ইন্টারস্টিশিয়াল লাং ডিজ়িজ়-এ আক্রান্তদের জন্য নির্দিষ্ট ক্লিনিকের সূচনা করল অ্যাপোলো হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।
সিঁড়ি বেয়ে ফ্ল্যাটে ওঠা হোক বা বাজারে সারতে দামদর হেঁকে ফেরা। আজকাল আপনি আর আগের মতোও ফুরফুরে মেজাজে এ সব সামাল দিতে পারছেন না। অল্পেই হাঁপিয়ে যাচ্ছেন। দু’সপ্তাহেরও বেশি কাশিতে ভুগছেন। সঙ্গে বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, সারা দিন অবসন্ন ভাব।
এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকলে আর দেরি করবেন না। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকরা। প্রতি দিন ভিড় জমানো রোগীদের মতো আপনিও হয়তো ইন্টারস্টিশিয়াল লাং ডিজ়িজ় বা ‘আইএলডি’-র শিকার। প্রতি দিন শরীরে তিলতিল করে বাড়ছে এই রোগ। সময় মতো চিকিৎসকের কাছে না গেলে ডিপিএলডি রোগে মৃত্যুও হতে পারে রোগীর, এমনটাই মত চিকিৎসকদের।
আইএলডি কী
ইন্টারস্টিশিয়াল লাং ডিজ়িজ় একটি জটিল রোগ, এই রোগের ক্ষেত্রে ফুসেফুসে ক্ষত তৈরি হয়, ফুসফুস ফুলে যায়। আইএলডি-তে আক্রান্ত হলে ফুসফুসের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। এই অসুখের প্রভাবে শ্বাসকষ্ট ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এর সঙ্গে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও সারকোয়ডোসিস-এর সমস্যা থাকলে এই অসুখের প্রবণতা বাড়ে। আইএলডি-এর ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায় চিকিৎসা শুরু না করালে কিন্তু ফুসফুস প্রতিস্থাপনেরও প্রয়োজন পড়তে পারে রোগীর।
সম্প্রতি কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল আইএলডি-এর জন্য একটি নির্দিষ্ট ক্লিনিক চালু করেছে। সেই ক্লিনিকের সূচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় দ্য ওবেরয় গ্র্যান্ড-এ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাপোলো হসপিটালস গ্রুপের পূর্বাঞ্চলের সিইও রাণা দাশগুপ্ত, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার ডিরেক্টর চিকিৎসক সুরিন্দর সিংহ ভাটিয়া, চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক সেনগুপ্ত, সুভাশিষ ঘোষ, অরিন্দম মুখোপাধ্যায়, দেবোপম চট্টপাধ্যায়, সুরেশ রামাসুব্বাম, আসিফ ইকবাল, শৈবাল মৈত্র, অর্পণ চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সঙ্কটজনক রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে, তাঁদের উন্নত পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল অন্যদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। অনেক সময় আইএলডি রোগীর রোগ নির্ণয় ভুল হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে প্রাণ হারানোর আশঙ্কাও তৈরি হয়। তাই এই রোগকে প্রতিরোধ করার জন্য চাই বাড়তি সতর্কতা। প্রাথমিক পর্যায় এই রোগ ধরা পড়লে এবং রোগীর সঠিক চিকিৎসা হলে অনেকের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে। আর এই জন্যই অ্যাপোলোতে শুধুমাত্র আইএলডি রোগীদের চিকিৎসার জন্য চালু করা হল নয়া ক্লিনিক। এই ক্লিনিকে আপনি পেয়ে যাবেন লাঙ্গস অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগ, রেডিওলজি বিভাগ, রিউম্যাটলজি বিভাগ, রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ।’’
প্রধান উপসর্গ
আইএলডির রোগীরা শুকনো কাশির সমস্যায় ভোগেন। কিছুতেই সেই কাশি কমতে চায় না। অক্সিজেনের অভাব হওয়ার কারণে রোগীর শরীরে প্রচণ্ড পরিমাণে ক্লান্তি কাজ করে। এই দুইটি উপসর্গ নাছোড় হয়ে শরীরে বাসা বাঁধলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
কাদের ঝুঁকি বেশি
১) বয়স্কদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি। তবে অল্পবয়সিরাও আইএলডি-তে আক্রান্ত হতে পারেন।
২) ধূমপান করলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
৩) দূষণ ও ধুলোই এই অসুখের অন্যতম কারণ। গ্রেন ডাস্ট অর্থাৎ শস্য ঝাড়াইয়ের ধুলো, পাখির শুকনো বিষ্ঠা, কলকারখানা আছে এমন জায়গায় সিলিকার দূষণ ও অ্যাসবেস্টসের দূষণ ইত্যাদি কিছুই আইএলডি ডেকে আনে।
৪) কোভিডের মতো কিছু ভাইরাল সংক্রমণও এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৫) বিশেষ কিছু ওষুধের প্রভাবে বা পরিবারে কারও এই রোগ থাকলেও কিন্তু আইএলডি হতে পারে।
আইএলডির চিকিৎসার ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করা যায় ততই মঙ্গল। চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোগ ধরতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। বুকের এক্স-রে, বিশেষ ধরনের সিটি স্ক্যান বা এইচআরসিটি করতে হয়। প্রয়োজন হয় স্পাইরোমেট্রি, ডিফিউশন ক্যাপাসিটি নির্ধারণের। এমনকি, ব্রংকোস্কপি বা ফুসফুস বায়োপসিও করা দরকার হতে পারে। সুতরাং রোগ পুষে রাখবেন না। এই রোগে আক্রান্ত রোগী একেবারে শেষ পর্যায় আমাদের কাছে এলে আমরা ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কথা ভাবি। তবে এই প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ এবং ফুসফুস প্রতিস্থাপন একটি জটিল প্রক্রিয়াও বটে। তাই রোগীকে যেন সেই পর্যায় পৌঁছতে না হয়, সেই জন্যই অ্যাপোলোতে এই বিশেষ বিভাগটি চালু করার কথা আমারা ভেবেছি।’’
বুকে ব্যথা মানেই কিন্তু হার্টের অসুখ নয়, ফুসফুসের সমস্যারও ইঙ্গিত হতে পারে এই উপসর্গ। টানা দু’সপ্তাহ ধরে কাশি হলে এক বার চিকিৎসকের পরামর্শ করুন। এই অসুখের ঝুঁকি কমাতে সবার আগে ধূমপান ছাড়তে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy