Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Aparajita Adhya

Women’s Day Special: টেলিপাড়ার ক্যামেরার সামনে-পিছনে নারী, ‘দাম’ কি বাড়ল?

ক্যামেরার সামনের মতোই ক্যামেরার পিছনেও কি আধিপত্য বেড়েছে নারীদের? অভিনেত্রীরা পছন্দ মাফিক চরিত্র বাছতে পারেন?

অপরাজিতা আঢ্য, তুলিকা বসু এবং চৈতি ঘোষাল।

অপরাজিতা আঢ্য, তুলিকা বসু এবং চৈতি ঘোষাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ১৪:৫৯
Share: Save:

ছোট পর্দা নারীকেন্দ্রিক। গল্পে নারী। চরিত্র চিত্রণেও তাই নারীর দাপট। ক্যামেরার সামনেও নারীর আধিপত্যই বেশি। পুরুষ যেন তুলনায় কোণঠাসা। এটাই নাকি টেলিপাড়ার চেনা ছবি। দিন এগিয়ে বছর ঘুরেছে। যুগের পর যুগ এসেছে। ক্যামেরার সামনের মতোই ক্যামেরার পিছনেও কি আধিপত্য বেড়েছে নারীদের? অভিনেত্রীরা পছন্দ মাফিক চরিত্র বাছতে পারেন? নিজেদের ‘দাম’ (পারিশ্রমিক) নিজেরা ঠিক করতে পারেন? আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি অপরাজিতা আঢ্য, চৈতি ঘোষাল, তুলিকা বসু, চুমকি চৌধুরী। এঁরা চার জনেই আকাশ আট চ্যানেলে জনপ্রিয় চার ধারাবাহিকের মুখ। কী বললেন তাঁরা?


গঙ্গার এ পার আর ও পারে আজও বিরাট ফারাক...

হাওড়ার মেয়ে অপরাজিতা আঢ্য। গঙ্গার ও পারে যত দিন ছিলেন একটা শব্দই শুনেছেন, ‘না’! নাচ, গান শিখে কী হবে? স্নাতক না হলে ভাল বিয়ে হবে না--- এই কথাগুলোই ছিল জীবন জুড়ে। নিজের ইচ্ছেমতো কিছুই করবেন না তিনি? সঙ্গে সঙ্গে পরিবার শুনিয়েছে একটিই শব্দ, ‘না’। সেই অপরাজিতাই ২৫ বছর ধরে ধীরে ধীরে নিজের জায়গা করেছেন। আজ সেই দাপুটে অভিনেত্রীকে নিয়ে গল্প লেখা হয়। তাঁর জন্য আলাদা করে চরিত্র তৈরি করেন কাহিনিকার। নিজের পারিশ্রমিক নিজেই ঠিক করেন। অপরাজিতার নারী-জন্ম সম্পূর্ণ? তখনই ছোট পর্দার ‘লক্ষ্মী কাকিমা’র দাবি, ‘‘গঙ্গার এ পার আর ও পারে আজও বিরাট ফারাক। কলকাতায় আসার পরে আমি জীবন সম্বন্ধে যে ভাবে ভাবতে পেরেছি, এখনও আমতা বা মছলন্দপুরের মেয়েটি তা পারে না।’’

অপরাজিতার আরও মত, ‘‘আমি যদি ক্যামেরার সামনের উদাহরণ হই তা হলে নেপথ্যেও নারী অনায়াস। গত ২০ বছরে নারী রূপসজ্জা শিল্পী, চিত্রগ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে। বাড়ছে নারী পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, কাহিনিকারের সংখ্যা। আশা, আগামী ২০ বছরে আরও বাড়বে।’’ একই ভাবে অভিনেত্রীর দাবি, ভালবেসে, পরিশ্রমের সঙ্গে, সৎ থেকে কোনও কাজ করলে তার জয় হবেই। আজও প্রতিভার পাশাপাশি পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। পাশাপাশি আক্ষেপ, একুশ শতকে তিনি নারীর আরও অগ্রগতি দেখতে চেয়েছিলেন। যেটা বোধ হয় দেখা সম্ভব হবে না। তবু ভাল লাগে, যখন কোনও বাংলা চ্যানেলের দায়িত্ব ঈশিতা সুরানার মতো কোনও অবাঙালি নারী যত্নের সঙ্গে সামলান।


নারী দিবস এখন পালন করতে হচ্ছে! সত্যিই লজ্জার...
টেলিপাড়ায় মেয়েদেরই দাপট। চরিত্র, পারিশ্রমিক, গল্প-- সব দিক থেকেই, দাবি চৈতি ঘোষালের। এক বছর ধরে ধারাবাহিক ‘হয়তো তোমারই জন্য’-তে ‘সুতনুকা লাহিড়ি’র চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। নারীদের অবস্থান আদৌ বদলেছে? টেলিপাড়ায় নারীরা কতটা সম্মানিত? প্রশ্ন রাখা হয়েছিল তাঁর কাছে। চৈতির যুক্তি, ‘‘উত্তরণ, অবমাননা-- দুটোই আছে। আগে উত্তরণের কথা বলি। গত এক বছর ধরে আমি আকাশ আট চ্যানেলের সঙ্গে। ঈশিতা যার কর্ণধার। নারীর উত্তরণের সব চেয়ে বড় পরিচায়ক। অভিনেত্রীদের পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগেও নারীদের আনাগোনা বেড়েছে। এটিও ইতিবাচক। নারীদের কোনও অসম্মান টেলিপাড়ায় চট করে হয় না। এটাও দেখেছি দীর্ঘ অভিনয় জীবনের সূত্রে।’’

তার পরেও অভিনেত্রীর ক্ষোভ, এখনও একটি দিন আলাদা করে নিয়ে সেই দিনের নারীর উন্নতির জন্য মুখ খুলতে হচ্ছে। এর থেকে বড় অবমাননা নারীদের জন্য আর কী হতে পারে?

পর্দার নেপথ্যে নারী টেলিপাড়ায় ছাপিয়ে গিয়েছে পুরুষকে...

বাবা অঞ্জন চৌধুরীর ছবিতে মেয়েদেরই জয়-জয়কার। ‘বউমা’ সিরিজ কিংবা ‘গুরুদক্ষিণা’-- মেয়েরা কাঁদতেন, কষ্ট পেতেন। শেষ হাসি তাঁরাই হাসতেন। কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছে, ইদানীং কালের ধারাবাহিকগুলো ছোট পর্দায় নাকি সেই ছক বদলে দিয়েছে। নারী নাকি কেবলই কূট-কচালিতে ব্যস্ত! তাঁদের ভূমিকা সমাজের অবক্ষয়ের কারণ। সত্যিই? প্রশ্ন ছিল ধারাবাহিক ‘হয়তো তোমারই জন্য’-র ‘অনুপমা’ ওরফে অঞ্জন-কন্যা চুমকি চৌধুরীর কাছে। একটু ইতস্তত করে তাঁর দাবি, ‘‘হ্যাঁ এটা আমিও খেয়াল করেছি।’’ তার পরেই তাঁর দাবি, তিনি যে ধারাবাহিকে কাজ করছেন তর গল্পে যদিও কোনও নেতিবাচক কিছুই দেখানো হয় না।

একই সঙ্গে চুমকি জানিয়েছেন, ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু অন্য ছবি। সেখানে নারী-পুরুষের কোনও বিভেদ নেই। সবাই সমান ভাবে কাজ করছেন। অভিনেত্রীর দাবি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরা ছাপিয়ে গিয়েছেন তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের। প্রতিভার জোরে।

নিউজের থেকে ধারাবাহিকের মান অনেক উন্নত

আকাশ আট চ্যানেলের ‘কাঞ্চি’ ধারাবাহিকের ‘আশাপূর্ণা’র চরিত্রে অভিনয় করছেন তুলিকা বসু। ধারাবাহিকটি মেয়েদের লড়াই, জিতে ফেরার গল্পই দেখাচ্ছে। বাস্তবে কী হচ্ছে? তুলিকার কথায়, ‘‘ধারাবাহিকের নারী চরিত্রগুলো গত ২০ বছরে অনেক বদলেছে। আগে নারীরা শুধুই অত্যাচারিত হত। এখন প্রতিবাদ জানাচ্ছে তারা। নিজের জীবন বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা পাচ্ছে। এ গুলো কিন্তু সমাজেরই গল্প।’’ জনপ্রিয় অভিনেত্রীর দাবি, সমাজে এখনও এই পরিবার, নারীর উপর এই অত্যাচার রয়েই গিয়েছে। সমাজের প্রতিচ্ছবি ধারাবাহিক বা ছায়াছবি। তাই সেখানে এই ঘটনাগুলোও জায়গা করে নিচ্ছে।

তার পরেই তুলিকা বিস্ফোরক, ‘‘যে কোনও নিউজ চ্যানেলের থেকে ধারাবাহিকের মান অনেক উন্নত। নিউজ চ্যানেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অত্যন্ত বীভৎস ভাবে খবর পরিবেশন করা হয়। ধারাবাহিকে সেটা হয় না। খারাপ-ভাল, দুটোই দেখানো হয়। তাই দেখে দর্শক বুঝে নেন, কোনটা নেওয়া হবে। কোনটা হবে না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy