Advertisement
১০ জানুয়ারি ২০২৫

বিরাট কাণ্ড

দিল্লির ঘিঞ্জি পশ্চিম বিহারের চিকু থেকে ক্রিকেটবিশ্বের এক নম্বর তরুণ ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। ঢাকায় ভারতের ভরসা। তাঁকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা লিখছেন বন্ধু-সাংবাদিক জি এস বিবেক।দিল্লির ঘিঞ্জি পশ্চিম বিহারের চিকু থেকে ক্রিকেটবিশ্বের এক নম্বর তরুণ ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। ঢাকায় ভারতের ভরসা। তাঁকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা লিখছেন বন্ধু-সাংবাদিক জি এস বিবেক

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ২১:৫০
Share: Save:

দারোয়ান তখন উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে। পুরনো লোহার গেটটা খুলে দিতে তাই এক মুহূর্ত দেরি হল না। গেট দিয়ে ঢুকল একটা সাদা বিএমডব্লিউ। কিছুটা এগিয়ে মাঠের পাশের গাড়িরাস্তায় দাঁড়াল গাড়ি। কয়েক মুহূর্তের জন্য বাকি কাজ যেন থেমে গেল। মাঠের সব চোখ তখন এ দিকে। গাড়ি থেকে নামলেন বিরাট কোহলি। বাঁ কাঁধে ঝোলানো কিট ব্যাগ নিয়ে হেঁটে গেলেন নেটের কাছে।

পশ্চিম দিল্লির ঘিঞ্জি পশ্চিম বিহার অঞ্চলের সেন্ট সোফিয়া স্কুল আরও নানা সরকারি স্কুলের একটা। যদিও গত কয়েক বছরে তার পরিচিতি বদলে গিয়েছে। স্থানীয় তো বটেই, গোটা বিশ্বের কাছে এটা ‘বিরাটের স্কুল’। শুধু নামটা বললেই দেখতে পাবেন লোকের আগ্রহ কেমন! সব্জি বিক্রেতা থেকে রিকশাওয়ালা, রাস্তায় হেঁটে যাওয়া বাচ্চার দল থেকে হাঁটতে বেরোনো বৃদ্ধ ঠিকানা জানতে চাইলে দেখবেন সবাই কেমন টার্ন বাই টার্ন বুঝিয়ে দেবে ‘বিরাটের স্কুল’য়ে পৌঁছনোর রাস্তা। সাতটা ঘাসের উইকেট, দু’টো সিমেন্টের, সঙ্গে ম্যাটিং আউটলাইন ভারতের নবতম ক্রিকেট সেনসেশনের পক্ষে বেশ বেমানান। তাতে কী? এখানেই তো নিজেকে ফাইন টিউন করে বিশ্বের দাপুটে ফাস্ট বোলারদের মুখোমুখি হয়েছেন বিরাট কোহলি। জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে।

কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে কোচ রাজকুমার শর্মাকে প্রণাম করলেন। কোচের আশীর্বাদ নিয়ে তবেই শুরু হবে বিরাটের প্র্যাকটিস। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে হাত মেলানো। কয়েক জন তো দিল্লি রঞ্জি দলে তাঁর টিমমেট। এ বার ব্যাগ থেকে বের করলেন একটা চকচকে ইংলিশ উইলো ব্যাট। না, নিজের জন্য নয়। সেটা তুলে দিলেন পশ্চিম দিল্লির তাঁরই অ্যাকাডেমির এক প্রমিসিং ছেলের হাতে। ইনসেনটিভ আর কী।

বিরাটও তেমনটা পেয়েছেন। মনেও রেখেছেন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ের হাত থেকে পাওয়া প্রথম পুরস্কার। সেটা ২০০৪। স্কুল টুর্নামেন্টের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে হাফ কুর্তা পরা বিরাটের হাতে ‘মোস্ট প্রমিসিং ব্যাটসম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’য়ের পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন বীরেন্দ্র সহবাগ। গত বছর এই সহবাগেরই ‘কোনও ভারতীয়ের করা দ্রুততম সেঞ্চুরি’র রেকর্ড ভেঙেছিলেন বিরাট। ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়কের মুকুটটাও পেয়ে গিয়েছেন ইতিমধ্যে। আর এ বারে তো টিমকে চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে নেতৃত্বই দিলেন তিনি। সচিনের সঙ্গেও স্বাভাবিক তুলনা এসে পড়েছে, আর বিরাটের পারফর্ম্যান্স তাতে ক্রমাগত ইন্ধন জুগিয়েছে।

তবে আরও একটু পিছনে ফিরে তাকালে কিন্তু বিরাটের মুখে মুচকি হাসিটা দেখতে পাবেন। বছর তেরোর গোলগাল বিরাটকে তাঁর অফিসের সামনে দেখে বিডিএম ব্যাটের দোকানের মালিক ডেকে পাঠিয়েছিলেন কোচ রাজকুমার শর্মাকে। বলেছিলেন, তাঁর পক্ষে বিরাটকে বিনা পয়সায় ব্যাট দেওয়াটা একটু লম্বা ইনভেস্টমেন্ট হয়ে যাবে। কিন্তু ওই গোলগাল ছেলের মধ্যেই যে বিশেষ প্রতিভা আছে, এটা বোঝাতে সে দিন বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল রাজকুমারকে।

ভাগ বিরাট ভাগ

ছোট থেকেই বিরাট বেশ গোলগাল। আট বছর বয়সে ক্রিকেট কোচিং শুরু করলেও, আদতে বিরাট ভোজনরসিক এক পঞ্জাবি ছেলে।

বিসিসিআই-এর অনূর্ধ্ব ষোলো টুর্নামেন্ট জেতার পর দিল্লির কোচ অজিত চৌধুরী খেলোয়াড়দের জন্য একটা পার্টি দিয়েছিলেন। তখনও তো তিনি জানতেন না বিরাট কেমন খেতে পারে! “ও পুরোপুরি পেটুক। যার অফুরান প্রেম বাটার চিকেন আর রুটির প্রতি। সে দিনের বিল দিতে গিয়ে তো আমার টাকাই ফুরিয়ে গিয়েছিল,” হাসতে হাসতে বলছিলেন অজিত। এখন অবশ্য সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছেন বিরাট। তেল বাদ, চিনি বাদ, এমনকী নুনটাও কমিয়ে দিয়েছেন খাবার থেকে। বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ট্রেনার ওঁকে যে এক্সারসাইজের চার্ট ধরিয়ে দিয়েছেন, সেটাই অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন বিরাট।

তবে, ফিটনেস নিয়ে বিরাটের উৎসাহের কিছুটা ক্রেডিট কিন্তু ফারহান আখতারেরও প্রাপ্য। ছ’বার ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ দেখেছেন বিরাট। পাঁচ বার বন্ধুদের সঙ্গে। একবার যুবরাজ সিংহের সঙ্গে। আর ছবিটা দেখার পর থেকেই মিলখা সিংহের জীবন থেকে ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন তিনি। অনেকেই হয়তো জানেন না বিরাটও সিক্স প্যাকস বানিয়ে নিয়েছেন। যদিও লাজুক স্বভাবের বিরাট সেটা দেখান না।

বিজয় দহিয়া দিল্লি টিমে বিরাটের সঙ্গে খেলেছেন। অন্য কোনও খেলোয়াড়কে বিরাটের মতো ট্রেনিং করতে দেখেননি তিনি। “এমনকী টেস্ট ম্যাচের সকালেও বিরাটকে ট্রেডমিলে দেখতে পাবেন। যদি কোনও দিন ওর মনে হয় মাঠে খুব একটা ওয়ার্ক আউট হল না, ম্যাচের পরে জিমে সেই কোটাটা পূরণ করে নেবে,” বললেন বিজয়। অফ সিজনে বিরাটকে পেজ থ্রি-তে দেখলেও জানবেন, ও কিন্তু জিম-পুল করে তবে ওই পার্টিতে এসেছে।

নাদাল মুহূর্ত

আর আছে রাফায়েল নাদাল। নাদালকে দেখেই কিন্তু বিরাট ম্যাচ শুরুর আগের প্রস্তুতি শিখেছেন। “আমি দেখেছি কোনও ম্যাচ শুরুর আগে নাদাল কেমন করে জলের বোতল, খেলার সরঞ্জাম সাজিয়ে রাখে। আমিও ও রকম করার চেষ্টা করি। জলের বোতল সাজিয়ে রাখি হোটেলের ঘরে। তার পরে ঠিকঠাক করে ব্যাগ গুছিয়ে নিই। এই ছোট ছোট জিনিসগুলো করলে একটা আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায়। ভরসা জন্মায় যে, প্রস্তুতি ঠিক ভাবেই এগোচ্ছে। প্রথম প্রথম ভীষণ অগোছালো ছিলাম আমি। কিন্তু এখন পুরো পাল্টে গিয়েছি। এখন আমি অগোছালো ঘরে এক সেকেন্ডের জন্যও বসতে পারব না। এই সব আমার জীবনদর্শনটাও বদলে দিয়েছে। এটার ছাপ আমার খেলাতেও পড়েছে। আমি খেলোয়াড়, আমার জীবনে ডিসিপ্লিন খুব দরকারি,” বলছিলেন বিরাট।

জানুয়ারি ২০০২। অ্যাডিলেডে চতুর্থ টেস্ট। সচিন, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ কেউই রান পাচ্ছেন না। তখনই ক্রিকেটের বড় মঞ্চে বিরাটের আবির্ভাব। সেঞ্চুরির সঙ্গে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে পরপর কম স্কোর, বিরাটের তখন বাঁচা-মরার পরিস্থিতি। “ওই একটা সময় বিরাটকে ভয় পেতে দেখেছিলাম। অ্যাডিলেড টেস্টের আগে আমরা ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতাম। ওকে ভীষণ ভেঙে-পড়া মনে হত। আমি চেষ্টা করতাম ওর টেম্পোকে বাড়াতে। বলতাম, ওর ভাল সময়ের কথা আর ওর করা বড় স্কোরগুলো মনে করতে। ব্যর্থতায় বিরাট অভ্যস্ত নয়। দু’-একটা ইনিংসে রান না পেলেই ও হতাশ হয়ে পড়ে,” শর্মা বলছিলেন।

মেকিং অফ আ গ্রেট

বিরাটের প্রথম শিরোনামে আসা ২০০৬-এ। বাবা মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ষোলো বছরের বিরাট কর্নাটকের বিরুদ্ধে দিল্লিকে রঞ্জি ম্যাচে বাঁচিয়েছিলেন। বিরাট বলছিলেন, “মাঠে আসার পথে আমি ইশান্ত শর্মাকে নিয়ে আসতাম। তখনই ওকে বাবা মারা যাওয়ার কথা বলি। ইশান্ত আমার দিকে তাকাল, আর বলল, ‘এই ঠাট্টাটা একেবারে ফালতু’। আমি ড্রেসিং রুমে প্রায়ই ইয়ার্কি-ঠাট্টা মারতাম। তাই বললাম, এটা ইয়ার্কি নয়। এর পর ইশান্তের মুখ থেকে একটা কথাও বেরোয়নি। কোটলা যাওয়ার দশ কিলোমিটার পথ আমরা একেবারে চুপচাপ। কেউ একটা কথাও বলিনি। আমি ড্রেসিং রুমে বসেছিলাম। জানি ইশান্ত সবাইকে ঘটনাটা জানাবে। তখনও আমার চোখ থেকে জল বেরোয়নি। কিন্তু সিনিয়ররা যখন সান্ত্বনা জানাতে এল, তখন আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না। কান্নায় ভেঙে পড়লাম। সবাই বলছিল, আমি যেন বাড়ি ফিরে যাই। কিন্তু মন থেকে আমি ব্যাট করতে চাইছিলাম। সে দিন সেঞ্চুরি না করে বাড়ি ফিরলেও, বুঝতে পেরেছিলাম এটাই আমি সারা জীবন করতে চাই। ও দিন মাঠে না নামলে সেটা কোনও দিন টের পেতাম না।”

২০০৮-এর মধ্যে তো সারা দুনিয়া বিরাটকে চিনে নিয়েছিল। ওঁর অধিনায়কত্বে অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। তার দু’বছর পরে জাতীয় দলে অভিষেক। আবার নিজের জায়গা হারিয়েছে আইপিএল-এর গ্ল্যামারে দিক্ভ্রষ্ট হয়ে। কিন্তু বিরাটের সব থেকে বড় পাওনা ২০১২-তে আইসিসির একদিনের ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড পাওয়া।

বিরাটের কেরিয়ার তৈরিতে দু’জন অসম্ভব সাহায্য করেছেন। প্রথম জন, ওঁর দাদা বিকাশ। দিনের পর দিন যে বিরাটকে ম্যাচের দিনগুলোয় স্টেডিয়ামে আনা-নেওয়া করেছেন, খবরের কাগজের অফিসের সামনে স্কোরকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন, বিরাটের পাসপোর্ট সাইজ ফোটো হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন যদি কেউ বিরাটের খবর একটু ছাপিয়ে দেয়। অন্য জন, কোচ রাজকুমার শর্মা বিরাটের কোচ, অভিভাবক, সর্বক্ষণের বন্ধু। প্রত্যেকটা ম্যাচের আগে বিরাট ওঁকে ফোন করবেই। আর ম্যাচের পরে রাজকুমার জানাবেন কোন কোন শটগুলো বিরাটের খেলা উচিত হয়নি। এই টেলিকোচিংটা বিরাট সব সময় পছন্দ করে এসেছে।

রাজকুমার মনে করেন বিরাটের কেরিয়ারে মোড় ঘুরে গিয়েছে, যখন ও রান পেয়েছে দল থেকে বাদ পড়ার সময় নয়। “যখন রান পাচ্ছিল, তখনই টের পেত এখানেই ও থাকতে চায়। আমি ওকে সব সময় বলে এসেছি, বাইরে ওর থেকে আরও ভাল দেখতে, আরও স্মার্ট ছেলে রয়েছে তাই যেন মনে না করে সবাই ওর চেহারায় আকৃষ্ট হয়। আসলে সবাই ওকে ভালবাসে ওর খেলার জন্য, ক্রিকেটের জন্য,” গত বছর শিক্ষক দিবসে বিরাটেরই দেওয়া স্কোডা-র সিটে হেলান দিয়ে বললেন রাজকুমার।

চিকু

অবশ্যই বিরাটের কিছু কিছু জিনিস রাজকুমারের ভাল লাগে না। যেমন, ওঁর হেয়ারস্টাইল আর ট্যাটু। “চুলের নতুন কোনও কাট দেখলেই আমি জিজ্ঞেস করতাম, এটা কী? বিরাট বলত, ‘এটা স্টাইল। আপনি বুঝবেন না।’ আমি ছেড়ে দিতাম। কিন্তু কিছু দিন আগে নতুন এক ট্যাটু দেখিয়েছিল আমাকে। আমি প্রচণ্ড বকলাম। বললাম, এই সব করে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। ও আমাকে ফোন করে বলল, ট্যাটু তুলে ফেলবে। আমিই আবার তখন বারণ করলাম। হাজার হোক ওই ট্যাটুর পরেই তো পরপর দুটো সেঞ্চুরি ও পেয়েছে। হতে পারে ওটা লাকি চার্ম। বিরাট এ সব কুসংস্কারে বিশ্বাস না করলেও, আমিই ট্যাটুটা রেখে দিতে জোরাজুরি করলাম,” রাজকুমার বলছিলেন।

বিরাট কিন্তু ট্যাটুর জন্য সব সময় বকুনি খেয়েছেন। ষোলো বছর বয়সে হাতে প্রথম একটা ড্রাগন ট্যাটু করানোর পর, কোচ অজিত চৌধুরী ফুলহাতা জামা পরিয়ে রেখেছিলেন বিরাটকে, যতক্ষণ না সেঞ্চুরি করতে পারেন। অবশ্য একটা দিনই বিরাটকে ফুলহাতা পরতে হয়েছিল। পরের দিনই তো পঞ্জাবের বিরুদ্ধে একশ’ করেছিলেন বিরাট!

ওই রকম সময়েই একদিন বিরাট চুলে বেশি করে জেল লাগিয়ে এসেছেন। দিল্লি ড্রেসিং রুমের সবার চোখ ওঁর দিকে। “খরগোশের কানের মতো লাগছে তো, একদম চম্পক কমিক্সের চিকুর মতো,” কোচ অজিত চৌধুরী বলেছিলেন। অনূর্ধ্ব উনিশের টিমমেট প্রদীপ সাংওয়ান সবার কাছে ‘চিকু’ ডাকনামটা ছড়িয়ে দিয়েছিল। তার পর থেকেই বিরাটের ডাকনাম চিকু।

সেই সময়ের অনূর্ধ্ব উনিশের আর এক প্লেয়ার মানন শর্মা আর একটা ঘটনার কথা মনে করলেন, “চুল নিয়ে সাঙ্ঘাতিক মাতামাতি করত বিরাট। পাঁচ মিনিট পরপর বাথরুমে যেত হেয়ারস্টাইল ঠিক আছে কি না দেখতে! রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে গাড়ির কাচেও দেখে নিত চুল। আমরা সবাই ভীষণ বিরক্ত হতাম। কিন্তু কী করব, ওর প্লে স্টেশন ২ খেলতে দিত যে! কিটে মোটামুটি ৫০টা সিডি নিয়ে ঘুরত ও।”

এগিয়েই চলা

অশোক বিহারের পিকনিক হাট মাঠে বিরাটকে দেখেছিলেন ভেটারান আম্পায়ার আর ইন্টারন্যাশনাল স্কোরার এন কে লাখোটিয়া। “হেডব্যান্ড পরা ‘ছোটা সা গোলুমোলু’ একটা ছেলে ফাস্ট বল করার চেষ্টা করছে,” বলছিলেন লাখোটিয়া। বল চকচকে থাকলে বিরাট ফাস্ট বোলার, পুরনো হয়ে গেলে অফ-স্পিনার, আর বল করতে না পারলে ইন ফিল্ডার আর কখনও অধিনায়ককেই সাইডলাইনে পাঠিয়ে নিজেই ক্যাপ্টেন হয়ে যেত বিরাট। সব সময় কিছু না কিছু করতে চাইত। টিম যাতে জেতে তার জন্য চেষ্টা চালিয়েই যাবে। চার হোক কী পাঁচ নম্বরে, বিরাট কিন্তু ওপেনারদের আগেই প্যাড-ট্যাড পরে তৈরি।

বিরাট সব সময় চাইতেন ব্যাট করে যেতে। অল্প বয়সে তো ওঁকে মাঠ থেকে টেনে বের করতে হত! অন্ধকার নেমে এলেও নেটে বল পিটিয়ে যেতেন। এমনকী এখনও কম করে এক ঘণ্টা তো বিরাট নেটে ব্যাট করবেনই, অথবা যতক্ষণ না নেটের বোলাররা তাঁদের সব শক্তি নিংড়ে দিচ্ছে। দিল্লিতে থাকলে কিন্তু একদিনও প্র্যাকটিস কামাই করেন না। এমনকী আন্তর্জাতিক সিরিজ শেষেও এয়ারপোর্ট থেকে সোজা চলে এসেছেন মাঠে।

সাফল্যের কোনও ফর্মুলা নেই

বিরাট কখনওই ভিডিয়ো দেখে ওঁর টেকনিক আর বডি পজিশন ঠিক করতে ব্যস্ত হবেন না। বরং, ওঁর মনে যেটা ভাল লাগবে সেটাই করবেন। “ম্যাচে আমি ভাল মাইন্ডসেট নিয়ে নামতে চাই। যদি আমি টানা ছ’দিনও নেটে প্র্যাকটিস করি আর ব্যাটের মাঝখান দিয়েই খেলে আসি, তবু মনের দিক থেকে ভাল না লাগলে, আমি স্বচ্ছন্দ বোধ করব না। আমার প্রস্তুতির ধরন হল, মানসিক ভাবে ভাল অনুভব করা,” বিরাট বলছিলেন।

“টেস্ট ম্যাচের জন্য তো কম করে তিন দিন আগে থেকে তৈরি হব। ম্যাচে কোনও বোলারকে যেমন ভাবে খেলব, নেটেও তেমন ভাবেই প্র্যাকটিস করব। ওয়ান ডে বা টি-২০ অবশ্য আলাদা। ওই সময় আমি অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব। ওগুলো আমার কাছে ইন্সটিংক্টিভ ক্রিকেট,” বিরাট বলেন।

এর মধ্যে অবশ্য দু’ঘণ্টা প্র্যাকটিস হয়ে গিয়েছে বিরাটের। কিট ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে আবার গাড়ির দিকে হেঁটে গেলেন। ছাত্ররা অটোগ্রাফ আর ছবির জন্য ঘিরে ধরল ওঁকে। তাদের কথাও রাখলেন বিরাট। আর তার পর ছুটে চললেন। মাঠে হোক কী মাঠের বাইরে ছুটেই তো চলেছেন বিরাট...

অন্য বিষয়গুলি:

birat kohli g s bibek entertainment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy