সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এতে ক্যানসার হতে পারে। বিধিবদ্ধ ওই সতর্কবার্তা মেনে সিগারেট না খেলে কি ক্যানসার হবে না? উঁহু, তার কোনও নিশ্চয়তা কিন্তু নেই। বরং একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোনও দিন সিগারেট খাননি এমন মহিলারাও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর গত কয়েক বছরে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই।
ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গোটা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে মৃত্যুর যে হার তার মধ্যে সংখ্যার নিরিখে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন ফুসফুসের ক্যনসারে আক্রান্ত অ-ধূমপায়ীরা।

ছবি: সংগৃহীত।
কী জানাচ্ছে গবেষণা?
ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে সারা বিশ্বে মোট ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৩ - ৭০ শতাংশ ধূমপায়ী নন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওই অ-ধূমপায়ীদের ক্যানসার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুরু হচ্ছে অ্যাডিনোকারসিনোমা হিসাবে। পরে তা ফুসফুসে ছড়াচ্ছে।
অ্যাডিনোকারসিনোমা হল এমন এক ধরনের ক্যানসার, যা শুরু হয় প্রত্যঙ্গের গ্ল্যান্ড লাইনিংয়ে। পরে যখন তা লিম্ফ নডসে পৌঁছয়, তত দিনে ক্যানসার অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, অ্যাডিনোকারসিনেমার কারণ ধূমপান নয়, বরং দূষিত বাতাস। যে সব মহিলার শরীরে অ্যাডিনোকারসিনোমা ধরা পড়েছে, তাঁদের মধ্যে দু’ লক্ষ মহিলা কোনও না কোনও ভাবে দূষিত বাতাসে নিয়মিত শ্বাস নিয়েছেন। আর এমনটা বেশি হয়েছে এশিয়ার মহিলাদের ক্ষেত্রেই।

ছবি: সংগৃহীত।
পুরুষদের মধ্যে অ্যাডিনোকারসিনোমায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ছিলই। তবে ইদানীং মহিলাদের মধ্যেও অ্যাডিনোকারসিনোমায় আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। পরিসংখ্যান বোঝানোর জন্য ২০২২ সালের একটি হিসাব তুলে ধরা হয়েছে ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ নতুন করে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ লক্ষের কিছু বেশি পুরুষ, ৯ লক্ষের কিছু বেশি মহিলা। পুরুষদের মধ্যে ৭ লক্ষ ১৭ হাজার ২১১ জন পুরুষের অ্যাডিনোকারসিনোমা দেখা গিয়েছে, যা মোট আক্রান্তের ৪৫.৬ শতাংশ। মহিলাদের ক্ষেত্রে ওই হার অনেক বেশি। মোট আক্রান্তের ৫৯.৭ শতাংশ, অর্থাৎ ৫ লক্ষ ৪১ হাজার ৯৭১ জন মহিলা অ্যাডিনো কারসিনোমায় আক্রান্ত।
অ-ধূমপায়ী মহিলাদের ক্যানসার হওয়ার কারণ কী?
গবেষণা বলছে মহিলাদের শরীরে কিছু জিনগত বিভিন্নতাই তাদের ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আবার মেনোপজ়ের সময়ে মহিলাদের শরীরে হরমোনের মাত্রার ওঠাপড়ার কারণেও ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয়। এ ছাড়া নিয়মিত শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে রাডন গ্যাস অথবা পিএম ২.৫ কণা গেলে তা কোষের ডিএনএ-তে বদল ঘটিয়ে ক্যানসারের কারণ হতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে নিয়মিত উনুনের কাঠের আঁচের ধোঁয়া থেকেও ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছে ওই গবেষণা।

ছবি: সংগৃহীত।
ধূমপান ক্ষতিকরই
ধূমপানও ক্যানসারের কারণ। অন্য একটি গবেষণা বলছে, ভারতে এখন ৪২ শতাংশ পুরুষ এবং ১৪.৮ শতাংশ মহিলা ধূমপান করেন। ধূমপানের প্রবণতা বাড়ছে শহুরে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও, যা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষকেরা। টাটা ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারের চিকিৎসক পঙ্কজ চতুর্বেদী বলছেন, ‘‘ফুসফুসে ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে ধূমপায়ীদেরও। ধূমপান না করে সেই ঝুঁকি যদি কমানো যায়, তবে কেন তাকে বাড়তে দেবেন!’’