এ কালের কবি লিখেছেন, “ডিপ্রেশনের বাংলা জানি মনখারাপ”। আর পাতা ঝরার মরসুম এলেই কলকাতার মনে পড়ে যায় ষাটের দশকের কবি ভাস্কর চক্রবর্তীর ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা’ কবিতাটির ছত্রে ছত্রে লেগে থাকা বিষাদের কথা। শীতের মধ্যে একটা বিষণ্ণতার বোধ কিন্তু লুকিয়ে রয়েছে।
শীতকালে যে ধরনের মনখারাপ, বিষণ্ণতাবোধ বা অবসাদ দেখা দেয়, তার আরও একটি গালভরা নাম আছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে তা ‘উইন্টার ব্লুজ়’ বলেই পরিচিত। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে ‘সিজ়ন্যাল অ্যাফেক্টিভ ডিজ়অর্ডার’ বা ‘স্যাড’ বলে।
আরও পড়ুন:
মনোবিদেরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে শীতকে রঙিন মনে হলেও এই ঋতুর প্রভাব অনেকের মনকে ধূসর করে তোলে। ভোরের কুয়াশা বা ধোঁয়াশার মতো কারণে-অকারণে মনের কোণেও মেঘ জমে। ঋতুকালীন মনখারাপের বিষয়টির জন্ম হয়েছিল মূলত শীতপ্রধান দেশে। সেখানে যখনই আলো কমে আসে, ঝিরঝিরে বৃষ্টি কিংবা তুষারপাত হয়, তখন মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মও ব্যাহত হয়। ভারী তুষারপাত হলে ঘরের বাইরে বেরোনোও বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে অবসাদ আসা স্বাভাবিক। আবার বহু দিন সূর্যের আলো না দেখলে মনখারাপ হতে পারে। এটা যে শুধুমাত্র শীতপ্রধান দেশে সীমাবদ্ধ, তা কিন্তু নয়। শীত পড়লে মনখারাপ বাড়ে আরও অনেক ভূগোলেই।
আরও পড়ুন:
কী ভাবে তা ঠেকিয়ে রাখা যায়?
১) শীতের মেঘলা দিনে ঘরের মধ্যে জবুথবু হয়ে বসে থাকলে মনখারাপের মাত্রা কিন্তু লাগামছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই অল্প সময়ের জন্য হলেও বারান্দা বা ছাদ থেকে ঘুরে আসা যায়। নিদেনপক্ষে জানলার ধারে বসেও কিছুটা সময় কাটানো যেতে পারে। দিনের আলোতে মন ভাল হয়ে যায়।
২) এই সময় শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকা বিশেষ প্রয়োজন। ঠান্ডার সময়ে শরীরচর্চা করতে অনীহা বোধ করেন অনেকে। যে কারণে হরমোনের ক্ষরণ এবং কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। হরমোনের হেরফেরেও কিন্তু মনখারাপের তীব্রতা বাড়তে পারে।
৩) সমাজমাধ্যমে না থেকে সমাজবদ্ধ হয়ে থাকার চেষ্টা করুন। পরিবার, বন্ধু কিংবা প্রিয় মানুষের সঙ্গ মনখারাপকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। মনখারাপের ওষুধ হয়ে উঠতে পারে ‘টক থেরাপি’। ভরসা করে মনের কথা কাউকে বলতে না পারলে লিখেও রাখা যেতে পারে।