জল ঠান্ডা হবে ফ্রিজ় ছাড়াই। ছবি: সংগৃহীত।
গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ। নাজেহাল সকলেই। কোনও কিছুতেই মিলছে না স্বস্তি। বৃষ্টিরও দেখা নেই। এই ভরা গরমে একটু শান্তি পেতে এবং মনেপ্রাণে শীতল আমেজ আনতে অন্যতম ভরসা ফ্রিজ়ের কনকনে ঠান্ডা জল।
দাঁত শিরশির করলেও, ঠান্ডা জল খাওয়া ছাড়া যায় না। কারণ তাতেই যে লুকিয়ে সাময়িক শান্তির বারি। হ্যাঁ, সাময়িকই বটে। ঠান্ডা জল গলা দিয়ে শরীরের অন্দরে যেতে যেটুকু সময় নেয়, ততটুকুই আরাম। সেই আমেজটুকু চলে গেলে, আবার যে কে সেই। তা ছাড়া ফ্রিজ়ের জল খাওয়া যে শরীরের জন্য ভাল, তা-ও তো নয়। ঠান্ডা লেগে সর্দিকাশির সমস্যা তো আছেই। সেই সঙ্গে ঘন ঘন ফ্রিজ়ের জল খাওয়ার অভ্যাসে বাড়ে বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি। কিন্তু এই গরমে তেষ্টা মেটাতে ফ্রিজ়ের জলের বিকল্প আর কী আছে? জল ঠান্ডা করার অন্য উপায় আছে কি?
প্রযুক্তি যখন এত উন্নত হয়নি, তখনও গ্রীষ্মকাল ছিল। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে এত ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে গরম বাতাসে বইত কিনা, তা জানা না থাকলেও, গরমের অস্বস্তি তো ছিলই। ফ্রিজ় নামক যন্ত্রটি কিন্তু তখন বহু ঘরেই ছিল না। কিন্তু তার জন্য ঠান্ডা জল খাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়নি মানুষজনকে।
সে যুগে বড় হওয়া মানুষদের বলতে শোনা যায়, বেশির ভাগ বাড়িতে তখন মাটির কলসিতে জল রাখা হত। লোকে বলত ‘জলের কুঁজো’। কুঁজো হত দু’ধরনের। একটা লালচে, অন্যটি কালচে। লালচে কুঁজোর চলটিই ছিল বেশি।
মাটির সোঁদা গন্ধমাখা সেই ঠান্ডা জল মনে এবং প্রাণে একটা ঠান্ডা পরশ দিয়ে যেত। জল ঠান্ডা রাখার ক্ষেত্রে যন্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে মাটি। মাটির পাত্রে জল খাওয়ার চল আবার ফিরছে অবশ্য। পোড়ামাটির তৈরি বোতলে অনেকেই এখন জল রাখছেন। তাতে জলও ঠান্ডা থাকছে, আবার শরীর খারাপেরও ভয় নেই। বরং অনেক স্বাস্থ্যগুণ আছে এতে। সেগুলি কী?
১. পৌষ্টিকতন্ত্রে খাবার হজমের জন্য অনেক রকম অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। মাটির পাত্রে জল রাখলে জলে ক্ষার জাতীয় উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে এই জল খেলে পেটের বিভিন্ন প্রকার অ্যাসিড কিছুটা প্রশমিত হয়, অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য বজায় থাকে। গরমে হজম করতে অসুবিধা হয়, মাটির পাত্রে রাখা জল খেলে ভাল হজম হয়।
২. মাটির পাত্রে জল রাখলে জলে মেশে হরেক রকমের খনিজ উপাদান। ফলে দেহে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের অভাব কমে। ভাল থাকে বিপাকক্রিয়াও।
৩. কাজের প্রয়োজনে রোদে বেরোতে হয় অনেককেই। তীব্র গরমে অনেকেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। মাথা ঘোরে, বমি বমি ভাব আসে। বাড়ি ফিরে সেই সময়ে মাটির পাত্র থেকে জল খেলে স্বস্তি মেলে। এতে থাকা খনিজ উপাদান ও ভিটামিন শরীর চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে।
৪. ফ্রিজ়ের ঠান্ডা জল খেলে গলায় সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। যাঁদের ঠান্ডা লাগার ধাত রয়েছে, তাঁরা অনেক বেশি সমস্যায় পড়েন ফ্রিজ়ের জল খেলে। অথচ মাটির পাত্রের জল খেলে শরীরে তৃপ্তি আসে। গলায় সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে না।
৫. মাটির পাত্রে জল রাখলে তা পরিশ্রুত হয় নিজে থেকেই। জলের স্বাদও বাড়ে।
মাটির পাত্রটি ব্যবহার করবেন কী করে—
১. বহু বাঙালি বাড়িতে এক সময় এমন কুঁজোর জলে একটুখানি কর্পূর মিশিয়ে দেওয়া হত। তাতে জলের স্বাদ আরও ভাল হত। চাইলে এমন একটা ব্যাপার আপনিও ঘটিয়ে দেখতে পারেন।
২ মাটির কুঁজো থেকে ঝুঁকে জল গড়াতে একটু অসুবিধের। তাই অনেকেই ঘরের কোণে একটু উঁচু জায়গা করে, তার উপর ওপর বসিয়ে রাখতেন। মুখের কাছটা মাটির সরা বা মাটির জলের গ্লাস দিয়ে ঢাকা রেখে।
৮.পরিশেষে বলি, মাটির কুঁজোর গায়ে অনেকেই এক সময় ভিজে কাপড় জড়িয়ে রাখতেন, তাতে জল ঠান্ডা একটু বেশিই হত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy