রোগা হওয়া মানেই হিলহিলে কোমর নয়। আবার ক্ষীণকটি হতে গেলে দ্রুত অনেকখানি ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে, তা-ও নয়। প্রমাণ স্বয়ং করিনা কপূর খান। পঁয়তাল্লিশ ছুঁই ছুঁই নায়িকা বলিউডে নয় নয় করে ২৫ বছর কাটিয়ে ফেললেন। এখনও চেহারার গড়ন এবং জেল্লায় নবাগতাদের টেক্কা দেন তিনি। অথচ তিনি কখনওই ওজন ঝরানো নিয়ে বেশি মাথা ঘামান না। করিনার ফিটনেস প্রশিক্ষক জানাচ্ছেন, নায়িকার নজর থাকে একটি বিষয়েই। তাঁর কোমর যেন নির্মেদ থাকে। করিনার ফিটনেস প্রশিক্ষকের নাম অংশুকা পরওয়ানি। তিনি জানাচ্ছেন, করিনাই তাঁর একমাত্র ছাত্রী, যিনি ওজন কমানো নিয়ে ভাবেন না। অংশুকা বলছেন, ‘‘করিনা সব সময় নজর দেন ফিটনেসে। আর মাঝেমধ্যে কোমরের মাপ ঠিক রাখার জন্য যোগাসন করেন।’’
বলিউডে নবাগতা এবং তথাকথিত সুন্দরী অভিনেত্রীরা সংখ্যায় নেহাত কম নয় এখন। তা সত্ত্বেও যদি এই সময়ে দাঁড়িয়ে গ্ল্যামারাস অভিনেত্রীদের নাম বলতে বলা হয়, তবে সবার আগে করিনার কথাই মাথায় আসে। অংশুকা বলছেন, ‘‘করিনাকে দেখলে আমার মনে হয়, ওঁর গালের উপর যেন কেউ সব সময় টর্চের আলো ফেলে রেখেছে, এতটাই উজ্জ্বল ওঁর ত্বক। আসলে করিনা নিজের শরীরকে ওই ভাবেই তৈরি করেছেন। ওঁর যে জেল্লা, সেটা শুধু উপরের নয়। ওটা ভিতর থেকে আসে।’’

ছবি: সংগৃহীত।
অংশুকা জানাচ্ছেন, তিনি বহু বছর ধরে করিনার ফিটনেস প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করছেন। করিনার যে বিষয়টি তাঁর সবচেয়ে ভাল লাগে, তা হল— করিনা কখনও বয়সের সঙ্গে যুদ্ধ করেন না। অংশুকা বলছেন, ‘‘করিনা তাঁর শরীরকে খুব ভাল বোঝেন। বয়স অনুযায়ী যতটা করা দরকার, ততটাই করেন। যোগাসন করতে বরাবরই পছন্দ করেন করিনা। প্রয়োজন হলে সেই শরীরচর্চায় কিছু বদল আনেন। তবে সেটা ওজন ঝরানোর জন্য নয়। হয়তো আমাকে এসে বললেন, ‘আমি আমার কোমরের মাপটা একটু কমাতে চাই।’ কিন্তু আজ পর্যন্ত কখনও করিনা বলেননি, ‘আমি ওজন কমাতে চাই’।’’
করিনা তাঁর কাঙ্ক্ষিত চেহারা পাওয়ার জন্য কী কী আসন করেন?
অংশুকা জানিয়েছেন, তিনি করিনাকে বিভিন্ন ধরনের ‘অ্যানিম্যাল ফ্লো’ এক্সারসাইজ় করান। পাশাপাশি, পেটের নীচের অংশের পেশির বলবৃদ্ধির ব্যায়াম, কার্ডিয়োভাস্কুলার এক্সারসাইজ় এবং যোগাসন করান। করিনার মতো যোগাসন করে ছিপছিপে কোমরের অধিকারী হতে পারেন আপনিও। জেনে নিন তেমন পাঁচটি আসনের নাম।

ছবি: সংগৃহীত।
১। ত্রিকোণাসন
এই আসনে ঊরু এবং হাঁটুর জোর বাড়ে। পাশাপাশি, কোমরের দু’পাশের মেদ ঝরিয়ে পেশিকে সুগঠিত করে এই আসন। এ ছাড়া এটি শরীরের উপরের অংশে জমা বাড়তি মেদ ঝরাতেও সাহায্য করে।
২। নৌকাসন
পেট এবং কোমরের নীচের অংশের পেশিকে সুগঠিত করার জন্য সেরা যোগাসন বলা যেতে পারে নৌকাসনকে। নিয়মিত নৌকাসন করলে তা পেটের মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি পিঠ, কোমর এবং কোমরের নীচের বাড়তি মেদ ঝরাতেও সাহায্য করে। স্বাস্থ্য সচেতনদের দুনিয়ায় যে ফ্ল্যাট স্টমাকের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। তার জন্যও নৌকাসন কার্যকরী।
৩। অর্ধ মৎস্যেন্দ্রাসন
বসে মেরুদণ্ডে মোচড় দেওয়া এই আসন শরীরে ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে দূষণমুক্ত করে। শরীরের বিপাকের হার বৃদ্ধি করে। পেটের পেশিকেও সুগঠিত করে। যার প্রত্যেকটিই ছিপছিপে কোমরের জন্য জরুরি।

ছবি: সংগৃহীত।
৪। ভুজঙ্গাসন
কোমর এবং শরীরের পিছন দিকের পেশির শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি ভুজঙ্গাসন পেটের মেদ ঝরানোর জন্যও উপকারী। এ ছাড়া কম্পিউটারে বা ল্যাপটপে কাজ করার জন্য ভুল ভঙ্গিমা জনিত যে সমস্ত সমস্যা শরীরে দেখা দেয়, তা থেকেও মুক্তি মিলতে পারে নিয়মিত ভুজঙ্গাসন করলে।
৫। বশিষ্ঠাসন
বশিষ্ঠাসন হল সাইড প্ল্যাঙ্কের মতোই। কোমরের দু’পাশের পেশিকে সুগঠিত করা, কোমর এবং পেটের মেদ ঝরানোর জন্য এই আসন উপকারী। একই সঙ্গে নিয়মিত বশিষ্ঠাসন করলে হাতের পেশিও সুগঠিত হয়। ‘কোর মাসল’, অর্থাৎ পেট এবং তার নীচের অংশের পেশির শক্তি বাড়ে।
সতর্কতা
যে কোনও আসনই অভ্যাস করার আগে সব সময় অভিজ্ঞ ফিটনেস প্রশিক্ষক বা পেশাদার যোগাসন শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।