স্কুলে গিয়ে লিখতে চায় না অনেক শিশুই। প্রতীকী ছবি।
বছর সাতকের প্রিয়দর্শিনী মজুমদার। নার্সারি থেকে সদ্য ক্লাস ওয়ানে উঠেছে। স্কুল যাওয়া নিয়ে কোনও বায়না না থাকলেও, প্রিয়দর্শিনীর বাবা-মা মেয়ের কিছু অভ্যাস নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই চিন্তিত। কিছু দিন আগেই স্কুল থেকে ডেকে পাঠানো হয় তাঁদের। প্রিয়দর্শিনীর ক্লাস শিক্ষক তাঁদের জানিয়েছেন, পড়া জিজ্ঞেস করলে তা গ়ড়গড় করে বলে দিলেও, লেখায় চরম অনিহা তার। বোর্ডে বাড়ির কাজ লিখে দিলে তা লেখে না সে। ক্লাসে কিছু লিখতে দিলেও আধখাপছাড়া লিখে ছেড়ে দেয়। মেয়ে লিখতে চায় না শুনে চিন্তার মেঘ জমা হয়েছে প্রিয়দর্শিনীর বাবা-মায়ের মনে। সেটাই স্বাভাবিক।
আসলে এই সমস্যা একা প্রিয়দর্শিনীর নয়। এমন অনেক বাচ্চাদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যাটিকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় ‘লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি’। এই সমস্যার তিনটি ভাগ রয়েছে। ১) পড়তে অসুবিধা হওয়া (ডিসলেক্সিয়া), ২) লিখতে অসুবিধা (ডিসগ্র্যাফিয়া), ৩) অঙ্ক করতে সমস্যা (অ্যারিথমেটিক)। সমীক্ষা বলছে, ৫ থেকে ১৫ শতাংশ শিশুর এই সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যার সমাধান একমাত্র লুকিয়ে রয়েছে ‘অকুপেশনাল থেরাপি’তে।
কী এই থেরাপি?
শিশুকে হাতে ধরে শেখানোর থেকে খেলার ছলে শেখানো অনেক বেশ সহজ। শিশুর পক্ষেও এই পদ্ধতি অনেক বেশি স্বচ্ছন্দের হয়। বয়স অনুপাতে প্রত্যেক শিশুর বিকাশ এবং নিজের কাজ করার দক্ষতা গড়ে ওঠে না। কারও কারও ক্ষেত্রে বয়স পেরিয়েও এই দক্ষতা গ়়ড়ে ওঠে ন। এই ছোটখাট খামতি দূর করতেই দরকার হয় অকুপেশনাল থেরাপির। এই থেরাপি একটি শিশুকে স্বাধীন ভাবে নিজের প্রয়োজনীয় কাজটি করতে এবং আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সাহায্য করে।
থেরাপিস্ট প্রথমে শিশুর ঠিক কী সমস্যা রয়েছে সেই বিষয়টি মূল্যায়ন করে নেন। শিশুর ঠিক কী ধরনের সমস্যা রয়েছে, তার উপর নির্ভর করে থেরাপির পদ্ধতি তৈরি করেন।
ধরা যাক, কোনও বাচ্চা লিখতে পারে না। পেন কিংবা পেনসিল ধরতে পেশিতে সমস্যা হয়। লেখার প্রতি চরম অনিহা। সেক্ষেত্রে খেলার ছলেই কিন্তু লেখা শেখানো হয় বাচ্চাদের। এই থেরাপি চলাকালীন শিশুকে লেখার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়। শিশুর পঞ্চইন্দ্রিয়ের সমন্বয়েও কিন্তু এই থেরাপি সাহায্য করে।
থেরাপিস্টরা এই ধরনের থেরাপি মূলত স্কুলে, বাড়িতে বা শিশু যেখানে স্বচ্ছন্দ বোধ করে, সেখানে গিয়েই করান। তাহলে আলাদা করে শিশুর মনের উপর চাপ পড়ে না। তার চেনা পরিবেশেই দৈনন্দিন কাজের মাঝেই তাকে কাজটা শেখানো সহজ হয়। বাচ্চার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। তার সমস্যাটি কাছ থেকে লক্ষ করে তবেই সমাধানের পথ খোঁজা হয়। এই গোটা পদ্ধতিকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয়, ‘প্ল্যান অফ কেয়ার’(পিওসি)। বাচ্চার সমস্যার উপর নির্ভর করবে এই থেরাপি কত দিন ধরে চলবে। সপ্তাহে দু’দিন মূলত এই থেরাপি করানো হয়। প্রথম দিকে একঘণ্টা করে হলেও, পরের দিতে সময় কমে ৪০-৪৫ মিনিট হয়ে যায়। । কারণ তখন আর দরকার পড়ে না। অনেক বাবা-মায়েরাই তাঁদের সন্তানের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা লক্ষ করেছেন। বিদেশে এই থেরাপির বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে কলকাতাতেও বেশ কয়েকটি অকুপেশনাল থেরাপির ক্লিনিক রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy