোক হওয়ার পর কারও কারও কথা বলতে, ঢোক গিলতেও অসুবিধে হয়। এমনকি, স্বরের পরিবর্তন হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। তবে, তা নির্ভর করে স্ট্রোকের তীব্রতার উপর।
স্ট্রোকের পর গলার স্বরের কী কী পরিবর্তন হতে পারে?
১) শরীরের আভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সমস্ত কাজই নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কের অনেক অংশই স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারে না। তাই শব্দ উচ্চারণ করতে অসুবিধা হতেই পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় ডিজ়ফোনিয়া।
২) স্ট্রোকের কারণে শরীরে অনেক স্নায়ুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বরযন্ত্রের স্নায়ুর উপর প্রভাব পড়লে স্বরের মান বদলে যেতেই পারে। কারও ক্ষেত্রে স্বর খসখসে হয়ে যায়। আবার কারও ক্ষেত্রে গম্ভীর।
৩) ভোকাল কর্ড বা স্বরযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়লে শব্দ উচ্চারণ করতেও সমস্যা হতে পারে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলে স্বর আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসতে কিন্তু সময় লাগে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy