হৃতিক ও সুজান
হৃতিক-সুজান। রূপকথার মতো একটা সম্পর্ক। প্রায় কুড়ি বছর ধরে একসঙ্গে থেকেছেন। দাম্পত্যজীবন বছর চোদ্দর। কিন্তু এ বার তার অবসান ঘটল। কয়েকটা কাগুজে লেখাপড়া আর আইনি সমাধানে শেষের পথে সেই আদর্শ সুখী দাম্পত্য। ভারতীয়দের মনোযোগ তো সে দিকে ঘুরবেই!
সুজানের প্রতি প্রেম নিয়ে কথা বলতে হৃতিককে অনেকেই দেখেছেন। ইন্টারভিউ থেকে লাইভ শো... এমন কী অফ দ্য রেকর্ড সুন্দরী স্ত্রীর কথা সব সময়ই মুখে লেগে থাকত হৃতিকের। সুজানও তেমনই। তাঁর সৌন্দর্য নিয়ে তো কিছু বলার নেই। যে কোনও ঘরে ঢুকলেই আলো করে দিতে পারেন তিনি। ইন্টিরিয়র ডিজাইন নিয়ে ব্যস্ত, স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে এখনও ঘুরে বেড়ান, আড্ডা মারেন। অখুশি বা অপ্রাপ্তির সামান্যতম কালির ছিঁটেও দেখা যায়নি তাঁর ব্যবহারে। কিন্তু কোথাও নিশ্চয়ই ভেঙে পড়েছিলেন। এখন তো সবাই জানেন, বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্তটা সুজানেরই ছিল। হৃতিক বরং বিয়েটা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। সময় যত এগিয়েছে, সেটে বেশি করে সময় কাটিয়েছেন হৃতিক। আর ওই রকম দেখতে স্টারের তো ‘টেম্পটেশন’য়ের অভাব ছিল না।
হৃতিক-সুজানের বিয়ে যে ভাঙার পথে, সেটা অনেকেই আঁচ করছিলেন। সুজানের বন্ধু অর্জুন রামপালের ভুমিকাও অনেকে দেখতে পাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল হৃতিকের বাড়ির লোকজনের একগুঁয়ে স্বভাব। কিন্তু আসলে ছিল, দু’জনের মধ্যেই একটা বিচ্ছেদের অনুভুতি। যেটাই সম্পর্ককে ‘ওপেন ম্যারেজ’য়ের দিকে নিয়ে যায়। বলিউডে ওপেন ম্যারেজ ব্যাপারটা এসেছে অনেক দিন। অনেক সম্পর্কে সেটা ঢুকেও গিয়েছে। শেষ পাঁচ-ছ’বছরে তো সেটা মাত্রা ছাড়িয়েছে। ‘ওপেন ম্যারেজ’য়ের অর্থ হল অনুরক্তি-সততার অভাব। এটা দু’জনকেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হতে উৎসাহিত করে। অনেকে কাঁধ ঝাঁকাতে পারেন, কিন্তু বলিউডে এটা কিন্তু সাঙ্ঘাতিক মাত্রায় ছড়িয়েছে।
আর একটা ঘটনা হল, মহিলারা এখন ঘরের চৌহদ্দির বাইরে বেরিয়ে আসছেন। একা একা ঘুরে বেড়াতেও পিছু হটছেন না। “ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আকর্ষণ সর্বত্র। সম্পর্কে সততার কোনও জায়গা নেই। এটা শুধু অভিনেতা-পরিচালকদের ক্ষেত্রে নয়, ক্রু আর টেকনিশিয়ানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য,” ওপেন ম্যারেজ প্রসঙ্গে বলিউডের ভিতরকার একজনই বললেন।
ইমতিয়াজ আলি আর প্রীতি আলির বিয়েই দেখুন না। যে স্ত্রী ইমতিয়াজের স্ট্রাগলের সময় শক্ত পাথরের মতো তাঁর পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন, আজ সেই সম্পর্কই শেষ হয়ে গেল। অনুরাগ কশ্যপ আর কল্কির সম্পর্কও তো ভেঙে গেল। কারণ? দু’জনেই বাইরে বাইরে কাজ করতেন, পরস্পরের জন্য কোনও সময়ই ছিল না। পায়েল রোহতাগিও তো পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে ঠকানোর অভিযোগ তুললেন। দিবাকরের স্ত্রীও কিন্তু তাঁর স্ট্রাগলের সময় পাশে ছিলেন! অর্জুন রামপাল আর মেহর জেসিয়ার মধ্যে গণ্ডগোলের কারণ কিন্তু সুজানের সঙ্গে অর্জুনের ঘনিষ্ঠতা। যদিও এ খবর মানতে চাননি অর্জুন।
“নব্বইয়ের প্রথম সারির মহিলারা বিয়ের পরে বদলে যাননি। কেরিয়ারের শেষের দিকে বিয়ে করে সেটেল্ড হতে চেয়েছেন। তবু তাঁদের সম্পর্কও একজনের সঙ্গে ছিল না। স্বামী যদি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কেউ হতেন, মানে প্রযোজক বা পরিচালক, তা হলে ওপেন ম্যারেজে কোনও অসুবিধাই হত না।”
রীনা ও আমির
ডিম্পল ও রাজেশ
আইপিএল সিক্স-এর সময় এক ফাইভ স্টার হোটেলের করিডরে এক সুপারস্টারের স্ত্রী এবং এক প্রাক্তন নায়িকার স্বামীকে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলেন ব্যবস্থাপক কমিটির এক সদস্য। তিনি চুপিসাড়ে ওঁদের পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গিয়েছিলেন এমন ভাবে যেন তিনি কিছু শোনেনওনি বা দেখেনওনি। এই কর্তাব্যক্তির চমকানোর আরও কারণ ছিল। যাঁদের তিনি দেখেছিলেন তাঁরা পারিবারিক বন্ধুই শুধু নয়, তাঁদের বাচ্চারাও একই সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের লোকেরা যদিও এ সবের সঙ্গে অত্যন্ত পরিচিত। শুধু যে এক দম্পতির স্টার পার্টনার অন্যদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করেন তাই নয়। তাঁদের স্বামী বা স্ত্রী-রাও, যাঁরা তথাকথিত ভাবে সাধারণ, তাঁরাও একই ঘটনা ঘটান। পার্টিতে এঁদের অত্যুৎসাহী ব্যবহার যে এই সম্পর্কগুলোকে অনেকটা আড়ালে রাখার চেষ্টা, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে যায় কিন্তু সব সময় যে পরিস্থিতি এমনটা ছিল, তা নয়। অতীতে এমন বহু উদাহরণ আছে যেখানে নামী অভিনেতাদের স্ত্রী বা বান্ধবীরা নীরবে সব অপমান সহ্য করে যেতেন। বাচ্চাদের মঙ্গল চিন্তা করে হয় তাঁরা চুপ করে থাকতেন, নয়তো নীরবে আলাদা হওয়ার রাস্তা বেছে নিতেন। ডিম্পল কপাডিয়ার ক্ষেত্রেই দেখুন না। রাজেশ খন্নার সঙ্গে থাকার সময় ভালই ভুগেছেন তিনি। আশির দশকের এক অ্যাকশন অভিনেতার প্রেমে পড়লেও এই দম্পতি কিন্তু বিয়ে ভেঙে বেরোননি। মেয়েদের কথা চিন্তা করে ডিম্পল রাজেশ খন্নার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ধীরে ধীরে নিজের একটা স্থান তৈরি করেন। এ রকমই দমবন্ধ করা জীবনের সম্মুখীন হওয়ার উদাহরণ ভুরি ভুরি। তবে তাঁরা সকলেই সব মুখ বুজে মেনে নিয়ে ঘরকন্না করে গিয়েছেন।
একুশ শতক যদিও অনেক পরিবর্তন দেখছে এই ক্ষেত্রে। হয় এঁরা নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করছেন, নয়তো নিজেদের মতো করে এক আলাদা অস্তিত্ব তৈরি করে নিচ্ছেন। রিনা তো আমির খানকে ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে বলিউডের সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। আন্তরিকতার সঙ্গে যে ভাবে তিনি আমিরের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টেনেছিলেন, তা দেখে অনেকেই স্তম্ভিত হয়েছিলেন। আমিরের প্রেমের সম্পর্কগুলোর ব্যাপারে কিন্তু কখনও রিনার পক্ষে মিডিয়াকে বা আমজনতাকে কথা বলতে দেখা যায়নি। বলিউডের অনেক তারকা-অভিনেতার স্ত্রীদের কিন্তু সাহস জুগিয়েছিলেন রিনা।
বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে আসার প্রবণতা কেমন যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তার কারণ মহিলারা এখন স্বাধীন
ভাবে বাঁচার ক্ষমতা পেয়েছেন। মেয়েদের অভিভাবকরাও এই বিচ্ছেদকে সহজেই মেনে নিচ্ছেন। আর
ডিভোর্সটা কিন্তু মেয়েরা এখন স্বেচ্ছায়ই করছেন। ডিভোর্সের সঙ্গে এখন আর কোনও লজ্জা যুক্ত নেই
ডা. হরিশ শেঠি (মনোবিদ)
হিন্দি ছবির দর্শকদের এ বার বোঝার সময় এসেছে প্রেমকাহিনিরও মৃত্যু হয়। বলিউড তার অন্যতম উদাহরণ।
সেখানেও তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তির চাহিদা আর প্রতিশ্রুতির ফিকে হয়ে যাওয়া দেখা যাচ্ছে। বাস্তব জগতে হাতে গোনা
কয়েকটা বাস্তব প্রেমের গল্পই শুধু বেঁচে আছে
মহেশ ভট্ট (ফিল্মমেকার)
একজন নামকরা সুপারস্টার সম্প্রতি খবরের শিরোনামে এসেছিলেন তাঁর থেকে ১৫ বছরের ছোট এক বিখ্যাত অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে। যদিও তাঁর স্ত্রীর শ্যেনদৃষ্টি সেই সম্পর্ককে শেষমেশ কোনও দিশা দেখাতে পারেনি। ওই স্ত্রী নাকি আবার কখনও কখনও পুরুষবন্ধু পোষেন। আর লন্ডনে গিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর প্ল্যাটিনাম কার্ডের ক্রেডিট লিমিট শেষ না হচ্ছে, ততক্ষণ কেনাকাটা করতে থাকেন। পয়সা শেষ হলে তিনি আবার ফিরেও যান তাঁর সেই অভিনেতা স্বামীর কাছে। বলিউডের খানেদের যথেষ্ট প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলেছেন এমন এক নামকরা অ্যাকশন অভিনেতা গোয়াতে এক কমেডি ছবির সেটে সবার সামনে থাপ্পড় খেয়েছেন তাঁর স্ত্রী-র কাছে। এক মহিলা সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে ফুরফুরে হওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। সেই সহ-অভিনেত্রী তাঁর স্ত্রীকে বিষয়টা ফোনে জানান। উনি উড়ে সেটে চলে আসেন স্বামীকে সঠিক রাস্তায় ফেরাতে। কাজেই ওপেন ম্যারেজের বিষয়টা যেমন বেশ জনপ্রিয়, মাঝেমাঝে তেমনই বেটার হাফ-কে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টাটাও চোখে পড়ে। অধিকারবোধ ফলানোর বিষয়টা যেমন সে ক্ষেত্রে আছে, বাচ্চাদের কথা ভেবেই তা যেন আরও বেশি ঘটে। “বাচ্চারা কী রকম প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটাই আমি ভাবি। প্রথম যখন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম, আমি খুব ভাবনাচিন্তা করতাম বিষয়টা নিয়ে। বাচ্চারা থাকলে বাবা-মা’দের অনেকটা দায়িত্ব কিন্তু থেকে যায়। যদিও এখন বাবা-মা’রা আর বাচ্চাদের নিয়ে অতটা চিন্তিত নন। আর মা-রা চেষ্টা করেন কী ভাবে নিজেদের রেকর্ডটাকে পরিষ্কার রাখা যায়।”
খোলামেলা সম্পর্কের এই যুগে মহিলারাও অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন। বিয়ে সচেতন ভাবে ভাঙার পেছনে তাঁদেরও অনেকটাই দায়িত্ব থেকে যাচ্ছে তাই। অনেকেই বলতে পারেন যে একুশ শতকের এমন এক সময়ে যেখানে নেতা এবং সমাজের সব স্তরের ব্যক্তিত্বরাই নিজেদের ডিভোর্স, ব্রেক-আপ এবং নিষিদ্ধ সম্পর্কের বিষয়ে বলতে এতটাই খোলামেলা, এই লেখার সেখানে কোনও প্রয়োজনই নেই। ফিল্মি দুনিয়ায় হাই-প্রোফাইল সব সম্পর্কের ভেঙে যাওয়াতে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেই নানা প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। হলিউডে তো সেলিব্রিটি বিয়ে ভাঙাকে ঘিরেই আইনি বিশেষজ্ঞ, কাউন্সিলর আর প্রাইভেট গোয়েন্দাদের একটা আস্ত ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy