ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়া, বাংলা না-জানা বাঙালিদের, বিশেষ করে যাদের বাংলা উচ্চারণে ইংরেজির ছোঁয়া আছে–তাদের প্রায়ই ওই চারটে শব্দ শুনতে হয়। কিন্তু শব্দ-জব্দ করতে গিয়ে পরপর দুটো বছরে আমরা প্রমাণ পেয়েছি–বাংলা মাধ্যমের চেয়ে ইংরেজি মাধ্যমের ছেলে-মেয়ের বাংলাটা আসে না, এটা ভুল ধারণা।
শব্দ-জব্দ ২০২৩-এ অংশগ্রহণ করা ১০টি জেলার ১৫৩টি স্কুল-দলের মধ্যে সেরা হল যে তিনটি স্কুল, তার মধ্যে সেরার সেরা, অর্থাৎ প্রথম হওয়া স্কুলের নাম লায়ন্স ক্যালকাটা (গ্রেটার) বিদ্যামন্দির। আদ্যোপান্ত ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। বাংলা সেখানে কারো দ্বিতীয়, কারো তৃতীয় ভাষা। বাংলা সেখানে শুধুই একটা বিষয়। অথচ দ্বিতীয় বা তৃতীয় যারা হল, যথাক্রমে কামরাবাদ গার্লস হাই স্কুল ও চক গোপাল সারদা বিদ্যাপীঠ ফর গার্লস–তাদের স্কুলে সব কিছুই বাংলা ভাষায় পড়ানো হয়, ইংরেজি সেখানে দ্বিতীয় ভাষা।
শব্দ-জব্দর চূড়ান্ত পর্বে, অর্থাৎ ফাইনালে সেরার সেরা হল একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, তাও পরপর দু'বার–এটা বাংলা ভাষার জন্য একটা মস্ত বড় বিজ্ঞাপন। এমনকি প্ৰথম ধাপে যখন ১৫৩টি স্কুল-দল থেকে সেরা ৫০টি দলকে পরের ধাপে বেছে নেওয়া হল, সেখানেও বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল প্রায় সমান-সমান সংখ্যায় ছিল।
এই পরিসংখ্যানগুলোই বুঝিয়ে দেবে, বাংলা জানাটা সবসময় স্কুলের মাধ্যমের উপর নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে স্কুলের আর বাড়ির পরিকাঠামো আর পরিবেশের উপরেও। শুধুমাত্র বইয়ের সিলেবাসে আটকে না-থেকে যারা তার বাইরেও স্কুলে-বাড়িতে ছোট থেকে বিভিন্নভাবে ভাষার চর্চা করেছে, তারাই স্কুলের হয়ে–আসলে নিজেদের হয়ে–বাংলা শব্দের এই লড়াইয়ে একে-অন্যকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে গেছে।
তবে এটাও খেয়াল রাখতে হবে, এক-একটি স্কুল-দলের হয়ে খেলতে আসা তিনজন করে ছাত্র-ছাত্রী আসলে হিমশৈলের চূড়া মাত্র। তারা তাদের স্কুলে-ক্লাসে বাংলায় সেরা। সেই কারণেই তারা স্কুলের তরফ থেকে নির্বাচিত হয়েছে। তার মানে স্কুলের সবাই–সে মাধ্যম বাংলা হোক, বা ইংরেজি–বাংলায় খুব ভালো, তা কিন্তু নয়। ভিতে এখনও ভীতি আছে, সেটাকে জব্দ করতে হবে। শব্দ-জব্দর নলেজ পার্টনার শব্দবাজি তার বাংলা শব্দের খেলাগুলো নিয়ে ভিতের এই ভীতি কাটানোর জন্য সারাবছর ধরেই কাজ করে, আগামীদিনেও করবে।
শব্দ-জব্দর লক্ষ্য এটাই, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যে কোনো মাধ্যমের স্কুলপড়ুয়া বাঙালিকে বাংলা শব্দে আর ভাষায় এতটাই পাকাপোক্ত করে তোলা, যে আমাদের যে কোনো শব্দের খেলায় আমরা নয়, ওরাই আমাদের বারবার জব্দ করবে, ওরাই বাজিমাত করবে।