Advertisement
১০ জানুয়ারি ২০২৫
Bengali Television

ফের ছোট পর্দায় দেখা যাবে জীতু, দিতিপ্রিয়া, অর্জুনদের! ধারাবাহিকই কি অভিনয়ের ভবিষ্যৎ?

ছবির সংখ্যা কমছে। ভিড় বাড়ছে টেলিপাড়ায়। টেকনিশিয়ান থেকে অভিনেতা— ছোট পর্দায় কারও আর আপত্তি নেই। কেন?

ছোট পর্দায় ফিরলেন জীতু কমল, দিতিপ্রিয়া রায়, অর্জুন চক্রবর্তী।

ছোট পর্দায় ফিরলেন জীতু কমল, দিতিপ্রিয়া রায়, অর্জুন চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৯
Share: Save:

ছোট পর্দা নিয়ে ছুতমার্গের দিন শেষ? অস্তিত্ব বাঁচাতেই বড় পর্দার অভিনেতারা ছোট পর্দায় ফিরছেন? যেমন ফিরলেন অর্জুন চক্রবর্তী, জীতু কমল, দিতিপ্রিয়া রায়। তার কিছু দিন আগে ফিরেছেন আদৃত রায় আর তাঁর বিপরীতে নায়িকা পারিজাত চৌধুরী। পারিজাত মূলত বড় পর্দা এবং সিরিজ়ের অভিনেত্রী। ছোট পর্দা থেকে লম্বা বিরতি নিয়েছিলেন রোশনি ভট্টাচার্য। তিনিও সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘অতি উত্তম’ ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে সম্প্রতি ছোট পর্দায়। তাঁকে দেখা যাচ্ছে ধারাবাহিক ‘তেঁতুলপাতা’য়। একই ভাবে ছোট পর্দার শ্বেতা ভট্টাচার্য ‘প্রজাপতি’ ছবিতে দেবের নায়িকা হওয়ার পরেও ধারাবাহিকে দিব্যি অভিনয় করছেন! এই মুহূর্তে তাঁকে দেখা যাচ্ছে ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’ ধারাবাহিকে, রণজয় বিষ্ণুর বিপরীতে।

কেন এমন হল? পরিসংখ্যান বলছে, ছবির সংখ্যা ক্রমশ কমছে। অতিমারির পর প্রতি বছর বাংলা ছবির সংখ্যা গড়ে ১০টি করে কমেছে। ২০২২-এ ৯০টি, ২০২৩-এ ৮০টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ২০২৪-এ মাত্র ৭০টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। গোদের উপরে বিষফোড়া, বক্স অফিসের ব্যর্থতা। লগ্নি কম, কাজের সুযোগও তাই প্রায় তলানিতে। যদিও বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত যে কোনও বিভাগের মানুষের জীবন বরাবর অনিশ্চিত। কিন্তু ছবির সংখ্যা এত কমে গেলে দিন গুজরান হবে কী করে? তাই নাকি ভিড় বাড়ছে টেলিপাড়ায়। টেকনিশিয়ান থেকে অভিনেতা— ছোট পর্দা নিয়ে কারও নাকি আর আপত্তি নেই।

ধারাবাহিক ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’তে দিতিপ্রিয়া রায়।

ধারাবাহিক ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’তে দিতিপ্রিয়া রায়।

দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে এই প্রথম জুটি বেঁধে জি বাংলার নতুন ধারাবাহিক ‘তোমাকে ভালবেসে’-তে অভিনয় করছেন জীতু। তাঁরও কি একই বক্তব্য? জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। জীতু ধারাবাহিকে শুটিংয়ে ব্যস্ত। তাই কথা বলতে পারেননি। এ ব্যাপারে কথা বলেছেন দিতিপ্রিয়া। তিনি সাফ বলেছেন, “আমার শুরু ছোট পর্দা দিয়ে। ফলে, কোনও দিন এখানে ফিরব না বা কাজ করব না— ভাবতেই পারি না। নিজেকে নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে এবং অভিজ্ঞতা বাড়াতেই ছবি এবং সিরিজ়ে কাজ।” ছোট পর্দা থেকে ভাল কাজের ডাক পেতেই তাই দ্বিতীয় বার ভাবেননি তিনি। একই সঙ্গে নতুন ধারাবাহিকের প্রযোজক এসভিএফ। এই সংস্থার সঙ্গে তিনি একাধিক কাজ করেছেন। এ বার কি বড় পর্দা বা সিরিজ় থেকে সাময়িক বিরতি? “একেবারেই না”, দাবি তাঁর। জানিয়েছেন, প্রযোজনা সংস্থা সেই স্বাধীনতা দিয়েছে বলেই তিনি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে রাজি হয়েছেন। অর্থাৎ, সমান্তরাল ভাবে সব মাধ্যমেই কাজ করবেন তিনি।

ছোট পর্দায় দিতিপ্রিয়ার শেষ কাজ ‘রানি রাসমণি’। পরিচালক রাজেন্দ্রপ্রসাদ দাসের এই ধারাবাহিকে ‘রানিমা’র ভূমিকায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। প্রিয় অভিনেত্রীর ‘ঘর ওয়াপসি’ নিয়ে কী বক্তব্য পরিচালকের? রাজেন্দ্র প্রসাদের কথায় দিতিপ্রিয়ার কথার সুর বেজেছে। বর্তমানে ‘ফুলকি’ ধারাবাহিক পরিচালনা করছেন তিনি। বলেছেন, “অর্জুন, জীতু, আদৃত, বা দিতিপ্রিয়া— চার জনেই আমার ধারাবাহিকে কাজ করেছেন। সেই জায়গা থেকে বলতে পারি, ওঁরা কিন্তু একেবারে ধারাবাহিক ছেড়ে চলে যাননি। সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন।” ফলে, ‘প্রত্যাবর্তন’ কথায় তাঁর আপত্তি। বরং পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, একজন অভিনেতার সব মাধ্যমেই কাজ করা উচিত। নিজেকে পরিণত করতে।

দুই পর্দার ব্যবধান বা নিরাপদ উপার্জনের দিকটিও কি তিনি মানতে নারাজ? এ প্রসঙ্গে রাজেন্দ্রপ্রসাদের বক্তব্য, তিনি ছোট আর বড় পর্দার মধ্যে কোনও দিন বিভেদ খুঁজে পাননি। তিনি ছোট পর্দার পরিচালক। কিন্তু বড় পর্দার পরিচালকেরা তার জন্য তাঁকে কোনও দিন উপেক্ষা করেননি। পরিচালকের দাবি,বড় বা ছোট কোনও পর্দাতেই পেশাজীবনে কোনও স্থিরতা নেই। অভিনেতারা মেনে নিয়েই আসেন। তাই কেবল উপার্জনের টানে তাঁরা ছোট পর্দায় ফিরছেন— এই তত্ত্ব মানতে নারাজ।

অর্জুনের প্রথম ধারাবাহিক ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘গানের ওপারে’। এই ধারাবাহিক দিয়ে অভিনয় দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন মিমি চক্রবর্তী। অর্জুনের বিপরীতে তিনি। এর পরে ‘বিন্নি ধানের খই’, ‘জামাই রাজা’ ধারাবাহিকেও নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিলেন অর্জুন। ২৩ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে তাঁর ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ ছবিটি। পরিচালনায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়। অর্জুন অবশ্য বাংলা ধারাবাহিকে ফিরছেন না। ফিরছেন হিন্দি ধারাবাহিকে। কেন এমন মতি? প্রশ্ন রাখতেই নায়কের দাবি, “দুটো কারণে। এক, সেই ভাবে বলিউডে কাজ করা হয়নি। তাই ছোট পর্দা দিয়েই সেখানে পা রাখতে চলেছি। দুই, ছোট পর্দা দ্রুত জনপ্রিয়তা এনে দেয়। ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয় সহজেই।” আর হিন্দি ধারাবাহিকে কাজ করতে পারলে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারবেন। এবং উপার্জনের বিষয়টিও একেবারে উপেক্ষা করেননি তিনি।

‘মিত্তির বাড়ি’ ধারাবাহিকে আদৃত রায়, পারিজাত চৌধুরী।

‘মিত্তির বাড়ি’ ধারাবাহিকে আদৃত রায়, পারিজাত চৌধুরী।

আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল ‘জগদ্ধাত্রী’, ‘গীতা এলএলবি’র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকের প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি অর্জুনকেই সমর্থন জানিয়েছেন। পাশাপাশি, বড় পর্দায় কাজ কমে যাওয়া, উপার্জনের মতো বিষয়গুলোকেও। স্নেহাশিসের কথায়, “টেকনিশিয়ান, অভিনেতা, পরিচালক— সবাই এখন ছোট পর্দাতেই মন দিচ্ছেন। ক্রমশ আকার বাড়ছে এই ইন্ডাস্ট্রির। কারণ, দ্রুত জনপ্রিয়তা আর স্থায়ী উপার্জন।” প্রযোজকের দাবি, ছোট পর্দার অভিনেতাদের প্রতি দিন দেখা যায়। ঘাত-প্রতিঘাতে ভরা চিত্রনাট্যের জোরে রোজই তাঁরা কিছু না কিছু করছেন, যা তাঁদের দর্শকমহলে পরিচিতি বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে একটি ধারাবাহিক খুব খারাপ চললেও অন্তত দু’মাস চলবেই। অর্থাৎ, ধারাবাহিকের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকে অন্তত দু’মাসের জন্য নিশ্চিন্ত। হিট হলে কথাই নেই। এক বছর বা তারও বেশি স্থায়িত্ব। একে উপেক্ষা করার সাধ্য কার?

এই প্রসঙ্গে অর্জুন আরও একটি কথা বলেছেন। তাঁর মতে, “আমি চুপচাপ বসে থাকতে রাজি নই। সারা ক্ষণ ব্যস্ত থাকতে চাই। তাই মাধ্যম নিয়ে কোনও ছুতমার্গ নেই। ভাল কাজ পেলেই খুশি।” ঘুরিয়ে কি তিনি স্থায়ী উপার্জন আর কাজ পাওয়ার দিকটিই দেখাতে চাইলেন?

অন্য বিষয়গুলি:

Arjun Chakraborty Ditipriya Roy Jeetu Kamal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy