Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Television

স্টুডিয়োপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ছে করোনা, সুরক্ষাবিধি পালনে রয়ে গিয়েছে কি গাফিলতি?

এ দিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চললেও সিরিয়ালের শুটিংয়ে তেমন কোনও প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে না বলেই স্টুডিয়োপাড়ার একাংশের অভিযোগ।

 ঈপ্সিতা বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২১ ০৭:০৮
Share: Save:

গত কয়েকদিনে টলিউডে ফের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ঊধ্বর্মুখী। এর জেরে আবার আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আর্টিস্ট ফোরাম, ফেডারেশন এবং স্টুডিয়ো মালিকেরা উদ্যোগী হয়েছেন। আর্টিস্ট ফোরাম নোটিস পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, অতিমারির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ফোরামের অনুমতি ছাড়া এমনি দিনে রাত দশটার পরে এবং মাসের দ্বিতীয় রবিবার শুটিং করা যাবে না। যদি কোনও সদস্য এই নির্দেশ অমান্য করেন, তা হলে ফোরাম নিয়মভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। আর্টিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘অতিমারি পরিস্থিতিতে ঢাল হতে পারে সুরক্ষাবিধি। যেমন আগের বছর করা হয়েছিল, এ বারও তা করা হবে।’’

কিন্তু ফোরামের নির্দেশ মেনে যে সব সময়ে কাজ চলছে তাও নয়। ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকের দুই সহ-অভিনেতা ভরত কল ও শ্রুতি দাসের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অনেক ধারাবাহিকেই এখন বিয়ের দৃশ্যের শুটিং চলছে, সেখানে ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শুটিং শেষ করা সম্ভব নয় বলেই একাংশের মত। প্রযোজক সুশান্ত দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বেশি রাতে প্যাকআপ করার। তাঁরই প্রযোজিত ধারাবাহিক ‘অপরাজিতা অপু’তে বিয়ের দৃশ্যের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সোমা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘রাত একটায় সে দিন প্যাকআপ হল। যদিও আমার একদিনই দেরিতে শুটিং শেষ হয়েছিল, কিন্তু বাকিদের কাছে শুনেছি, বেশ কয়েক দিন ধরেই শুটিং শেষ হতে দেরি হয়েছে। তা ছাড়া বিয়ের দৃশ্যের ভিড় জমাতে অনেক জুনিয়র শিল্পী নেওয়া হয়েছিল। সকলকে মাস্ক পরে থাকতেও দেখিনি। একটি মাঠের মধ্যে শুটিংয়ের সেট ফেলা হয়েছিল, সেখানে স্যানিটাইজ় করার কোনও ব্যবস্থা ছিল না।’’ অভিযোগের উত্তরে সুশান্ত বললেন, ‘‘কয়েকটি এপিসোডের ব্যাঙ্কিং তৈরি হয়ে গেলেই রাত ন’টার মধ্যে শেষ করে ফেলব শুটিং। আর বিয়ের দৃশ্যের শুটিংও প্রায় শেষ। তাই অতিরিক্ত শিল্পী নিয়ে কাজ করা কমে যাবে। শিল্পীদের কাছাকাছি আসতে হয়, এমন দৃশ্যেরও শুটিং কমিয়ে ফেলা হবে, এ ভাবেই এর পর থেকে চিত্রনাট্য লেখার কাজ করতে হবে। সঙ্গে বয়স্ক ও বাচ্চাদের শুটিংয়ে না রাখারও কথা ভাবা হচ্ছে।’’ সেই সঙ্গে শোনা গিয়েছে, কয়েকটি ধারাবাহিকের দোলের দৃশ্যের বিশেষ পর্বের একসঙ্গে শুটিং হয়েছিল। সেটে যেখানে বহু লোকের জমায়েত হয়েছিল এবং কোনও রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ দিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চললেও সিরিয়ালের শুটিংয়ে তেমন কোনও প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে না বলেই স্টুডিয়োপাড়ার একাংশের অভিযোগ। সেখানে পুরনো রুটিন অনুযায়ী চলছে সব কিছু। অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সকলেরই গা-ছাড়া মনোভাব দেখছি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির লোকজনও আগামী দিনের ভয়াবহতা নিয়ে একটুও সচেতন হননি। আর যাঁরা বিষয়টি নিয়ে সচেতন তাঁদের নিয়ে মজাও করছে একাংশ।’’ তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘শিল্পীদের পক্ষে মাস্ক পরে শুটিং করা সম্ভব নয়। কিন্তু টেকনিশিয়ান থেকে পরিচালকেরাও এখন সেটে মাস্ক পরছেন না। মেকআপ ভ্যান যথোপযুক্ত স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে না। কলাকুশলী সেটের বাইরে একসঙ্গে আড্ডা মারার সময়েও মাস্ক খুলে রাখছেন। কোনও বাড়িতে শুটিং হলে সেখানে সেট থেকে একটু দূরে গিয়ে কলাকুশলীরা ধূমপান করছেন।’’ একই অভিমত শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়ের। বললেন, ‘‘ব্যক্তিগত জীবনে যেমন আমরা ঢিলেমি দিতে শুরু করেছিলাম, ইন্ডাস্ট্রিও তার বাইরে নয়। নিজেরা যেমন আবার সুরক্ষাবিধির শর্তগুলো মানতে শুরু করেছি, আশা করি শুটিং ফ্লোরেও সেটা ফিরিয়ে আনা যাবে।’’

প্রযোজক সুশান্ত দাস অবশ্য সেটে সুরক্ষাবিধিতে কোনও রকম গাফিলতি হয়েছে বলে মনে করছেন না। বললেন, ‘‘স্টুডিয়ো, ফ্লোর, মেকআপ রুম স্যানিটাইজ় করার জন্য লোক রেখেছি। তাঁরা নিয়মিত কাজ করেছেন। কিন্তু কলাকুশলীর মধ্যে মাস্ক পরার চলটা কমে গিয়েছিল। তা আবার ফিরিয়ে এনে যাবতীয় সতর্কতাবিধি মানার চেষ্টা চলছে।’’ সুরক্ষাব্যবস্থায় ঢিলে দেওয়ার অভিযোগ মানতে রাজি নন প্রযোজক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ও। বললেন, ‘‘সেট থেকেই যে করোনা ছড়াচ্ছে সেই ধারণাটা অমূলক, কারণ শিল্পী বা কলাকুশলী বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন এবং তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় যান। সুতরাং নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল কোথা থেকে করোনা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, নিয়মগুলো যে কড়া ভাবে মানা হচ্ছে, সেটা আমার সেটের ক্ষেত্রে অন্তত নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি। কারণ আর্টিস্ট যদি অসুস্থ হন, সবচেয়ে বড় ক্ষতি প্রযোজকের।’’

আবার কোনও অভিনেতা অসুস্থ হওয়ার পরই বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে বলেই কোনও কোনও অভিনেতার মত। ‘দেশের মাটির’ অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায় যেমন বললেন, ‘‘এখন আবার সুরক্ষাবিধি মানা হচ্ছে। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ছাড়া বাকি সকলেই মাস্ক পরে আসছেন। বারবার হাত ধোয়া বা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা— এগুলো আমরা নিয়মিত করছি। ব্যাগপত্তর স্টিম স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। এমনকি ল্যাপলও স্যানিটাইজ় করেই দেওয়া হচ্ছে।’’ এই পরিস্থিতিতে নতুন নির্দেশিকার অপেক্ষায় রয়েছে টলিউড। এ প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘সতর্কতা ও সুরক্ষাবিধি মেনেই আবার কাজ হচ্ছে। তবে সরকারের তরফ থেকে নতুন নির্দেশিকা না আসা অবধি আলাদা কোনও নিয়ম চালু করছি না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy